হালদায় চলছে যান্ত্রিক নৌযান-মাছ শিকার

97

তৈয়ব চৌধুরী, রাউজান
প্রাকৃতি মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে যান্ত্রিক নৌযান, চলছে মাছ শিকার। হালদা নদীতে গত কয়েকমাস ধরে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ জাল উদ্ধার করে।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার জোনায়েদ কবির সোহাগ ও হাটাহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন অভিযান চালিয়ে নদীতে মাছ শিকার করার সময়ে বিপুল পরিমাণ জাল উদ্বার করা হলেও থেমে নেই মাছ শিকার।
হালদা নদীতে রাতে ড্রেজার দিয়ে চলছে বালু উত্তোলন, ঘেরজাল, বড়শী, হাত জাল দিয়ে চলছে মাছ শিকার। চট্টগ্রামের রাউজান, হাটাহাজারী, ফটিকছড়ি উপজেলা ও নগরীর মোহরা এলাকার সীমানায় দিয়ে প্রবাহিত হালদা নদী। হালদায় মিঠা পানিতে মা মাছ ডিম ছাড়।
হালদা নদীতে চৈত্র মাস থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত সময়ে প্রবল বৃষ্টি ও বজ্রপাত হলে নদীতে পাহাড়ি ঢলের শ্রোত নেমে আসলে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাইস মাছ ডিম ছাড়ে। হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার পর রাউজান ও হাটাহাজারী এলাকার ডিম সংগ্রহকারীরা নদী থেকে নৌকা ও জাল দিয়ে ডিম সংগ্রহ করে। ডিম সংগ্রহকারীরা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করার পর নদীর তীরে খনন করা মাটির কুয়ায় ডিম রেখে ডিম থেকে রেণু ফুটানের কাজ করে। ডিম থেকে রেণু ফুটানোর পর চট্টগ্রাম জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মৎস খামারী, মাছ চাষিরা রেণু ক্রয় করে নিয়ে যায়। মৎস খামারীরা ও মাছ চাষিরা পুকুর, জলাশয়, মৎস প্রকল্পের পানিতে হালদার রেনু ফেলে মাছ চাষ করে। হালদা নদীর মা মাছের ডিম থেকে উৎপাদিত রেণু থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার মাছ উৎপাদন করা হয়।
হালদা নদীর রেণু থেকে মাছ চাষি, মৎস খামারীরা তাদের পুকুর জলাশয়, মৎস প্রকল্পে মাছের চাষ করার পর মাছ বিক্রয় করে লাভবান হয় বেশী।
হালদা নদীর মা মাছ ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুম চলছে। মা মাছ ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুমে নদীতে মা মাছ কবে ডিম ছাড়বে নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করার জন্য রাউজান ও হাটাহাজারী অর্ধ সহ¯্রাধিক ডিম সংগ্রহকারীরা প্রতিক্ষর প্রহর গুনছেন।
ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা ও জাল নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে। অনেক ডিম সংগ্রহকারী হালদা নদীর তীরে মাটির কুয়া খনন করে ডিম ফুটানোর জন্য তৈয়ার করে রেখেছে। হালদা নদীর মা মাছ ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুমে রাউজানের মোবারকখীল পাকা হ্যাচারীটি ও মেরামত কাজ করে সচল করা হয়েছে বলে রাউজান উপজেলা মৎস অফিসের ফিল্ড অফিসার পিযুষ প্রভাকর জানান।
হালদা নদীর মা মাছের প্রজনন রক্ষায় হালদা নদীর নাজির হাট থেকে কালুর ঘাট হালদা নদীর মোহনা পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নদীতে সারা বৎসর মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমে হালদা নদীর সাথে সংযুক্ত খাল তেলপারই, সর্তা, কাগতিয়া, সোনাইর খাল, মগদাই, কাঠালভাঙ্গা, বইজ্যাখালী, বুড়ি সর্তা, হাটহাজারীর বোয়ালিয়া, খন্দকিয়া, পোড়ালী, মাদারী খালসহ সকল খালে ছয়মাস মা মাছ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়।
হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমে সকল যান্ত্রিক নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হালদা নদীর বিভিন্ন এলাকায় বড়শী, হাত জাল, ঘের জাল দিয়ে চলছে মাছ শিকার। হালদা নদীর মা মাছ রক্ষায় হালদা নদীর বালু মহল ইজারা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বন্ধ করে দিলেও রাতে হালদা নদীর বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার ও পাওয়ার পাম্প বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে।
নদী থেকে উত্তোলন করা বালু যান্ত্রিক নৌযান ভর্তি করে রাতে হালদা নদী দিয়ে চলাচল করছে। হালদা নদীর তীরে রাউজানের পশ্চিম আবুর খীল, মোকামী পাড়া, নগরীর মোহরা এলাকায় গড়ে উঠা ইটের ভাটায় যান্ত্রিক নৌযান দিয়ে ইট পরিবহন, জ¦ালানী কাঠ পরিবহন করছে।
হালদা নদী ও কর্ণফুলী নদীতে জেগে উঠা হালদার চর ও ছায়ার চর থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি খনন করছে। জেগে উঠা চর থেকে ড্রেজার দিয়ে খাটা মাটি যান্ত্রিক নৌযান দিয়ে হালদা নদী দিয়ে ইটের ভাটায় ও বিভিন্ন এলাকার জায়গা ভরাট কাজে বিক্রয় করছে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
নদীতে মাছ শিকার ও যান্ত্রিক নৌযান চলাচলের ফলে হালদা নদী মা মাছসহ জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। যান্ত্রিক নৌযান ও ড্রেজার চলাচলের ফলে ড্রেজার ও যান্ত্রিক নৌযানের ইঞ্জিনের আঘাতে হালদা নদীতে ডলফিনসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মারা যায়। যান্ত্রিক নৌযান ও ড্রেজার চলাচলের ফলে ড্রেজার ও যান্ত্রিক নৌযানের ইঞ্জিনের আঘাতে হালদা নদীতে ডলফিন সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মারা যাওয়ার পর নদী পরিদর্শন করে বিশেষজ্ঞরা রিপোর্ট দেয় মন্ত্রণালয়ে।
রাউজান উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা ডেইরী ফার্ম, পোল্টি ফার্ম, কারখানা. ও হাটহাজারী উপজেলা নগরীর মোহরায় গড়ে উঠা কলকরাখানা, ডেইরী, ফার্ম, পোল্টি ফার্ম, ইটের ভাটার বিষাক্ত বর্জ্য হালদা নদীর সাথে সংযুক্ত খালে ফেলা হয়। হালদা নদীর সাথে সংযুক্ত খালের পানি দিয়ে বিষাক্ত বর্জ্য হালদা নদীর পানির সাথে মিলিত হয়ে হালদা নদীর পানি দূষণ হওয়ায় হালদা নদীর মা মাছের প্রজনন হুমকির মুখে পড়েছে বলে সরেজমিনে পরিদর্শন কালে হালদা তীরের বাসিন্দারা জানান। হালদা নদী রক্ষায় সভা সেমিনার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে ও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।
রাঘব বোয়ালেরা হালদা নদী থেকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু উত্তোলন করছে। বালু উত্তোলনাকারী রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কখনো। রাউজান-হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে হালদা নদীতে অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলন করার সময়ে বালু উত্তোলন কাজে রাঘব বোয়ালদের নিয়োগ করা দিনমজুরদের ধরে জরিমানা আদায় ও দন্ড প্রদান করলেও বালু উত্তোলনকারী রাঘব বোয়ালেরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
রাউজান পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও হালদা নদী সুরক্ষা কমিটির আহবায়ক মো. আলমগীর আলী বলেন, হালদা নদীর তীরে ও হালদা নদীর সাথে সংযুক্ত খালের তীরে গড়ে উঠা ইঁট ভাটার বিষাক্ত বজ্য, ডেইরি ফার্ম, পোল্ট্রি ফার্মের বিষাক্ত বর্জ্য হালদা নদীতে এসে হালদা নদীর পানি দুষিত হয়ে মা মাছের প্রজ প্রজননের জন্য হুমকি হয়ে পড়েছে।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার জোনায়েদ কবির সোহাগ সাংবাদিকদের বলেন, কয়েকটি গ্রাম চলে গেলে ও গ্রাম তৈয়ার করা যাবে। হালদা নদীর মা মাছের প্রজনন ক্ষতি হলে, তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। হালদা নদীর মা মাছ রক্ষায় রাউজান ও হাটাজারী উপজেলা প্রশাসন নদীতে অভিযান পরিচালনা করে মাছ শিকার করার সময়ে বিপুল পরিমাণ জাল উদ্ধার করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে ব্যস্ত থাকায় হালদা নদীতে অভিযান করা হয়নি গত ১৫ দিন ধরে। করেনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শেষ হলে হালদা নদীতে মা মাছ রক্ষায় জোরালো অভিযান পরিচালনা করা হবে।