হালদায় আবারও মরে ভেসে উঠল ৯ কেজির কাতলা মাছ

59

বিশ্বের অন্যতম মিঠা পানির কার্প জাতীয় মা মাছের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদী শুধুই একটি নদী নয়, এটি একটি রুপালি সম্পদের খনি। কিন্তু বর্তমানে হুমকির মুখে হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য তথা মৎস্যকূল। মা মাছের অবাধ বিচরণস্থল হালদা নদীর কোথাও না কোথাও মরে ভেসে উঠছে মা মাছ।
গতকাল বুধবার (২১ অক্টোবর) ভোর ৬টার দিকে হালদা নদীর কেড়াণতলীর বাঁকের মনু মেম্বারের টেক এলাকায় ফের ৯ কেজি ওজনের একটি পচা কাতলা মাছ ভেসে উঠেছে। খবর পেয়ে সকালে আইডিএফ হালদা প্রকল্পে কর্মরতদের সহযোগিতায় মাছটি উদ্ধার করা হয় বলে জানান হাটহাজারী উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা।
তিনি বলেন, মৃত মাছটি উদ্ধার করে আইডিএফ কর্মীরা হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা নয়াহাটে নিয়ে আসেন। মাছটির দৈর্ঘ্য ৩৪ ইঞ্চি ও প্রস্থ ১১ ইঞ্চি। ধারণা করছি, দুই-একদিন আগেই মাছটির মৃত্যু হয়েছে। মাছটির পেটে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাছটি অতিরিক্ত ফুলে গন্ধ বের হওয়ায় সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। তাই নদীর পাড়েই মাটি চাপা দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া আঘাতজনিত কারণে কাতলা মাছটির মুত্যু হয়েছে বলে জানান। তবে কিসের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে তা নিশ্চিত করে তিনি বলতে পারেননি।
মৎস্য সংরক্ষণ আইন-১৯৫০ অনুসারে, হালদা নদীর নাজিরহাট সেতু থেকে কর্ণফুলীর কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায় সারা বছর মাছ ধরা নিষেধ। এছাড়া প্রতি বছরের মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রজনন মৌসুমে এ নদীতে যে কোনো ধরনের ইঞ্জিনচালিত জলযান চলাচলে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
সরেজমিনে দেখা যায়, এ নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ হলেও তা মানছেন না অনেকেই। দিনের বেলা থেকে শুরু করে গভীর রাতেও মৎস্যলোভীরা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে হাতজাল, বড়শি, ঘেরাজাল, ভাসাজাল ও কারেন্টজাল দিয়ে প্রতিদিনই মাছ নিধন করছে। মাঝে মাঝে চলছে বালু উত্তোলন ও বিভিন্ন পণ্যবাহী ইঞ্জিনচালিত জলযানও।
অবশ্য হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন আইডিএফের সহযোগিতায় গত দুই বছরে হালদা নদীতে শত শত অভিযান পরিচালনা করেছেন। অভিযানে প্রায় কয়েক লাখ মিটার জাল, বালু উত্তোলনের ড্রেজার ও হাজার হাজার ঘনফুট বালু জব্দ করেছেন। অবৈধভাবে মাছ ধরার অপরাধে কয়েকজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারান্ডও প্রদান করেছেন।
এদিকে হালদা প্রকল্প থাকাকালে ৮জন আনসার সদস্য নদীর মৎস্য নিধন বন্ধে দায়িত্ব পালন করলেও এখন রয়েছেন মাত্র দুই জন। তাছাড়া পর্যাপ্ত সাপোর্ট ও জলযানের অভাবসহ নানা কারণে মাছ চোরদের নিয়ন্ত্রণ তথা মাছ শিকার থেকে বিরত রাখতে এবং তাদের ধরতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্তাদের বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে।
চলতি বছরে ৭ আগস্টেও হালদা নদীর উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের আমতলী বাজারের পশ্চিম অংশ থেকে ১৭ কেজি ওজনের একটি মা-মাছ (কাতলা) উদ্ধার করা হয়েছিল। মাছটি অতিরিক্ত ফুলে ও গন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংরক্ষণ করা সম্ভব না হওয়ায় নদীর পাড়েই মাটি চাপা দেয়া হয়েছিল।