১২শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব কোরীয় কোম্পানির

55

কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ইস্টওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (ইডব্লিপি) বাংলাদেশে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের একটি এলএনজি (লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস) চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। আমদানি করা তরল গ্যাসচালিত এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে দ্বৈত জ্বালানি হিসেবে তেল ব্যবহারেরও সুযোগ রাখতে চায় ইডব্লিপি।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করতে আগ্রহী কোম্পানিটি। প্রতিটি ৬০০ মেগাওয়াট করে দুই ইউনিটের এ কেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে বিল্ড অন অপারেট (বিওও) পদ্ধতি অনুসরণ করতে চায় কোরিয়ান কোম্পানিটি। কেন্দ্রটি স্থাপনকারী কোম্পানিই এটি নির্মাণ ও পরিচালনা করবে।
কোরিয়ান এই কোম্পানিটি পেসিফিক এনার্জি ও ফরচুন এনার্জির সঙ্গে যৌথভাবে কেন্দ্রটি করার জন্য লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বা আগ্রহপত্র জমা দিয়েছে। বর্তমানে এই কোম্পানিটির ১১ হাজার ১৮৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার মতো কেন্দ্র রয়েছে। কোম্পানিটি তাপ (কয়লা) ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে অভিজ্ঞ। যুক্তরাজ্য, জামাইকা, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশকিছু দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে কোম্পানিটি।
তবে এলএনজির সরবরাহ কী করে আসবে তা প্রস্তাবে বলা নেই। সরকার বলছে, যারা এ ধরনের কেন্দ্র করতে চায় তাদের শুধু কেন্দ্র নির্মাণ করলেই হবে না, জ্বালানির সংস্থানও করতে হবে। কিন্তু কোরিয়ান কোম্পানিটি এলএনজির সংস্থানের বিষয়ে কিছু বলেনি।
কোরিয়া ইস্ট-ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি বাংলাদেশ তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) বলছে, বর্তমানে দেশে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা তিন হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে তিন হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংকট থেকে যাচ্ছে। সংকট কাটাতে গত বছর থেকে ভাসমান একটি এলএনজি টার্মিনালে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। টার্মিনালটির রিগ্যাসিফিকেশন (এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর) ক্ষমতা ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। টার্মিনালটি ৪৫০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করছে। এলএনজি টার্মিনালটি সর্বোচ্চ দৈনিক ৫২০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত এলএনজি সরবরাহ করছে। টার্মিনালটি নির্মাণ করেছে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি। আগামী মাসে অর্থাৎ মধ্য এপ্রিল থেকে আরও একটি একই ক্ষমতার এলএনজি টার্মিনালের উৎপাদনে যাওয়ার কথা। টার্মিনালটি নির্মাণ করছে দেশের সামিট গ্রুপ।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন বলেন, ‘অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার দীর্ঘমেয়াদি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এতে বলা হচ্ছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে এলএনজি আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে পাঁচ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট করা হবে। এই গ্যাস আমদানির পাশাপাশি এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। এই বিষয়ে অনেক কোম্পানিই আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমরা তাদের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করছি।’
সরকারের মহাপরিকল্পনায়- শুরুতে ৫০ ভাগ কয়লা এবং অন্যান্য জ্বালানিতে বাকি ৫০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা আছে। তবে এই পরিকল্পনা সংশোধন করে এলএনজিতে ১৫ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াট, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড একই ক্ষমতার একটি এবং সামিট গ্রুপ দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের একটি এলএনজিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর বাইরে ভারতীয় রিল্যায়েন্স কোম্পানি ৭৫০ মেগাওয়াট এলএনজিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে।