হাটহাজারীর চারিয়ায় জোড় ইজতেমা শুরু আজ

98

ঢাকার বাইরে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলমী শূরার তাবলিগী সাথীদের জোড় ইজতেমা। আজ শুক্রবার ভোরে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরুর কথা রয়েছে। ইজতেমা উপলক্ষে তিনস্তরের নিরাপত্তা বলয় থাকবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
তাবলিগ জামাতের এ আয়োজনে উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া গ্রামে ৩ দিনব্যাপী (৬, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর) এ জোড় ইজতেমায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালী, ল²ীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার এবং সুনামগঞ্জসহ ১৫টি জেলার ১ চিল্লা, ৩ চিল্লা ও সাল দেয়া আলমী শূরার তাবলিগী সাথীরা অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া চট্টগ্রামের বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র ও সাধারণ মুসল্লিরা স্বতঃফূর্ত অংশগ্রহণ করছেন এতে।
জানা গেছে, বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে এবং হাটহাজারী উপজেলা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ইজতেমা মাঠের অবস্থান। প্রায় ৭০ একর খোলা জায়গা জুড়ে গত এক মাস ধরে স্বেচ্ছায় কাজ করে করেছেন শত শত স্থানীয় এলাকাবাসী ও মুসল্লিরা। ইজতেমা মাঠের সার্বিক প্রস্তুতি, দাওয়াত ও তাবলিগের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মূলত এ জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ব ইজতেমার সফলতার জন্য পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রায় ৭০ জন আমিরের নেতৃত্বে শুধুমাত্র আলেম-ওলামা ও তাবলিগে তিন চিল্লা সম্পন্নকারীরা এ জোড়ে অংশগ্রহণ করতে পারেন। প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মুসল্লির টানা ৩ দিন ইজতেমার মূল মাঠে অবস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে শুক্রবার ও রবিবার বেশি মুসল্লি অংশ নিতে পারেন বলে ধারণা করছেন আয়োজক কমিটির মূল সমন্বয়ক হাটহাজারী মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মুফতি জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ইজতেমার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এ ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সকরের সহযোগিতা কামনা করছি। ইজতেমায় মন্ত্রী, বিচারপতি, সাংসদ, সচিব ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ভিআইপি ও চিকিৎসক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ দেশি-বিদেশি অনেক অতিথি অংশ নেবে। ইতোমধ্যে সৌদি আরব, চীন, সুইডেন, ইন্দোনেশিয়া, জর্দান, মিশর, আলজেরিয়া, দুবাই, কাতারসহ বিভিন্ন দেশের মুসল্লিরা ইজতেমায় উপস্থিত হয়েছেন। এছাড়া বিশ্বের ৫০টি দেশ থেকে বিদেশি মেহমানরা আসতে শুরু করেছেন ইজতেমা ময়দানে।
এদিকে ইজতেমার মূল মাঠে অবস্থানের জন্য উত্তর-দক্ষিণের প্রায় ১২ লক্ষ বর্গফুট খোলা জায়গায় বিশালাকৃতির প্যান্ডেল নির্মাণ, থাকার উপযোগী করতে প্রায় ১ মাস ধরে রাতদিন স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়েছেন দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসা, চট্টগ্রামের নাজিরহাট, নানুপুর, বাবুনগর, চারিয়া, ফতেহপুর, মেখল, ইছাপুর ও চট্টগ্রামের হালিশহরসহ অসংখ্য মাদ্রাসার ছাত্ররা। তারা শামিয়ানা টানানো, স্টেজ নির্মাণ, টয়লেট নির্মাণ, মাটি কাটা, ধান কাটা, পাকা গোসলখানা নির্মাণ, নিচু ও কাঁদাযুক্ত মাটিতে বালু দিয়ে ভরাটকরণসহ সমস্ত কাজ স্বেচ্ছাশ্রমে করেছেন। তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত সাধারণ মুসল্লি ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে সরেজমিনে ইজতেমা মাঠে দেখা যায়, মাঠে শামিয়ানা টানানোর কাজ প্রায় শেষ। ইজতেমার মঞ্চ তৈরির শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। মাঠের পুকুরে বাঁশের মাচা তৈরি করে অজু ও গোসলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদেশি অতিথিদের ইজতেমায় অংশ নেয়ার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাতের মধ্যে টুকিটাকি কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ইজতেমায় যাতায়াতের জন্য শুধু একটি মহাসড়ক (চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি) রয়েছে। ওই সরু সড়ক দিয়ে লক্ষাধিক মুসল্লিকে চলাচলে হিমশিম খেতে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে ইজতেমা মাঠের কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন আলমী শুরার তাবলিগ জামাতের চট্টগ্রাম জিম্মাদার ও হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহাদ্দিস আল্লামা মুফতী জসিমুদ্দীন, হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন ও হাটহাজারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাসুদ আলম প্রমুখ।
ইজতেমার পাহারাদার ও জি¤আদার মেখল মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজি জানান, বিশাল এই ময়দানে ১৭টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। খিত্তায় প্রবেশের জন্য মাঠের চারদিক থেকে প্রবেশ পথ রয়েছে। বয়ান মঞ্চের পেছনে প্রবেশ পথের বাম পাশে রয়েছে মুরুব্বীদের কক্ষ, পরামর্শ কক্ষ ও বিদেশি মেহমানদের থাকার ব্যবস্থা। তাছাড়া মুসল্লিদের সুবিধার্থে ময়দানে বিশাল প্যান্ডেল, নিরাপদ স্যানিটেশনের জন্য শতাধিক ল্যাট্রিন, বিশুদ্ধ পানির জন্য ৪টি গভীর ও ২টি অগভীর নলকূপ, মাঠের মধ্যে ১৫টি পুকুর, ১৪টি পানির হাউজ, নিরাপদ পানির জন্য অস্থায়ী ভ্রাম্যমাণ ছোট-বড় ১৫টি পানির ট্যাংক বসানো হয়েছে। এছাড়া অযু-গোসলের জন্য বিশেষ সুবিধায় হালদা প্যারালাল খালের পাড়ে লম্বা ২ শতাধিক ফুটের একটি ঘাট রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিচালনায় অস্থায়ী মেডিকেল টিম এবং হাটহাজারী ফায়ার সার্ভিস টিম সার্বক্ষণিকভাবে সেখানে দায়িত্ব পালন করবে। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি তাবুতে ইজতেমা কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব ৫ হাজার পাহারাদার ও ২৫০ জন ট্রাফিক সদস্য থাকবে। তারা ইজতেমা মাঠ জুড়ে ও মহাসড়কে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করবেন।
ইজতেমা ময়দানে তিনস্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে হাটহাজারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাসুদ আলম বলেন, ইজতেমা উপলক্ষে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণই বড় চ্যালেঞ্জ। তবে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের স্বার্থে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে ইট, কাঠবাহী ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠে থাকতে দুই সহস্রাধিক পুলিশ। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ টিমসহ থাকবে মোবাইল টিম ও টহল টিম। তাছাড়া অর্ধশতাধিক স্পটে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ইজতেমার মাঠ নজরদারিতে রাখতে বেশ কয়েকটি স্পটে বসানো হয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির ব্যবস্থাও রয়েছে বলে জানা গেছে।