হাটহাজারীতে মৃত বিপন্ন মেছোবাঘের শাবক উদ্ধার

102

মেছোবাঘ। ইংরেজি নাম ফিশিং কেট। নামের সাথে বাঘ কথাটি থাকলেও, নাম শুনে মাছ তাদের জীবনধারণের প্রধান খাদ্য উপাদান মনে হতে পারে। তবে মাছ এদের মূল খাদ্য নয়। তাছাড়া মাছ শিকারি হিসেবে দক্ষও নয় তেমন। তাদের বৈজ্ঞানিক নাম ফেলিস ভিভেররিনা। কথিত আছে, এরা রাতে জলে লেজ ফেলে শব্দ করে এবং জলে প্রস্রাব করে। শব্দে ও প্রস্রাবের গন্ধে নাকি বড় মাছেরা খাবার ভেবে ছুটে আসে। তখন এরা মাছ ধরে ফেলে। এদের খাদ্য তালিকায় আছে ধেনো ইঁদুর, নির্বিষ সাপ, বুনো খরগোশ, পাখি, কাঁকড়া, কচ্ছপ, শিয়াল, কুকুর, বাছুর, ছাগল, হাঁস-মুরগি ইত্যাদি।
গতকাল রবিবার এমনি একটি মেছো বাঘের শাবক (বাচ্চা) এর সন্ধান মিলে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের আলাওয়াল দীঘি এলাকায়। তবে জীবিত নয় মৃত। সকাল সাড়ে ১১ টার দিক ওই এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, প্রায় ৮-১০ কেজি ওজনের ৩ ফুট দৈর্ঘ্যরে মৃত মেছো বাঘটির পায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাটহাজারী পৌরসভার ১১ মাইল এলাকার মো. সাজ্জাদ নামে এক যুবক আলাওয়াল দীঘি সংলগ্ন একটি ছড়ায় (খাল) মৃত ওই মেছো বাঘটি ফেলে দিতে দেখা গেছে।
মেছো বাঘ লোকালয়ে কেন- এ সম্পর্কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, এক সময় দেশজুড়েই ছিল এদের বিচরণ। তবে এখন প্রাকৃতিক বন বাদে অন্যত্র মেছো বাঘ মহাবিপন্ন। দেখা দিয়েছে মেছো বাঘের খাদ্যের অভাব। ফলে তারা মাঝেমাঝে খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে প্রবেশ করে। এ মেছো বাঘটি কয়েকটি কারণে লোকালয়ে আসতে পারে। প্রথমত এই প্রাণীর খাদ্য সংকট দিন দিন বড় আকার ধারণ করছে। দ্বিতীয়ত প্রাকৃতিক জলাভূমি যখন ছিল তখন এর আশেপাশে প্রচুর ঝোপঝাড় থাকত। দিনের বেলা মেছো বাঘগুলো এসব ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকত। তাদের মতে, এদের রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও জানান, মেছো বাঘ হয় দক্ষ শিকারি এবং তুখোড় লড়াকুও বটে। এদের শরীরে শক্তি প্রচন্ড। গাছে চড়তে ওস্তাদ। রাতে গাছে চড়ে বড় পাখিসহ ওদের ডিম-ছানা খায়। কাঠবিড়ালি, তক্ষক, এমনকি গাছখাটাশও শিকার করে। অন্য বাঘ সাধারণত শজারুকে না ঘাঁটালেও এরা শজারু শিকারে অতিশয় দক্ষ। লড়াইয়ে দেশি একজোড়া কুকুরও এদের সাথে পারবে না। মেছো বাঘ বছরে দু’বার বাচ্চা দেয়। বাচ্চা পোষা যায়।