১৮ লাখ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে

40

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ১৮ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্য বিভাগে ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঝড় পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীও। গতকাল শনিবার আইএসপিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর সব সেনানিবাস, ঘাঁটি, জাহাজ ও হেলিকপ্টার। সন্ধ্যায় ঝড় আঘাত হানার আগে দুপুরে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। খবর বিডিনিউজের
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে ৩ লাখ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দিনের মধ্যেই ১৮ লাখ লোককে ৪ হাজার ৭১টি আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হবে। সন্ধ্যার আগে ১৫ লাখ লোককে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে কি না- সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুপুর ২টার মধ্যে সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার কথা থাকলেও আমাদের দেশে একটা প্রবণতা হচ্ছে আঘাত হানার সময়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বাড়িতে থাকতে চায়। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি, বল প্রয়োগ করে হলেও নিয়ে আসার জন্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন জানিয়ে এনামুর বলেন, গতকাল সারাদিন এক ঘণ্টা পর পর তিনি টেলিফোনে কথা বলেছেন। আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে, আমরা কী পদক্ষেপ নিয়েছি সেগুলো শুনেছেন। তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন আমরা যেন এসওডি (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী) অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার ১৮ ঘণ্টা আগে সব উপকূলীয় জনগণকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে পারি।
উপকূলীয় অঞ্চলের সবার কাছে এই নির্দেশনা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গতকাল থেকেই লোকজন স্থানান্তর শুরু হয়েছে। আজকে সকাল পর্যন্ত ৩ লাখ লোককে স্থানান্তর করা হয়েছে। নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড সবাই মিলে সমুদ্র থেকে নৌযান ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। জনগণকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য কাজ করছে।
জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে দুই হাজার প্যাকেট করে খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। একটি প্যাকেট একটি পরিবার ৭ দিন খেতে পারবে।
ঝুঁকিপূর্ণ খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, ভোলা ও বাগেরহাট এ মোট ৯টি এলাকার প্রতিটিতে ১০ লাখ টাকা, ২০০ টন চাল, এক লাখ টাকা করে গোখাদ্য বাবদ এবং এক লাখ টাকা করে শিশু খাদ্য বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ৫ লাখ করে মোট ৩০ লাখ টাকা এবং মোট ৬০০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সশস্ত্রবাহিনী প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এলজিআরডি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও এক হাজার ৫০০ মেডিকেল টিম প্রস্তুত রেখেছে এবং প্রচুর পরিমাণে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন প্রস্তুত রেখেছে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের গতিচিত্র পর্যবেক্ষণ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা ধারণা করেছি রাত ৮টার থেকে মধ্যরাতের মধ্যে আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত করবে। ঘূর্ণিঝড়টি সরাসরি উত্তর দিকে এগোচ্ছে। এভাবে এগিয়ে আসলে এটি পশ্চিম বাংলা ও বাংলাদেশের খুলনা বিভাগীয় উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানবে। এখন জোয়ারের সময় তাই ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ¡াস হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে দুর্গত এলাকায় সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবেলার জন্য আগাম প্রস্তুতি হিসেবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ১৩টি উপকূলীয় জেলায় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করেছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। জেলাগুলো হলো সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর, নোয়াখালী, ফেনী, ল²ীপুর, খুলনা, চাঁদপুর, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম।
ছুটি বাতিলের পাশাপাশি কর্মস্থল ত্যাগ না করার পাশাপাশি স্থানীয় সরকার বিভাগ মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। নির্দেশনায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রয়োজনে ঘূণিঝড় পরবর্তী রাস্তা-ঘাট, কালভার্ট সংস্কার ও মেরামত করে সচল রাখার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে উপদ্রূত এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানীয় জলের সরবরাহ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।