১৫ ওয়ার্ডে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন হয়নি ৯ বছরেও

39

২০১০ সালে ১০৬ ধরনের নাগরিক সেবা জনগণের দোরগোড়ায় দ্রুত পৌঁছে দিতে সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। ২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এসব ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টিতে এখনও ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন হয়নি। এ নিয়ে বারবার মন্ত্রণালয় তাগাদা দিলেও আমলে গরজ বোধ করছে না করপোরেশন। ফলে সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এসব ওয়ার্ডের নাগরিকরা। তবে চসিকের দাবি, ওয়ার্ড অফিসে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।
জানা গেছে, ডিজিটাল সেন্টার পরিচালনার জন্য ২০১৩ সালে প্রতি ওয়ার্ডে দুইজন করে ৮২ জন উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘসূত্রতার কারণে তাদের মধ্যে অনেকে অন্য পেশায় যুক্ত হন। পরে ২০১৬ সালে আবারও প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে ৪১ জন উদ্যোক্তা নির্বাচন করে চসিক। তাদের মধ্যেও অনেকে হতাশার মধ্যে আছেন। এসব উদ্যোক্তা জানান, সংশ্লিষ্টদের অনাগ্রহ ও সদিচ্ছার অভাবে ডিজিটাল সেন্টার নির্মাণ হচ্ছে না।
সরকারের নির্দেশনা রয়েছে, সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ড অফিসে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করতে হবে। ওয়ার্ড অফিসের প্রবেশমুখে ও দৃশ্যমান স্থানে কমপক্ষে ১৮০ বর্গফুট আয়তন বিশিষ্ট কক্ষ বরাদ্দ করতে হবে। যেখানে কম্পিউটার, প্রিন্টার, স্ক্যানার, ওয়েবক্যাম, ইন্টারনেট কানেকশনসহ কমপক্ষে ৬টি বসার চেয়ারসহ টেবিল বসানো যায়। সিটি কর্পোরেশন নিজস্ব তহবিল থেকে এই কাঠামো তৈরি করবে। আর নির্ধারিত উদ্যোক্তারা এই সেন্টার পরিচালনা করবেন।
২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এসব ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নাগরিকরা টাকার বিনিময়ে ডিজিটাল সেন্টারগুলো থেকে ১০৬ ধরনের সেবা পাওয়ার কথা। এর মধ্যে অনলাইনে জন্মনিবন্ধন, পর্চার আবেদন, পাসপোর্টের আবেদন, পাসপোর্টের ফি জমা, হজযাত্রীদের প্রাক নিবন্ধন, বিদ্যুৎ বিল জমা, বিদ্যুতের মিটারের আবেদন ও ভিসা আবেদন উল্লেখযোগ্য।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর চসিকের প্রধান নির্বাহীকে এই বিষয়ে তৃতীয়বারের মত তাগাদা প্রদান করা হয়। যেখানে বলা হয়, ইতোঃপূর্বে বেশ কয়েকবার নির্দেশনা দেওয়ার সত্তে¡ও ডিজিটাল সেন্টার নির্মাণ করা হয়নি। তার পূর্ণাঙ্গ তালিকাও মন্ত্রণালয়ে পেশ করা হয়নি। যেখানে স্থাপন করা হয়নি, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রেরণের নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়। এছাড়াও গত বছর ১৪ আগস্ট একই বিষয়ে তাগিদপত্র দেওয়া হয়েছিল। এতে স্থাপিত ডিজিটাল সেন্টারগুলোর তথ্য এবং বাকিগুলো কবে শেষ হবে তা জানতে চাওয়া হয়। এর আগে ওই বছরের ১০ জুলাইও একই তথ্য চেয়ে চসিকের কাছে পত্র পাঠিয়েছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ।
সর্বশেষ সরকারি নির্দেশনা মতে, ওই বছরের ২০ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের একটি তালিকা পাঠায় চসিক। তালিকায় ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৫টিতে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়। তবে ওই ২৫টি ওয়ার্ডে গত বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের কাজ শেষ করা হবে উল্লেখ করে পত্র পাঠায় চসিকের প্রকৌশল বিভাগ। ঘোষিত সময় পার হয়েছে আরও বছর আগে। তবে সর্বশেষ ২৬টি ওয়ার্ডে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বাকি রয়েছে আরও ১৫টি ওয়ার্ডে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন।
জানা গেছে, সরকারের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের আওতায় ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর ভোলার চর কুকরি-মুকরি ইউনিয়নে দেশের প্রথম ডিজিটাল সেন্টার স্থাপিত হয়। এরপর দেশের প্রতিটি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় চসিকের প্রতিটি ওয়ার্ডে ডিজিটাল সেন্টার নির্মাণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। চসিক ২০১৩ সালে চান্দগাঁও ওয়ার্ডে প্রথম ডিজিটিাল সেন্টার স্থাপন করে।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী মো. সামসুদ্দোহা বলেন, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি সবগুলো ওয়ার্ডে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করতে। কিন্তু ওয়ার্ড অফিসে যথেষ্ট জায়গা না থাকার কারণে যথাসময়ে করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের ওয়ার্ড অফিসগুলো পরিকল্পিতভাবে করা হয়নি। এমনকি অনেক ওয়ার্ড অফিসে কাউন্সিলর নিজেই ভালোভাবে বসতে পারেন না। তাছাড়া নির্দেশনা দেওয়া আছে, ডিজিটাল সেন্টারগুলো ওয়ার্ড অফিসের নিচতলায় করতে হবে। আসলে এ কারণেই দেরি হচ্ছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি, সবগুলো ওয়ার্ডে যাতে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা যায়।