১৬০ স্কুল দেখভালের দায়িত্বে দুই কর্মকর্তা!

137

বাঁশখালীর ১৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় তদারকিতে দীর্ঘদিন ধরে ছিলেন তিনজন কর্মকর্তা। গত ২০ মার্চ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম মোস্তাক আহমদ অন্যত্র বদলি হলে এ সংখ্যা দুইয়ে নেমে আসে। এরমধ্যে একজন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা ও আরেকজন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে দায়িত্বে আছেন। অথচ অফিস কাঠামোতে বলা আছে, প্রতি ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য একজন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার থাকবেন। শিক্ষা কর্মকর্তা সংকটের কারণে নিয়মিত স্কুল ভিজিট না হওয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমছে।
বাঁশখালী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার সৈয়দ আবু সুফিয়ান পূর্বদেশকে বলেন, ‘পরিবর্তন আসলে হুট করে করা যায় না। এখানে জনবল সংকট প্রকট। শিক্ষা অফিসার আটজন থাকার কথা থাকলেও আছি মাত্র দুইজন। বিদ্যালয় পরিদর্শন, তথ্য সংগ্রহ ও প্রশাসনিক কাজ করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয়। ইতোমধ্যে বেশকিছু স্কুল পরিদর্শন করেছি। আমাকে প্রতিমাসে কমপক্ষে দশটি বিদ্যালয় ভিজিট করতে হবে। আমি সবখানেই শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টায় আছি। প্রধান শিক্ষকরা একটু আন্তরিক হলেই সমস্যা হতো না। যে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আন্তরিক সেখানে কোন সমস্যা নাই। আবার কয়েকজন প্রধান শিক্ষক আছেন কোন তথ্য চাইলেই সুযোগ কাজে লাগাতে অফিসে চলে আসে। এগুলো সামাল দেয়ার চেষ্টা করছি। অনেকেই অফিসে আসা কমিয়ে দিয়েছে।’
সূত্র জানায়, বাঁশখালীতে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে একজন উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সাতজন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, একজন উচ্চমান সহকারী, দুইজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, একজন হিসাব সহকারী, একজন এমএলএসএস থাকার কথা। এরমধ্যে ছয় কর্মকর্তার পদশূণ্য। উপজেলার ১৬০টি বিদ্যালয়ে প্রায় আট শতাধিক শিক্ষক আছেন। যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও প্রায় অর্ধলক্ষ।
এদিকে উপকূলীয় স্কুলগুলোতেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উপস্থিতির সংখ্যা বেশি। শিক্ষা কর্মকর্তারা ঠিকমতো মনিটরিং না করায় স্কুলগুলোতে ফাঁকির প্রবণতা বেশি। এমন অনেক স্কুল আছে, যেখানে গত এক বছরে শিক্ষা কর্মকর্তার পা পড়েনি। আবার এমন কিছু স্কুল আছে এক বছরে কয়েকবারও শিক্ষা কর্মকর্তারা পরিদর্শন করছেন।
উত্তর বাঁশখালীর স্কুলগুলোতে শিক্ষকদের অধিকাংশই চট্টগ্রাম শহর থেকে যাওয়া-আসা করেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে স্কুলগুলোতে বায়োমেট্রিক মেশিন বসানোর কথা বলা হলেও অনেক বিদ্যালয়ে সেটি বসানো হয়নি।
সাধনপুর ইউনিয়নের একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষকদের বিরুদ্ধে একচেটিয়া অভিযোগ তোলা হয়। স্কুলগুলোতে এখন শিক্ষকদের উপস্থিতির সংখ্যা বেশি। শিক্ষা অফিসে এখন দুর্নীতি বেশি। সেখানে টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না। শিক্ষা অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শিক্ষকদের নানা কাজে জিম্মি করেন। সম্প্রতি যেসব শিক্ষক এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে বদলি হয়েছেন তাদেরকে টাকা দিতে হয়েছে। অনেক শিক্ষক টাকা দিলেও বদলি হতে পারেননি। এক’শ টাকা পর্যন্ত এ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘুষ নেন।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে আমাদের একটু সমস্যা হচ্ছে। জনবল সংকট নিরসনের চেষ্টা করছি। শিক্ষকরা যাতে নির্ধারিত সময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন সেজন্য কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। শিক্ষকরাও যাতে শিক্ষা অফিসে গিয়ে হয়রানির শিকার না হন সেজন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’