হামলাকারী জাহরান হাশিমের ১৮ স্বজন নিহত!

28

শ্রীলঙ্কার আত্মঘাতী সিরিজ বোমা হামলার মূল হোতা জাহরান হাশিমের ১৮ স্বজনের কোনও খোঁজ মিলছে না বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জাহরান হাশিমের এক বোনের সঙ্গে কথা বলেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। তার আশঙ্কা, ভয়াবহ ওই হামলা এবং এরপর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে তার এই স্বজনরা নিহত হয়েছেন। জাহরান হাশিমের এই বোনের নাম মোহাম্মদ হাশিম মাথানিয়া। থানায় তিনিই হাশিমের ছিন্নভিন্ন মরদেহ শনাক্ত করেন। শনিবার সিএনএন-কে তিনি জানান, নিখোঁজ ১৮ জনের মধ্যে পাঁচ জন রবিবারের সিরিজ বিস্ফোরণের দিন থেকে নিখোঁজ রয়েছেন।
তাদের মধ্যে মাথানিয়ার বাবা, তিন ভাই ও তার ভগ্নিপতিও রয়েছেন। মাথানিয়া জানান, জাহরান হাশিমের স্ত্রী ও কন্যা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছ, জাহরান হাশিমের বাবা ও দুই ভাই নিরাপত্তা বাহিনীর এক অভিযানে নিহত হয়েছে। ২৬ এপ্রিল নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ১৫ জনের মধ্যে এ তিন ব্যক্তিও রয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
২১ এপ্রিল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ইস্টার সানডে উদযাপনকালে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো ও তার আশপাশের তিনটি গির্জা এবং তিনটি হোটেলসহ আটটি স্থানে সিরিজ বোমা হামলা চালানো হয়। দেশটির সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৫৩ জন। ওই হামলার সন্দেহভাজন মূলহোতা জাহরান হাশিম মোহাম্মদ। তাওহিদ জামাত বা এনটিজে নামে পরিচিত স্থানীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা সে। শ্রীলঙ্কা সরকারের সন্দেহ, তার পরিকল্পনা অনুযায়ী এনটিজে’ই রবিবারের সিরিজ হামলা চালিয়েছে। আইএস’র পক্ষ থেকেও দাবি করা হয়েছে, বাগদাদির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে হাশিমের পরিকল্পনা মাফিক ওই হামলা হয়েছে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ইস্টার সানডে’তে হোটেল সাংগ্রি-লাতে যে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ হয়েছে তাতে জাহরান হাশিম মারা গেছে।
২৬ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার পূর্ব উপকূলে সন্দেহভাজনদের গোপন আস্তানা সন্দেহে তল্লাশি অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। সে সময় এক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১৫ জন নিহত হয়। পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে তিনজনকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে। ওই ভিডিওতে দুই ভাই জাইনি হাশিম, রিলওয়ান হাশিম ও তাদের বাবা মোহাম্মদ হাশিমকে অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে দেখা যায়। তবে তা কোন সময়ে ধারণ করা তা জানা যায়নি। ভিডিওতে রিলওয়ান হাশিম সর্বত্র ‘জিহাদ’ অথবা ‘পবিত্র যুদ্ধ’র ডাক দিয়েছেন। আর পর্দার আড়াল থেকে শিশুদের কান্নার শব্দ শোনা গেছে সেখানে। শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বিস্ফোরণের মূল হোতা জাহরান হাশিমের ভগ্নিপতি নিয়াজ শরিফ রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ওই তিন ব্যক্তি হাশিমের বাবা ও ভাই।

ভিডিওতে ভাই ও বাবার পাশে বসে থাকা রিলওয়ান বলেন, ‘এ ভূমির সুরক্ষায় এসব অবিশ্বাসীকে আমরা ধ্বংস করবো। এর জন্য আমাদের জিহাদ করতে হবে। যে অবিশ্বাসীরা মুসলিমদের ধ্বংস করে দিচ্ছে, তাদের উচিত শিক্ষা দিতে হবে আমাদের।’ উল্লেখ্য, ২১ এপ্রিলের ওই সিরিজ বিস্ফোরণের পর থেকে শ্রীলঙ্কায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রয়েছে। দেশজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার সেনা সদস্য। হামলায় জড়িত থাকা সন্দেহে স্থানীয় দু’টি উগ্রপন্থী ইসলামি সংগঠনের সদস্যদের আটক করতে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে তারা। এরইমধ্যে সিরিয়া ও মিসরের নাগরিকসহ শতাধিক মানুষকে আটক করেছেন শ্রীলঙ্কা কর্তৃপক্ষ।