হেমন্তের শীতল পরশ

134

হেমন্তের মৃদু-মন্দ হিমেল সমীরণ বয়ে যায় শীতল পরশে
দোলা লাগে ধানের শীষে আর খেণ খামারে রাখাল মনে।
নতুন ধানের বাহারি পিঠায় শীতের আমেজে জাগে গ্রাম
সারারাত গানে মাতে শৌখিন যুবক গুনাইবিবির আসরে।

শিশিরভেজা নরম ঘাসে গান গায় উত্তরের উদাসী বাতাস
কৃষকের মন নাচে গোলা ভরা ধানে, পিঠা-পুলির উৎসব।
খেজুর রসে শিরনি মানত করে প্রিয়জন স্মরণে পল্লী বধূ
সন্তানের সুস্থতা কামনায় কাতর মিনতি জানায় মাজারে…।

পূর্ণিমা রাতে ফেরদৌসির সাথে হৃদয়ের অব্যক্ত কথা ব্যক্ত
করে জীবনের স্বপ্ন বোনে নাটা পাড়ার প্রেমিক বাউল যুবক।
শীতে উষ্ণতা খুঁজে শরীরে শরীর ঘষে সুদর্শন তরুণ-যুগল
ভাপা পিঠার মতো স্তনের কোমলতায় জাগে যৌবন জরদ।

হেমন্তের পূর্ণিমা তিথি
স্বাতী ব্যানার্জী

আবছা কুয়াশায় ধোঁয়া ধোঁয়া কুÐলী পাকানো হেমন্তে
ধোঁয়াশা হাসিখানি মনে করে অকারণ হেসে যাই
বেদনা নীলখামে গুমরায়।

ছোট্ট জীবন, আশা নিরাশার দোলাচলে যায় কাটি।
অলস দুপুর তবু বুকে দাবানল জ্বালায়ে পুড়ে
জ্বলে অরণ্যের পর অরণ্য তব আমার হৃদয় খানি
আমি বিশাল ভ‚-মধ্যসাগর পাড়ে বসে ঢেউ গুণি।

বলতে চাই অনেক কথা, কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে
চারিদিকে বদ্ধ দরজায় খিল দেয়া, হৃদয়ে কাঁপন লাগে।
বৃষ্টিভেজা দুপুর ডাকে একাকী
নিশীথ রাত গায় নিভৃতে
হয়তো কোনো এক হেমন্তের পূর্ণিমা তিথিতে
অকস্মাৎ দখিনা দুয়ার যাবে খুলি
তখন, তুমি আমি হবো আবার মুখোমুখি।

মিথ্যের কারাবাসে
মিজান মনির

স্বপ্ন ভেঙে দুঃস্বপ্নের শেষ সীমানায়, চমকে চমকে ঘুম ভেঙে যায়!
জেগে দেখি পাশে নেই যে থাকার কথা, চোখ পড়ে কাঁচের জানালায়
ভরা জোছনায় আলো নেই ঘরে, হতাশার চাঁদরে ঢাকা ঘুটঘুটে আঁধার
নির্বাক চোখে চেয়ে থাকি অপলক, দুঃখ যেনো কিনেছি আমিই আমার!

আনমনে ভাবি চেনামুখ নিশি ভোর স্বপনে, আনাগোনা সন্দেহে
একাকী মেতে উঠি, এই বুঝি এলো পূর্ণ জোয়ারে ষোড়শী দেহে;
নয় তো পাপের খেলা- তবুও কেন অবহেলা সুখ-শোকের কারাগারে
জং ধরা মনে, পচন শরীরের কি যে বাহাদুরি! সত্য-মিথ্যার কারবারে।

দু’দিনের এ জীবনে, ক্রয়-বিক্রয়ের সব আশা-হতাশার আলিঙ্গনে
ঘুণেধরা স্বপ্নগুলো অকারণে ঝরে পড়ে, আশায় বাঁধি বুক জনে জনে।
শোক-স্মৃতি জমা বুকে বেশ আছি সুখে-দুখে ভাসমান এ জীবন নায়ে
নাটাই ছেঁড়া ঘুড়ি দু’পায়ী ছদ্মবেশে ঘুরি জানি না থির কোন সে গাঁয়ে।

এটা তো নয় গোলক ধাঁধাঁ পথ হারিয়ে অযথা কাঁদা হৃদয়ে জপো তাঁরে
ঘুটঘুটে আঁধারে ছুটাছুটি সারাক্ষণ, ওরে পাগল মন পুষবি তুই কারে ?
নিরাকারে নেই প্রতারণা, পচন ধরা বিশ্বাসে, আদি ভ্রুণে যাবো মিশে-
ভরা জোছনায় দূর হবেই আঁধার সৃষ্টি কর খাঁটি তবে ভয় আর কিসে?

উদ্যাপন
পুলক বিশ্বাস

আজ তুমি শুক্রবার
ঘুড়ির সুতোটানা রোদ্দুরে ময়‚রের পেখম
আজ আস্ত একটা কবিতার বই, উৎপল সমগ্র
এক বিশুদ্ধ জীবাশ্ম-খনিজের পরিভাষা

আজ সবই লৌকিক, শীতের আগাম উদাসী এক্সপ্রেস
নিম্নমধ্যবিত্ত সময়ের মোহটুকরো আয়না তুমি-
একসন্ধ্যা দ‚রে দাঁড়াও
আমি যাত্রা বাঁধি বিকেলের ডানাশব্দে

তুমি লোকায়ত কল্পনদের বিকল্প, জল বাজাও
আজ শুধুই উদ্যাপন…