হার্ডড্রাইভে ভিন্ন ভিন্ন রঙের স্টিকার কিন্তু কেন ?

113

হার্ডড্রাইভ বা ডিস্ক-কম্পিউটারের এই হার্ডওয়্যারটি আমরা সকলেই চিনি। অন্যান্য হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি কম্পিউটারের কাজের গতি নির্ভর করে এই হার্ডড্রাইভের ওপর। বাজারে অনেক ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ক্যাটাগরির হার্ডড্রাইভ পাওয়া যায়। আপনি যদি আপনার কাজের জন্য সঠিক ডিস্কটি নিবার্চন করতে না পারেন তাহলে কম্পিউটারটির আশানুরুপ ফলাফল পাবেন না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় একটি সার্ভারের জন্য আপনি যদি ডেস্কটপ পিসির হার্ডড্রাইভ লাগান তাহলে সঠিক পারফরমেন্স তো পাওয়া যাবেই না তার ওপর আবার ডাটা লস হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তেমনি ডেস্কটপ পিসিতে যদি সার্ভারের উপযোগী হার্ডড্রাইভ ব্যবহার করেন তাহলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। সার্ভার, ডেস্কটপ, সিসিটিভি এই রকম প্রত্যেকটি কাজের উপযোগী আলাদা আলাদা ধরনের হার্ডড্রাইভ আছে। সঠিক ড্রাইভটি চেনা খুবই জরুরি কিন্তু কীভাবে চিনবেন?
আমার এই লিখাটি পড়লে হার্ডড্রাইভ সম্পর্কে আপনার ধারণা সহজেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ হার্ডডিস্ক নির্মাতা হলো ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল কর্পোরেশন যাকে সংক্ষেপে বলা হয় ডবিøউডি। হার্ডডিস্ক উৎপাদনে এর অবস্থান প্রথম সারির দিকে। এ প্রতিষ্ঠানটি কাজের ধরন অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হার্ডড্রাইভ তৈরি করে থাকে যা ডিস্কের গায়ে বিভিন্ন রঙের স্টিকার লাগিয়ে শনাক্ত করা হয়। আপনি এই রঙের রহস্য জানলেই সঠিক হার্ডড্রাইভটি নির্বাচন করতে পারবেন।
বর্তমানে নীল, সবুজ, কালো, লাল, বেগুনি ও সোনালী (এন্টারপ্রাইজ গ্রেড) এই ছয় রঙের হার্ডডিস্ক আছে।
নীল: ডেস্কটপ পিসিতে ব্যবহার উপযোগী এটি। সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য এটি অলরাউন্ডার। আপনি যদি কম্পিউটারে সাধারণ কাজ করেন তাহলে এটি আপনার জন্য শ্রেষ্ঠ হার্ডড্রাইভ। এটি ৫৪০০-৭২০০ আরপিএম-এর হয়ে থাকে। তবে আপনি সবসময় ৭২০০ আরপিএম-এরটিই বেছে নিবেন। এটি কম গরম হয় এবং শব্দ কম করে এবং এর দামও সাধ্যের মধ্যে থাকে। এ ধরনের হার্ডড্রাইভ ২৫০ জিবি থেকে ৬ টেরাবাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
সবুজ: এটি আর নীল এই দুইয়ের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই তবে সবুজটি নীলটি অপেক্ষা কিছুটা শক্তিশালী।
কালো: আপনি যদি হার্ডড্রাইভের সবোর্”চ পারফরম্যান্স পেতে চান তাহলে আপনার জন্য কালো রঙের ড্রাইভটি ভালো হবে। যারা গ্রাফিক্সের কাজ করেন অথবা হাই লেভেলের গেম খেলেন তাদের কাজের উপযোগী এটি। এটি ১ টেরাবাইট থেকে ৬ টেরাবাইট পর্যন্ত ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে থাকে। এর ক্যাশ সাইজ ১২৮ এমবি এবং এটি সবসময় ৭২০০ আরপিএম-এরই হয়ে থাকে।
লাল: এটি মূলত এনএএস(নেটওয়ার্ক অ্যাটাচড স্টোরেজ)-এর জন্য বানানো যেটি ৭ দিনের ২৪ ঘণ্টা অবিচ্ছিন্ন কাজ করতে পারে। এতে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডাটা সংরক্ষিত হয় যেখানে অনেক ব্যবহারকারী একই সাথে ডাটাতে এক্সেস করতে পারে। অন্য মডেলের হার্ডড্রাইভগুলো এ ধরনের সাপোর্ট দিতে পারে না। এর ক্যাপাসিটি ৭৫০ জিবি থেকে ৮ টেরাবাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটি সার্ভারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আরএআইডি সমর্থন করে। ডবিøউডি রেড-এর দু’টি সংস্করণ আছে-প্রো এবং স্ট্যান্ডার্ড।
বেগুনি: আপনার যদি কোনো ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইস থাকে যেমন সিসিটিভি মনিটরিং সিস্টেম তাহলে তার জন্য শ্রেষ্ঠ সলিউশন হলো এই বেগুনি রঙের হার্ডড্রাইভ। এটি ৭/২৪ ঘণ্টা ক্রমাগত কাজ করতে পারে এবং দ্রæত রিড ও রাইট করতে পারে। এই ড্রাইভগুলোতে অলফ্রেম নামে একটি প্রযুক্তি রয়েছে যা ভিডিওগুলো সংরক্ষণে ত্রæটিগুলো হ্রাস করে। এটি ৫০০ গিগাবাইট থেকে ৮ টেরাবাইট পর্যন্ত ধারণক্ষমতার হয়ে থাকে। অন্যান্য হার্ডড্রাইভের তুলনায় এর লাইফ টাইমও বেশি।
গোল্ড: এন্টারপ্রাইজ সলিউশনের এ হার্ডড্রাইভটির মূল ব্যবহার হলো ডাটা সেন্টারে। এটি অনেক দামী এবং শক্তিশালী। এটি সার্ভারে ব্যবহার করলে নিঃসন্দেহে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে। এর ক্যাপাসিটি ১ টেরাবাইট থেকে ১৪ টেরাবাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
আশা করি ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল হার্ডড্রাইভের রঙের রহস্য বুঝতে পেরেছেন। আপনি যদি একজন সাধারণ ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য নীল বা সবুজ রঙের ডবিøউডি হার্ডড্রাইভই যথেষ্ট।