হাসিলের নামে আদায় হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা

44

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে নগরীর প্যারেড মাঠে স্থানান্তরিত অস্থায়ী চকবাজার কাঁচা বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাসিলের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে ইজারাদার, এমনই অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। তবে ইজারাদার জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, কোন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নির্ধারিত টাকার অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে না।
জানা গেছে, প্যারেড মাঠের জায়গাটি চট্টগ্রাম কলেজের হলেও দৈনিক ভিত্তিতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি টাকা আদায় করছেন তারা। যেখানে দোকানপ্রতি আগে আদায় হতো ৯০ টাকা, আর এখন হাসিল হিসেবে অতিরিক্ত তোলা হচ্ছে আরো ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কলেজ মাঠে বাজার স্থানান্তরের পর থেকে তারা প্যারেড মাঠে ব্যবসা করছেন। তবে স্থানান্তরের পর মূল বাজারে যা হাসিল আদায় করা হতো তার থেকে তিন-চার গুণ বেশি আদায় করছে ইজারাদারা। সবজি, মাছ-মাংস বিক্রেতাদের কাছ থেকে তারা অতিরিক্ত হাসিল আদায় করছেন। তাদের ইচ্ছেমত হাসিল পরিশোধ করলে ব্যবসা করা যাচ্ছে, নয়তো ফিরে যেতে হচ্ছে। জানা গেছে, চকবাজার কাঁচা বাজারটি বর্তমানে মো. ইদ্রিস হোসেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনিসহ কয়েকজন টেন্ডারের মাধ্যমে সিটি করপোরেশন থেকে বাজারটি ইজারা নেন। তবে বাজারে হাসিল নেওয়ার দায়িত্বে আছেন মো. মেহেদি নামে একজন। মূল ইজারাদার গ্রামের বাড়িতে থাকাতে হাসিল সংগ্রহ করা এবং দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছেন মো. মেহেদি ও হাসিল সংগ্রহকারী এক ব্যক্তি। এখন তারাই প্যারেড মাঠ থেকে হাসিলের নামে টাকা আদায় করছেন। যেটা মূল হাসিলের পরিমাণ থেকে অনেক বেশি।
এদিকে চকবাজার থানা বলছে, প্যারেড মাঠে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রায় ছোট বড় মিলিয়ে ১০০টি দোকানে বেচাকেনা চলছে। থানা পুলিশই এসব দোকানিদের দেখাশোনা করছেন। এখানে কারো কাছ থেকে অতিরিক্ত হাসিল তোলার প্রশ্নই উঠে না। সিটি করপোরেশন নির্ধারিত হাসিলের চেয়ে অতিরিক্ত হাসিল তোলা যৌক্তিক নয়। তারা এ পর্যন্ত অতিরিক্ত হাসিল তোলার কোন অভিযোগ পাননি।
এছাড়া অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, পুলিশকে ম্যানেজ করেই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। শুরুর দিকে আরও ভয়াবহ অবস্থা ছিল। এ চক্রের হয়ে আনিস ও বিপ্লব নামের দুজন লোক বাজার থেকে নিয়মিত ভয়ভীতি দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাংস দোকানি বলেন, পুলিশ এসে কাউকে অতিরিক্ত টাকা না দিতে বললেও তারা জোরপুর্বক তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। টাকা না দিলে দোকান বন্ধ করারও হুমকি দেন। যার কারণে অনেক ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ রাখছেন। টাকা দিতে না পেরে অনেক ব্যবসায়ী মূল কাঁচা বাজারে চলে যাচ্ছেন। নিষেধ থাকলেও সেটাই করছেন অনেক ব্যবসায়ী।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ইজারাদার মো. ইদ্রিস হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নিয়ম মেনেই হাসিল নেয়া হচ্ছে। কারো কাছ থেকে অতিরিক্ত কোনো টাকা নেয়া হচ্ছে না। আর আমি এখন গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছি। শহরে মেহেদী আছেন, সে বাজারের বিষয়ে বলতে পারে।
হাসিলের বিষয়ে মো. মেহেদি বলেন, আমরা ছোট দোকান থেকে ৬০ টাকা আর মাঝারি দোকান থেকে ৮০ টাকা করে আদায় করছি। তার বাইরে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে না। যদি কেউ আমাদের মনোনীত ব্যক্তির বাইরে টাকা আদায় করে থাকেন, তবে তার দায়ভার আমরা নিতে পারব না। আর আমাদের বিরুদ্ধে কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অভিযোগ দিতে পারে। যদিও এসব অভিযোগ সত্য নয়।
এ ব্যাপারে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন পূর্বদেশকে জানান, অতিরিক্ত হাসিল নেয়ার অভিযোগ তারা কারো কাছ থেকে পাননি। পেলে অবশ্য বিবেচনায় নেয়া হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা বাজারে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করার জন্য বাজারচি স্থানান্তর করেছি।
তিনি বলেন, হাসিল কত টাকা নিচ্ছে বা কে নিচ্ছে তা সম্পর্কে অবগত নই। কারণ বাজারের টাকা আদায় করার বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনের এখতিয়ার। তারপরেও যদি কেউ এ ব্যাপারে অভিযোগ দিতো, তা খতিয়ে দেখতাম।
তিনি আরও বলেন, হয়তো ব্যবসায়ীরা আপনাদেরকে অভিযোগ দিচ্ছে। আমাদের কোন অফিসার গেলে তারা তা স্বীকার করেন না। তাহলে ব্যবস্থা কেমনে নিবো বলুন? আগে তারা আমাদের জানাক, তারপর দেখব।