হোসনি মোবারক আর নেই

77

মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক ৯১ বছর বয়সে কায়রোর একটি হাসপাতালে মুত্যুবরণ করেছেন (ইন্নালিল্লাহি….রাজিউন)। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, প্রায় ৩০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা সাবেক এই প্রেসিডেন্ট মঙ্গলবার মারা যান। মিসরের সাবেক এই স্বৈরশাসক স্ত্রী সুজানে ও দুই ছেলে জামাল, আলাকে রেখে গেছেন। প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক মিসরের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী শাসক।
১৯৮১ সালে প্রথমবার মিসরের ক্ষমতায় আসেন হোসনি মোবারক। ২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ মিসরে আছড়ে পড়লে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। ওই বছরের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া ১৮ দিনের অভ্যুত্থানে ১১ ফেব্রূয়ারি ক্ষমতাচ্যুত হন মুবারক। কিন্তু অভ্যুত্থানের দিনগুলোতে তার নির্দেশে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ২৩৯ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন বলে আদালতে প্রমাণিত হয়। ফলে ২০১২ সালে নিম্ন আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়। তবে আপিল আদালতে বেকসুর খালাস পেলে ২০১৭ সালের মার্চে মুক্তি পান তিনি।
দেশটির সরকারি টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, কয়েক সপ্তাহ আগে হোসনি মোবারকের দেহে অস্ত্রপচার করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে কায়রোর একটি সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়। মঙ্গলবার সেখানে মৃত্যু হয় তার।
হোসনি মোবারাকের জীবন-কর্ম : হোসনি মোবারক ১৯২৮ সালের ৪ মে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম মুহাম্মদ হোসনি সাইদ মোবারক । তার বাবা ছিলেন বিচার মন্ত্রণালয়ের একজন ইন্সপেক্টর। মোবারক মিশরের জাতীয় সামরিক অ্যাকাডেমি, বিমানবাহিনী অ্যাকাডেমি এবং মস্কো-র ফ্রুনযে জেনারেল স্টাফ অ্যাকাডেমিতে শিক্ষালাভ করেন।
১৯৮১ সালের ১৪ অক্টোবর থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মিসরের রাষ্ট্রপতির দায়িত্বপালন করেন তিনি। ১৯৭৫ সালের উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন এবং সাদাত নিহত হবার পর ১৯৮১ সালের ১৪ অক্টোবর মোবারক মিশরের রাষ্ট্রপতি হন। মোহাম্মদ আলীর পরে রাজনীতিতে প্রবেশের পূর্বে মোবারক মিশরীয় বিমান বাহিনীর একজন কমান্ডার হিসেবে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
মিশরীয় রাষ্ট্রপতি আনোয়ার আল সাদাতের অধীনে তিনি বেশ কিছু সামরিক পদে দায়িত্বপালন করেন। এর মধ্যে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি উপ-যুদ্ধমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৫ সালে তিনি মিশরের উপ-রাষ্ট্রপতি হন।
১৯৮১ সালের ৬ অক্টোবর সাদাতকে হত্যা করা হলে মোবারক মিশরের রাষ্ট্রপতি হন। ক্ষমতায় এসে তিনি একটি অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন প্রকল্প শুরু করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে ইসরায়েলের সাথে সাক্ষরিত শান্তিচুক্তি ধরে রাখার ব্যাপারেও অনমনীয় ছিলেন। মিশরের সাথে ইসরায়েলের শান্তিচুক্তির ফলে অন্যান্য আরব রাষ্ট্রের মধ্যে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলে তিনি তার অনেকটাই সামাল দেন। তিনি বৃহৎ শক্তিগুলোর প্রতি ‘ইতিবাচক নিরপেক্ষতা’র নীতি গ্রহণ করেন।
তবে তার সময়ে শত শত কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা পেলেও মিসরের বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও দুর্নীতি বাড়তে থাকে। আর এর জের ধরেই আরব বসন্তের অভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছাড়তে হয় তাকে।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া বিক্ষোভের ১৮ দিনের মাথায় ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন হোসনি মোবারক। আরব বসন্তের সময় তার নির্দেশে ২৩৯ বিক্ষোভকারীকে নিরাপত্তা বাহিনী সদস্যরা গুলি চালিয়ে হত্যা করেন বলে আদালতে প্রমাণিত হয়। ফলে ২০১২ সালে দেশটির নিম্ন-আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়।
কিন্তু ওই রায়ের বিরুদ্ধে দু’বার উচ্চ আদালতে আপিল করেন হোসনি মোবারক। এছাড়া সরকারি তহবিল তসরুফের অভিযোগেও তিন বছরের কারাদন্ড ভোগ করেন তিনি। ২০১৭ সালে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়ার পর কারাগার থেকে মুক্তি পান হোসনি মোবারক।