হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর রসের ঐতিহ্য

106

ফটিকছড়ির মাঠে ঘাটে ঐতিহ্যবাহী গ্রামবাংলার খেজুর গাছ এক সময় দেখা গেলেও কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে। অনেকটা বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছ। ফলে খেজুর রসের সংকটের কারনে নতুন প্রজন্ম চিনছেনা খেজুর রস। জানা যায়, বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক মধু বৃক্ষ খেজুর গাছ। শীতে গ্রামীণ জীবনের প্রাত্যহিক উৎসব শুরু হয় এ গাছকে ঘিরে। কিন্তু কালের পরিবর্তনে বিগত এক থেকে দেড় দশকের মধ্যে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামবাংলার মধুবৃক্ষ খেজুর গাছ। এ বৃক্ষ হারিয়ে যাওয়ার ফলে দেখা দিয়েছে খেজুর রসের ব্যাপক সংকট। যার ফলে গাছ কাটা গাছিরা আর আগের মত তেমন করে খেজুর গাছ কাটছে না। আর এ কারণেই নতুন প্রজন্ম চিনছেনা খেজুর রস বা রস দিয়ে তৈরি রসালো নানান মুখরুচি খাবার খাওয়ার মজা। আজ থেকে ১৫ বছর পূর্বেও দেখা গেছে, এলাকার গাছিরা গাছ কেটে গাছে মাটির তৈরি হাড়ি বসিয়ে রস সংগ্রহ করে তা দিয়ে জালিয়ে গুড় বা পাটালি তৈরি করত। সাধারণ জনতা ও লাইনে দাঁড়িয়ে নতুন খেজুর পাটালি সংগ্রহের জন্য এমনকি কেউ কেউ আগের থেকেই গাছিকে নতুন পাটালির জন্য অগ্রিম টাকা দিয়ে অর্ডার দিয়ে রাখতো। গাছিরাও এ সময় রস, গুড় ও পাটালি বিক্রি করে প্রচুর টাকা রোজগার করতো। গ্রামের লোকজনেরা এ নতুন পাটালি ক্রয় করে শীতের বিভিন্ন পিঠা, পায়েশ তৈরি করে উৎসব পালন করেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই কেউ-কেউ আবার টাটকা রস খাওয়ার জন্য দৌঁড়াতো গাছির বাড়ি অথবা দাঁড়িয়ে থাকতো গাছের নিকট কখন গাছ থেকে রস নামাবে গাছি আর ঠিক তখনই খাবে টাটকা খেজুর রস। সেইদৃশ্য গুলো এখন সচরাচর চোখে না পড়লেও উপজেলার হারুয়ালছড়ি, কাঞ্চননগর, নানুপুরের খিরাম, খিফায়তনগর, উত্তর ফটিকছড়ির বাগানবাজার, দাঁতমারা, নারয়ানহাট, সুয়াবিলের শুভনছড়ি-সহ পাহাড়ী টিলা এলাকায় খেজুর গাছ দেখা গেছে। তবে তার সংখ্যা আগের তুলনায় একেবারেই কম। এলাকায় ইটের ভাটার পরিমান বেড়ে গেছে। ইটের ভাটার কাজে খেজুর গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের ফলে ক্রমান্বয়েই কমতে শুরু করেছে খেজুর গাছ এমনটি মনে করছেন এলাকাবাসী। উপজেলার মধ্যম খিরাম বাদামতলি এলাকায় গিলে কথা হয় আলতাফ (৫০) নামের এক গাছির সাথে। তিনি জানান, এক সময় গাছ কেটে, রস সংগ্রহ পর বিক্রি করে ভাল টাকা আয় হত এখন আর তেমন বেশি হয় না।
আগের মত গাছ নেই। শুধু মাত্র ৫টি গাছ থেকে প্রতিদিন ৪-৫ কেজি মত রস পেয়ে থাকেন। তা প্রতি কেজি ৬০টাকা করে বিক্রি করে। এলাকার সচেতন মানুষরা মনে করছেন একযোগে খেজুর চারারোপণ করা হলে দেশে আবারও আগেরমত খেজুর রস পেত এবং পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষাসহ ঐতিহ্য ফিরে আসত।