হোম কোয়ারেন্টাইন নিয়ে হার্ডলাইনে যাচ্ছে সরকার

100

এই মুহূর্তে সারাদেশে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন দুই হাজার ৩২৪ জন। তাদের অন্তত ১৪ দিন ঘরের বাইরে না যেতে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু সে অনুরোধ উপেক্ষা করেই বিদেশ ফেরত অনেকে মিশে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষের ভিড়ে, সরকারি নির্দেশনাও মানছেন না তারা। হোম কোয়ারেন্টাইন যারা মানছেন না, তাদের শতভাগ কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তরা বলছেন, হোম কোয়ারেন্টাইনকে এখন হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। কেউ হোম কোয়ারেন্টাইন না মানলে সরকার এখন ‘হার্ডলাইনে’ যাবে।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধি (আইএইচআর -২০০৫)- এর আর্টিকেল ৩২ অনুসারে যেসব দেশে করোনা ভাইরাসের স্থানীয় সংক্রমণ ঘটেছে, সেসব দেশে দেশি-বিদেশি যাত্রী যারা এসেছেন এবং আসবেন তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইন থাকতে হবে। ইতোমধ্যে আক্রান্তদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর ইতোমধ্যে নভেল করোনা ভাইরাসের জন্য ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮’-প্রয়োগের প্রয়োজন হতে পারে জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এ আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী যদি কেউ সংক্রামক রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা থাকা সত্তে¡ও তা গোপন করে, ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা ভুল তথ্য দেয় তাহলে সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এজন্য ওই ব্যক্তি দুই মাসের কারাদন্ড বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন। এছাড়াও কোনো এলাকাকে সংক্রমিত এলাকা ঘোষণা, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয়ও আছে এই আইনে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বিদেশ ফেরতরা যেন হোম কোয়ারেন্টেইন সঠিকভাবে মেনে চলেন সেজন্য এখন তাদের প্রশাসনের মাধ্যমে এলাকায় পাঠানো হচ্ছে, যাতে করে তাদের নিজের বাড়িতে সেটা নিশ্চিত করা যায়। তিনি বলেন, আমরা এতদিন হার্ড লাইনে যাইনি। কিন্তু এখন কেউ হোম কোয়ারেন্টাইনে না থাকলে হার্ড লাইনে যাওয়ার জায়গা চলে আসবে। তাই এতদিন অনুরোধ করেছি, কিন্তু সাধারণ মানুষ যদি সহযোগিতা না করেন, তাহলে আমাদের অন্য ব্যবস্থার দিকে যেতে হবে। আইনের প্রয়োগ এবং প্রশাসনের অংশগ্রহণ জরুরি হয়ে পড়বে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, হোম কোয়ারেন্টাইন কেউ পালন না করলে সরকার ব্যবস্থা নেবে, কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে আমাদের। অনেকেই হোম কোয়ারাইন্টানে থাকছে না বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে- এ বিষয়ে সরকার তথা স্বাস্থ্য অধিদফতর কি করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়াটাও একটি সচেতনতা তৈরি। কেউ যদি যদি আইন না মানে তাহলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। এই গণবিজ্ঞপ্তি স্বাস্থ্য অধিদফতর ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত পাঠিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে পাঠানো হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার যারা রয়েছেন তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কোয়ারান্টাইনে কেউ না থাকলে তাদেরকে ‘ঘরে ঢোকানোর’। আমরা যদি খবর পাই যে এই গণবিজ্ঞপ্তি মানা হচ্ছে না, তখন অ্যাকশনে যাওয়া জন্য নির্দেশ দেবো। এরপরও যদি কোনো ‘এক্সট্রিম সিচুয়েশন’ হয় তাহলে পুলিশ যাবে। এ আইন কেউ অমান্য করলে সর্বোচ্চ তিনমাসের কারাদন্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা কিংবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন, ফৌজদারি কার্যবিধিতে এর বিচার হবে।