হোমগ্রাউন্ডে ফেনীর কাছে হেরে চট্টগ্রামের বিদায়

40

একের পর এক গোলের সুযোগ নষ্ট করার খেসারত দিয়ে মুজিব শতবর্ষ চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে স্বাগতিক চট্টগ্রাম জেলা। গতকাল এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে নিজেদের প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রাম টাইব্রেকারে ৩-৪ গোলে ফেনী জেলার কাছে পরাজিত হয়।
নির্ধারিত সময়ের খেলা গোলশূণ্য ড্র ছিল। স্পট কিকে নিজেদের প্রথম দুই শট থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয় চট্টগ্রামের বেলাল ও অধিনায়ক আকতার। এরপর রাশেদ, সুমন ও ইকবাল গোল করতে সক্ষম হলেও প্রথম শটে ফেনীর আবিরের মিসের পর একে একে গোল করেন মাঈন উদ্দিন, রবিন, মাহদী ও রাফেত।
নির্ধারিত সময়ের খেলায় চট্টগ্রামের প্রাধান্য ছিল সুস্পষ্ট। গোলের সুযোগ সৃষ্টিতেও এগিয়ে ছিল স্বাগতিকরা। তবে দুর্বল ফিনিশিং এর কারণে অর্ধ ডজন সুযোগের একটিকেও গোলে পরিণত করতে পারেনি আনোয়ার-তৌহিদের শিষ্যরা।
অপরদিকে সমানতালে লড়াই করলেও চট্টগ্রামের গোলরক্ষক ফারুককে তেমন পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি ফেনীর ফুটবলাররা। তবে গোল না পাওয়ার জন্য চট্টগ্রামের ফরোয়ার্ডদের অমার্জনীয় ব্যর্থতার পাশাপাশি ফেনীকে গোল হজম করা থেকে বাঁচানোর জন্য দারুণ ভূমিকা ছিল গোলরক্ষক নোমানের। আর তাই টাইব্রেকারের আগে আঘাত পেয়ে মাঠ ছেড়ে গেলেও ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন ফেনী জেলার কাস্টডিয়ান আবদুল্লাহ্ আল নোমান।
এর আগে প্রধান অতিথি হিসেবে টুর্নামেন্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল) এমপি। চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম লেদুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভেন্যু পরিচালনা কমিটির আহবায়ক মো. হাফিজুর রহমান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিডিএফএ সভাপতি এস এম শহীদুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, ক্রীড়া সংগঠক মোজাম্মেল হক প্রমুখ।
ম্যাচ উপভোগের জন্য গতকাল পটিয়া থেকে অনেকগুলো বাস ভর্তি করে মাঠে বিপুল সংখ্যক দর্শক আনা হয়। কিন্তু টাইব্রেকার শুরুর আগেই তারা মাঠ ত্যাগ করে। তবে ম্যাচের শুরু থেকেই কয়েকশ’ ফেনীবাসী গ্যালারিতে বসে সারাক্ষণ গলা ফাটিয়ে নিজ দলকে উৎসাহিত করতে দেখা যায়। ম্যাচ জয়ের পর তাদের আনন্দ নৃত্য মাঠে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা করে। মাঠের খেলার সাথে সহ¯্রাধিক ‘উৎসাহ দিতে আনা’ চট্টগ্রামবাসীরও পরাজয় ঘটে ‘উৎসাহ দিতে আসা’ অল্প সংখ্যক আন্তরিকতাসম্পন্ন ফেনীবাসীর কাছে।
ফুটবল পাগল এক দর্শক হতাশার সুরেই বলেন, আমাদের চাটগাঁইয়াদের আঞ্চলিকতার টান দিন দিন উঠে যাচ্ছে। এলাকাবাসী স্বতঃস্ফুর্তভাবে খেলা দেখতে আসছে না। আমাদের লোকজনকে গাড়ি ফ্রি দিয়েও আনা যাচ্ছে না। আর ফেনীর লোকজন নিজেদের খরচে মাঠে এসে দলকে উজ্জীবিত করার দায়িত্ব পালন করেছে।
একজন তরুন সংগঠক ক্ষোভের সাথে বলেন, এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে খেলা, সিজেকেএস’র অফিস থেকে সব পরিচালিত হচ্ছে অথচ সিজেকেএস’র কোন কর্মকর্তা কোন দায়িত্বে তো নাই-ই, মেহমান হিসেবেও তাদেরকে রাখা হয়নি! সাবেক মেয়র না হোক, বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক ফোরামের সভাপতি বা সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন কি বিশেষ অতিথির মর্যাদাও পান না? যাদের আন্ডারে বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন সেই চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি, সহসভাপতি বা সাধারণ সম্পাদককেও কাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। ব্যাপারটি ভাবলে খটকা লাগারই কথা। তাহলে সামশুল হক চৌধুরী এমপির নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন কি বিভাগ বা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের গুরুত্ব না দিয়ে তাদেরকে অ্যাভয়েড করার ভূমিকা নিয়েছে? চট্টগ্রামের সংগঠকরা যেখানে নিজভূমে পরবাসী সেখানে টুর্নামেন্ট চালাচ্ছে কারা?
গতকাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রয়াত ফুটবল কিংবদন্তী ম্যারাডোনার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তবে খটকা লেগেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের বিষয়টি। অনুষ্ঠানসূচিতে না থাকলেও সামশুল হক চৌধুরী এমপি নিজের বক্তব্যের সময় নিজেই এ ঘোষণা দিয়ে আধা মিনিটেরও আগে তা শেষ করে ফেলেন।
প্রেস বক্সে এক সিনিয়র সাংবাদিক দুঃখ করেই বলেন, ‘বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা, একজন খাঁটি মুসলমান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর স্মরণে প্রতি দিন লাখো মানুষ জাতির জনকের মাগফেরাত কামনা করে কোরআন তেলাওয়াত আর মিলাদ মাহফিল করে। আর সামশু ভাই…।