হাতির বড় কানের গল্প

81

আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে পৃথিবীটা ছিল বুনো জন্তুর দখলে। তখন পাহাড়গুলো এখনকার মতো ন্যাড়া ছিল না। বরং গাছপালা আর জীব-জন্তুতে পরিপূর্ণ ছিল।
একবার এক বনের পুঁচকে হাতি তার মায়ের কোনোই নিষেধ মানতো না। সেই পুঁচকে একবার এক কাকের সাথে কুমির রাতে কী খায় তা দেখতে যায়। সেই যাত্রায় সে কোনোরকমে জানে বেঁচে আসে। সে রাতে কুমির ওর নাক কামড়ে ধরেছিল। অনেক টানাটানি করে নাক ছাড়ালেও তা হয়ে যায় ভীষণ লম্বা। সেই পুঁচকে হাতিটাই আবারও বায়না ধরে নদীতে নেমে সাঁতার কেটে গোসল করবে।
পুঁচকে হলেও হাতির ছানারা বনের সিংহের চেয়েও আকারে বড় হয়। তাই সে কেন ভয় পাবে? তাছাড়া এবার তাঁর নাকের নাম বদলে শুঁড় হয়েছে। ওটাও ে বেশ কাজের বটে। যেকোনো প্রাণীকে পেঁচিয়ে ধরে ছুঁড়ে মারা যায়। তবে সে জানে না, জলের কুমিরের সাথে তাদের বড় ধরনের শত্রæতার কথা।
কুমিরেরা একসময় বনেই থাকতো। ওদের রাক্ষুসে স্বভাবের কারণে সব হাতি মিলে ওদেরকে জলে নামিয়ে দিয়েছে। বনের সিংহ, নদীর মাছ, উড়ে চলা পাখি, গাছের বানর থেকে শুরু করে সবাই জানে কুমিরেরা হল রাক্ষুসে আর ভীষণ দস্যু। তাই ওদের থেকে সবাই দূরেই থাকে। এমনকি সবাই ওদেরকে এড়িয়ে চলে। তবে সুযোগ পেলেই কুমির ডাঙায় ওঠে এসে ঘুমোয় আর ডিম পাড়ে। ওরা বড় প্রাণী হয়েও ডিম দেয় বলে বনের পশুরা খুব ঠাট্টা করে। এতসব জেদে কুমির বনের কোনো পশুকে নাগালে পেলেই ছিঁড়েখুঁড়ে খেয়ে ফেলে।
নাক কামড়ে দেওয়ার সেই ভয়াবহ ঘটনাকে ভুলে গিয়ে পুঁচকে হাতিটা সানন্দে জলে নেমে গেল। সে নদীতে নেমে মনের সুখে সাঁতার কাটছে। সে জানে না, এই নদীতে তাদের জাত শত্রূদের বসবাস। হাতিরা তো আর জলের নিচে কী আছে, তা দেখতেও পায় না। তাই সে নিরাপদ ভেবেই নদীতে নেমে শুঁড় উঁচিয়ে সাঁতারাতে লাগলো।
কুমির সেদিনের সেই ফসকে যাওয়া পিচ্চি হাতিটাকে দেখে আনন্দে নেচে উঠলো। হাতিটা পুঁচকে হলেও তার তো এত্তো মোটা পা! কুমির পায়ে কামড় দিতে গিয়ে চোঁয়াল অতো বড় করতে পারে না। এদিকে শুঁড়টাকেও ওদের ভীষণ ভয়। ওরা জানে যে ওটা শেকলের চেয়েও শক্ত। অন্যদিকে কুমির সর্দার তো সেই রাতের কথা ভুলতেই পারে না। সেদিন তাকে বেশ লজ্জাও পেতে হয়েছিল। সেই রাতে তাকে যে না খেয়েও থাকতে হয়। তাই এবার কুমির সর্দার তার তিন বন্ধুকে নিয়ে হাতির কান কামড়ে ধরলো। যেভাবেই হোক, এবার চিরশত্রূকে যে আটকাতেই হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী কুমিরেরা লাফ দিয়ে হাতির দুই কান কামড়ে ধরলো। এতে পুঁচকে হাতিটা দিশেহারা হয়ে গেল। সে এটাও জানে না যে, নদীতে কুমিরের দল শিকার ধরার আশায় লুকিয়ে থাকে।
কুমিরের কামড় খেয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় পুঁচকে হাতি ভীষণ দাপাদাপি শুরু করলো। এতে হাতির মোটা চামড়ার শক্ত কান বেড়ে যেতে লাগলো। তবুও কুমিরের মুখ থেকে কান দুটোকে ছাড়িয়ে নিতে পারছে। এতক্ষণে কান দুটো কুলোর মতো বড় হয়ে গেছে!
তবে হাতি বলে কথা। যাদের কি না অদম্য শক্তি। তাই কুমিরের কাছে কি হেরে যাবে? কখনোই তা হতে পারে না। এবার পুঁচকে হাতি তার শুঁড় দিয়ে একটা কুমিরের টুঁটি পেঁচিয়ে ধরলো। অমনি ওটা কাবু হয়ে গেল। আরেক কুমিরের পেটে গজারি গাছের মতো বিশাল শক্ত পা দিয়ে বসিয়ে দিল জোরসে এক লাথি। সঙ্গে সঙ্গে ওটার পেট ফেটে গেল! ভয়ে অন্য কুমিরেরা কান ছেড়ে দিয়ে পালালো।
নদী থেকে উঠে এসে পুঁচকে হাতির ভীষণ মন খারাপ হল। কুলোর মতো কান নিয়ে কেমন করে বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়াবে? এসব ভেবে সে ভীষণ ব্যথিত হয়ে কাঁদতে লাগলো।
তার কান্না শোনে স্রষ্টা এবারও তার
দৈববাণী ঘোষণা করলেন, ‘শৈানো হে পুঁচকে, মনখারাপ করো না। এই বড় কান দুটো তোমার জন্য আশীর্বাদ হয়ে গেল। এখন থেকে ওটা দুলিয়ে দুলিয়ে বাতাস খেতে পারবে। দেহ নাড়াচাড়া করতে গিয়ে শরীর গরম হয়ে গেলে কানের পেছনে বেরিয়ে আসা মোটা রগ কাজে লাগবে। বড় বড় সেসব রক্তনালীতে রক্ত সঞ্চালন হলে রক্ত শীতল হবে। এতে তোমার পুরো শরীর শীতল থাকবে। আর হ্যাঁ, এখন থেকে তোমার শুঁড়ের মতোই তোমাদের পরবর্তী প্রজন্মের সবাই লম্বা শুঁড় আর কুলোর মতো বড় কান নিয়ে জন্মাবে।’