১২ জনের তথ্য চেয়েছে দুদক

261

রেলওয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তে কর্মচারী, ঠিকাদার ও নিয়োগ প্রার্থীদের তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ৩০ এপ্রিল দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয় থেকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) কাছে একটি চিঠি পাঠানো পাঠানো হয়। আগামী ১৫ মে’র মধ্যে চিঠিতে উল্লেখিত তথ্যগুলো সরবরাহের জন্য অনুরোধ করেছেন দুদক চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন।
রেলওয়ের যেসব কর্মচারী ও ঠিকাদারের তথ্য চাওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন- প্রধান বাণিজ্যিক দপ্তরের সহকারী দাবী পরিদর্শক (এসিআই) মো. অলী উল্লাহ সুমন (বহিষ্কৃত), তাঁর ভাই ট্রাক সাপ্লাইয়ার অফিসের ইউডিএ আবুল বশর, তূর্ণা-নিশীথা ট্রেনের জেনারেটর রুমে কর্মরত পোর্টার খোকন মিয়া, মো. তুষার আলম, সরোয়ার আলম, মো. বাদল, রফিকুল আলম, লাকসামে কর্মরত সমর দে, নিয়োগ প্রার্থী মিজানুর রহমান, ঠিকাদার হাসান, আলমগীর ও ঢাকা বিমানবন্দরের ফাস্টফুড শপের মালিক আকতারুজ্জামান।
দুদক চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, ‘২০১২ সালের রেলের মহাদুর্নীতিসহ কয়েকটি অভিযোগে সুমন ও তার ভাই বশরের নাম এসেছে। তারা দুই ভাইসহ রেলের একটি সিন্ডিকেট মিলে খালাসী, আয়া ও টিকেট চেকার পদে ৩০-৪০ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। বাকি ৩০০ জনের অধিক ব্যক্তির কাছ থেকে ১২ কোটি টাকার মতো নিয়েছে। এগুলোসহ সম্প্রতি আরো কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। মূলত এসব তদন্তের স্বার্থে আমি রেলে চিঠি দিয়েছি। ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের লোকদের নিয়োগ দেয়ার কথা বলে তারা টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।’
দুদক সূত্র জানায়, পূর্বরেলের প্রধান বাণিজ্যিক দপ্তরের এসিআই মো. অলী উল্লাহ ওরফে সুমনের বিরুদ্ধে জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি নেয়া, রেলওয়ে শ্রমিক লীগের প্রভাব/ক্ষমতা অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম, হুমকি, ধমকি, বøাকমেইল করে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগে বাধ্য করা, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে। যে কারণে দুদকের পক্ষ থেকে পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করা সুমনের নামে মেন্স স্টোরস লিমিটেডের শেয়ার বিক্রি, শেয়ার হোল্ডারদের যাবতীয় তথ্য, রেলওয়ে হতে দোকান, বাসা, জায়গা লিজ বরাদ্দ পেয়ে থাকলে তার তথ্য, সুমনের নামে রেলের কোয়ার্টার বরাদ্দ ও তার বর্তমান অবস্থান এবং কতদিন যাবত উক্ত বাসায় থাকছেন না, তার নামে রেলওয়ের কোনও সম্পত্তি নগরীর আনন্দবাজার নামক স্থানে দখলে আছে কিনা এবং ২০১২ সালে টিকিট কালোবাজারির দায়ে তার বিরুদ্ধে মামলার তথ্য চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও মিজানুর রহমান নামে একজন নিয়োগ প্রার্থীর বিভিন্ন পদে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও আবেদনের কপি এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম তূর্ণা-নিশীতা ট্রেনের জেনারেটর রুমে কর্মরত পোর্টার খোকন মিয়ার চাকরিতে যোগদান সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছে দুদক।
এছাড়াও ২০০৪ সাল হতে অদ্যাবধি ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জে কারা যোগদান করেছেন, তাদের যোগদান পত্রের নথি, ২০১২ সালে নিয়োগকৃত মো. তুষার আলম, সরোয়ার আলম, মো. বাদল, রফিকুল আলম ময়মনসিংহ, রাজশাহীসহ অন্য কোনও জায়গায় চৌকিদার, ট্রলিম্যান, খালাসী, ট্রেন নাম্বার ট্রেকার পদে কর্মরত তালিকা থাকলে তাদের নথি, নিয়োগপ্রাপ্তদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এবং লাকসাম রেলওয়ের সমর দের ব্যক্তিগত নথি দুদকের কাছে ১২ মের মধ্যে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি রেলের ঠিকাদার হাসান, আলমগীর, ঢাকা বিমানবন্দরের ফাস্টফুড শপের মালিক আকতারুজ্জামান নামীয় কোনও ঠিকাদার রেলওয়েতে তালিকাভুক্তির তথ্য এবং তাদের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা সরবরাহসহ অতীতে কোনও নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত ছিল কিনা এসব বিষয়ে তথ্য চেয়েছে দুদক।
কর্মচারী-ঠিকাদারদের তথ্য চেয়ে দুদকের চিঠি দেয়ার বিষয়ে জানতে গতকাল রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সৈয়দ ফারুক আহমদের সাথে যোগাযোগ করতে বেশ কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ধরেননি।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ৪ জুলাই রেলওয়ের এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় অলি উল্লাহ সুমনকে সাময়িক বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও গত ৪ সেপ্টেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলা দায়ের করে দুদক। সম্প্রতি আরএনবির সিপাহী পদের নিয়োগ নিয়ে চিফ কমান্ডেন্ট মো. ইকবাল হোসেনের দুর্নীতির তদন্ত করছে দুদক। এছাড়াও আশুগঞ্জে গম বোঝাই রেলের বগি লাইনচ্যুতের ঘটনায় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ ফারুক আহমদকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দুদক গেলেও কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সুমনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ আছে। সুমন ও তার ভাই বশরের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অনেক রাঘববোয়ালের মুখোশ উন্মোচন হবে।’