‘হাতির মাথা’ ‘স্বর্গের সিঁড়ি’ পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা

234

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পেরাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্গত দূর্গম এলাকা মায়ুং কপাল পাড়া। এটি ত্রিপুরা অধ্যুষিত এলাকা। প্রাকৃতিকভাবে হাতির অবয়বে পাহাড়ের গঠন হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে এই জায়গা ‘হাতির মাথা’ হিসেবে পরিচিত। অনেক উঁচুতে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় বলে অনেকে এটিকে ‘স্বর্গের সিঁড়ি’ও বলছেন।
হাতির মাথার চূড়া থেকে খাগড়াছড়ির সুউচ্চ পাহাড় সারির সৌন্দর্য বেশ উপভোগ্য। পাহাড়ের চূড়ায় উঠলে পাখির চোখে দেখা যায় খাগড়াছড়ি শহর। এখানে শীতল হাওয়া ও পাখির কলতান উপভোগ করেন পর্যটকরা। ফলে দিনে দিনে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে এই এলাকা। প্রাকৃতিকভাবে আকর্ষণীয় হাতির মাথা ও চলাচলের জন্য বানানো স্বর্গের সিঁড়িকে খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটে নতুন সংযোজন হিসেবে দেখছে জেলা প্রশাসন। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
পায়ে হেঁটে যাওয়া ছাড়া হাতির মাথায় আর কোনো পথ নেই। খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কের পেরাছড়া থেকে চেঙ্গী নদী পেরিয়ে দেড়-দু’ঘণ্টা হেঁটে যাওয়ার পর উঁচু-উঁচু পাহাড়। এগুলোর একটির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে সিঁড়ি। স্থানীয়দের চলাচলের জন্য ২০১৫ সালে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে সিঁড়ি স্থাপন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। খাড়া পাহাড় বেয়ে ওঠা নান্দনিক সিঁড়ি স্থানীয়দের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। প্রায় দুইশ’ সিঁড়ির ধাপ পেরিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে হয়।
পাহাড়িদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা হাতির মাথায় বেড়াতে আসেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জানতে পেরে এসেছেন ঢাকার বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ের উঁচু-নিচু পথ পেরিয়ে এখানে ঘুরতে এসে মুগ্ধ হয়েছি। খাগড়াছড়িতে দুর্গম হাতির মাথা বা স্বর্গের সিঁড়ি না দেখলে ভ্রমণটা অপূর্ণ থেকে যেতো’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফারিয়া আলম বলেন, ‘হাতির মাথা এলাকায় ঘুরতে এসে নদী, পাহাড়ি পথে সবুজের সমারোহ, বিভিন্ন বন্যফুল, আকাশ ও মেঘ আর ত্রিপুরা উপজাতিদের জীবন, সংস্কৃতি উপভোগ করা যায়’।
সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে পরিকল্পনামাফিক স্থাপনা তৈরি করলে হাতির মাথা খাগড়াছড়ির আরেকটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে মনে করেন ভ্রমণপ্রেমীরা। তাদেরই একজন কুমিল্লার আদনান হোসেন। তার মন্তব্য, ‘হাতির মাথা যাওয়ার রাস্তা, চলাচলের যানবাহন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গাইডসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকলে পর্যটক সমাগম আরও বাড়বে’।
স্থানীয় পেরাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তপন বিকাশ চাকমা বলেন, ‘হাতির মাথা নতুন পর্যটন এলাকায় পরিণত হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে পর্যটকদের জন্য একটি যাত্রী ছাউনি, বসার জায়গা ও টি-স্টলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া গাইডও থাকবে’।
জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস খাগড়াছড়িতে নতুন যোগদান করেছেন। তিনি হাতির মাথা এলাকার কথা শুনেছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছে আছে তার। পর্যটন স্পট হিসেবে এলাকাটিকে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা থাকলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। তার কথায়, ‘খাগড়াছড়িকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আকর্ষণীয় স্থানগুলোকে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে’।