হেমন্তের রূপ

300

সাত সকালে শীতের আমেজ
বিষ্টি গেছে থেমে,
হেমন্ত ওই আকাশ থেকে
আসলো বুঝি নেমে।

ধূসর নীলে মুক্ত আকাশ
নেই তো মেঘের ঘুড়ি,
এই তো সময় দূর আকাশে
পাখির ওড়াউড়ি।
সোনাবরণ সবুজ মাঠে
ফসল রাশিরাশি,
মিষ্টি রোদের পরশ মেখে
এই নবান্ন হাসি।

লতাপাতা দূর্বাঘাসে
ঝিলিক শিশির কণা,
অপরূপ এই রূপের মাঝে
যাই হয়ে আনমনা।

ইচ্ছে ঘুড়ি
ফারজানা রহমান শিমু

সকাল দুপুর বইয়ের বোঝা ভাল্লাগেনা বলে
সন্ধ্যা হলেই মায়ের আঁচল ভাসাই চোখের জলে।
অংক, ভূগোল, বাংলা ছাড়াও কত্ত রকম পড়া
বানান শেখার পাশাপাশি শিখছি অনেক ছড়া।

সপ্তাহ জুড়ে নানা রকম কোচিং ক্লাশে ছুটি
কেমন করে খেলার মাঠে সবাই মিলে জুটি।
ইচ্ছেটাকে পাখনা মেলে উড়তে দিতাম যদি
হতাম বুঝি পাহাড়, সাগর, কিংবা ঝর্ণা নদী।

কেউ জানেনা আপন মনে লিখতে ভালবাসি
ছোট ছোট গল্প কথা, কাব্য রাশি রাশি।
হঠাৎ সেদিন বাবার হাতে পড়ল আমার খাতা,
ভয়ে আমি ভাবছি বুঝি বলবে এখন যা তা।

অবাক চোখে তাকিয়ে দেখি বাবার মুখে হাসি
বলল, ‘আরে, এসব আমি ভীষণ ভালবাসি।’
সেদিন থেকে ইচ্ছেঘুড়ি ছুটছে ডানা মেলে
শব্দগুলো ইচ্ছেমতো মনের মধ্যে খেলে।

হেমন্ত মুখরিত
অপু চৌধুরী

পাখিদের কলতানে হেমন্ত জাগে প্রাণে
অবারিত নীলাকাশ হাসে খুব
কুয়াশার আনাগোনা মাঠ জুড়ে আলো বোনা
রমণীয় মা-মাটির ভাসে রূপ!

মুখরিত সবুজের-দুরন্ত অবুঝের
চিকচিক ছলছল দস্যিপনা
ঘুম ভাঙা রবিকর-প্রশান্ত সরোবর
এঁকে রাখে হেমন্তের রঙ আলপনা।

মাঠে জুড়ে খেলে যায় শীষে শীষে দোল খায়
হলুদাভ আমনের বাগানে
কৃষকেরা প্রাণ খোলে তৃপ্তির শ্বাস তোলে
আনন্দে আনমনে জাঁক আনে।

সাগরের বুকে বুকে চলে নাও কতো সুখে
ভাটিয়ালি গান করে মাঝি ভাই
জলে আর ঢেউ নেই প্রমত্তা কেউ নেই
হেমন্ত মুখরিত, আজি তাই।

প্রজাপতি
আহসানুল হক

প্রজাপতি প্রজাপতি
ওড়ে ফুলের বনে,
আমিও তো ফুল্ল খুকি
খেলে আমার সনে !

পাখনাতে তার আঁকিবুকি
রঙ বাহারি খেলা,
ওর পেছনে ছুটেই আমার
যায় গড়িয়ে বেলা !

হাল্কা, কোমল দেহখানা
রঙিন দু’টি ডানা,
প্রজাপতি দেখলে যে হই
খুশিতে আটখানা !
পরাগ রেণু দেয় ছড়িয়ে
ফুল থেকে সে ফুলে,
আলতো হাতে ছুঁতে গেলেই
যায় উড়ে পাখ তুলে !

এই বসে তো ফুলের উপর
এই বসে তো পাতায়,
প্রজাপতির ছবি আঁকা
আমার পুরো খাতায় !

মন বসে না অংক কষায়
মন বসে না পাঠে,
প্রজাপতির সাথে খেলা
সময় আমার কাটে !

এলো ঋতু হেমন্ত
আল জাবিরী

সকাল বেলায় হিমেল হাওয়ায়
এলো ঋতু হেমন্ত,
সোনার ধানে পাখির গানে
উদাস করে এ মন তো?

ঘাসের বুকে শিশির ঝরে
নদীর বুকে ঢেউ,
সকাল বেলায় স্নিগ্ধ হাওয়ায়
শিউলি কুড়ায় কেউ?

নতুন ধানে চাষীর মনে
খুশির শিহরণ,
ভোর সকালে পিঠা পুলির
দারুণ আয়োজন?
নদীর ধারে বটের ছায়ে
রাখাল বাজায় বাঁশি,
সরষে ফুলের হলদে মাঠে
স্বপ্ন রাশি রাশি?

বক সারসের বসছে মেলা
ছোট্ট নদীর বাঁক,
পাকা ধানের সোনার ক্ষেতে
বাবুই পাখির ঝাঁক?

জোছনা রাতে চাঁদের সাথে
বসে তারার মেলা,
হেমন্তিকা রাত ঘনালে
জোনাক করে খেলা।

হেমন্তে মাতোয়ারা
অভি দে শিবা

চারিদিকে খুশির আমেজ
সোনালি ধান মাঠে,
হেমন্তে প্রাণ মাতোয়ারা
কৃষক নাচে ঘাটে !

হালকা বাতাস দিচ্ছে দোলা
সোনালি রোদ হাসে,
শালিক পাখি নৃত্য করে
শিশির ভেজা ঘাসে!
শিশু কিশোর সবাই খুশি
এলো মজার মাস,
কৃষক মাঠে ফসল কাটে
মনে সুখের রাশ।

নবান্নতে সবার মনে
জাগলো খুশির ঢেউ,
পিঠা পুলির আসর জমে
বাদ যায় না কেউ!

কুটুম আসে হৃদয় হাসে
সাথে আনেন পিঠা,
দুষ্টু খোকা বায়না ধরে
খাবে গুড়ের মিঠা !

কর্ণফুলীর নুরু
সাঈদুল আরেফীন

কর্ণফুলীর বুকের মাঝে
নিত্য জলের খেলা,
দুই পাড়েরই লোকেরা সব
কাটায় সুখের বেলা ।

কর্ণফুলীর দু’ধারে গ্রাম
আছে সবুজ ছায়া,
আলোর নহর ছড়িয়ে আনে
সুখেরই এক মায়া।

জলের স্রোতে বৈঠা ফেলে
শুধুই আসা-যাওয়া,
মুক্ত হাওয়ায় একলা বসে
প্রাণ খুলে গান গাওয়া।

দুঃখ সুখের ভেলায় ভেসে
গাঁয়ের নুরু মাঝি,
কর্ণফুলীর মায়ায় বেঁধে
করলো জীবন বাজি।

হেমন্তের উৎসব
সাঈদ সাহেদুল ইসলাম

হেমন্তকাল- আসলে দেখি
শস্য পাকার গন্ধ,
মাঠে মাঠে- বাতাস শোনায়
ঝুন ঝুনা ঝুন ছন্দ।

নরম রোদে ফসল দানার
এমন সে রঙ-বর্ণ
চিকচিকচিক জ্বলে-যেমন
মুক্তা-মতি-স্বর্ণ।

শস্য ক্ষেতে দেখতে মজা
প্রজাপতির নৃত্য,
কাকতাড়ুয়া পক্ষী তাড়ায়
বাধ্যগত ভৃত্য।

নতুন ধানের মিষ্টি পিঠার
উৎসবে নবান্যে,
হেমন্তে ঘর-দেশ ভরেছে
আবার ধন-ধান্যে।