হাটবাজারের শহর চট্টগ্রাম বিকল্প বাজার নির্মাণ করতে হবে

75

চট্টগ্রাম নগরীর সর্বত্রই এখন হাটবাজার। চকবাজার, রিয়াজুদ্দিন বাজার, কাজির দেউড়ি বাজার, বহদ্দারহাট বাজার, কর্ণফুলী বাজার কিংবা কর্নেলহাট বাজার, ফল্যাতলী বাজারের কথা বলছিনা। বলা হচ্ছে, চট্টগ্রামে এমন কোন মোড়, ফুটপাত, চত্বর, প্রশস্ত জায়গা বা সড়ক নেই যেখানে কাঁচাবাজার, মাছের বাজার, মাংসের বাজার কিংবা ফলমূল ও জুতোসেন্ডেলের বাজার বসছেনা। এ নিয়ে দৈনিক পূর্বদেশসহ চট্টগ্রামের দৈনিক সহযোগী সংবাদপত্রসমূহ অসংখ্য প্রতিবেদন ও ছবি প্রকাশ করেছে, ছাপানো হয়েছে সম্পাদকীয়ও, কিন্তু করো আঁতে ঘা লাগেনি। কয়েকদিন সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশি তৎপরতা লক্ষ করা গেলেও পরক্ষণে যে লাউ সেই কদু-তে থেকে যায়। গতকাল বুধবার দৈনিক পূর্বদেশে নগরীর প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী চকবাজারের জনদুর্ভোগ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়েই বুঝা যাবে নগরীর মানুষ সড়ক, ফুটপাতের বাজার নিয়ে কি যন্ত্রণায় দিন কাটছে। চকাবাজরের মূল যে বাজার তা সড়ক ও ফুটপাত থেকে অনেক ভেতরে হলেও এ বাজারকে কেন্দ্র করে মূল সড়ক ও ফুটপাতজুড়ে বসেপড়ে ভাসমান হকার। যাতে সাধারণ নাগরিক বিশেষ করে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও যানবাহন চলাচলে দারুণ বিঘœ ঘটে। এতদএলাকার মানুষের স্বাভাবিক জীবনে নাভিশ্বাস ঘটে। একই অবস্থা রিয়াজ উদ্দিন বাজারেও। এ এলাকাটির স্টেশন রোড সাইডটির বড় অংশই হকার, গাড়ি ও রিকশার দখলে থাকে। স্টেশন রোড থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত যেতে একটি গাড়ির গতি একেবারে শ্লথ হয়ে পড়ে। নগরীর বাজারের এ দৃশ্য নিয়ে একই দিনে দৈনিক পূর্বদেশের সম্পাদকীয় পাতায় বিশিষ্ট কলামিস্ট, সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদলের ‘পুরো নগর হাটবাজার’ বিষয়ে একটি কলাম প্রকাশিত হয় দৈনিক পূর্বদেশে। বছর খানেক আগে দৈনিক পূর্বদেশে প্রকৌশলী আলী আশরাফ এর ‘কিচেন মার্কেট’ নামে একটি কলাম পূর্বদেশে ছাপানো হয়। প্রতিবেদন ও উপ-সম্পাদকীয় কলামগুলোর বক্তব্য প্রায় অভিন্নই বলা যায়। বাজার যদি মানুষের জন্যই হয়, সেই মানুষের দুর্ভোগ বাড়ায় যে বাজার তার প্রয়োজন কিসের? এ দূর্ভোগ হাটা-চলার, এ দুর্ভোগ যানবাহন চলার, এ দুর্ভোগ সময় অপচয়ের আর পরিবেশ বিপর্যয়ের। নগর কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রভাবশালী নেতৃত্বের দায়িত্বে পড়ে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া। বিশেষকরে, নাগরিকদের অধিকারের মধ্যে পড়ে মুক্ত পরিবেশ ও মুক্ত পথে হাঁটাচলা করা। কিন্তু যত্রতত্র বাজার ও হকারদের দৌরাত্ম্যে সেই অধিকার দলিতমতিত আজ। নগরবাসির বাজার প্রয়োজন কিন্তু স্বাভাবিক জীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে-এমন বাজারের প্রয়োজন নেই। এ জন্য নগর কর্তৃপক্ষ ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের উচিৎ এসব বাজার উচ্ছেদে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। তবে উচ্ছেদ করার পাশাপশি নগরীতে বাজারের সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। এ কথাটি প্রায় একবছর আগে প্রকৌশলী ও নগরচিন্তক আলী আশরাফ তাঁর একটি কলামে বলেছেন। দেখা যায়, দীর্ঘ পঞ্চাশ থেকে একশত বছর আগে নগরীতে যে বাজারগুলো গড়ে উঠেছিল এরপর নতুন কোন বাজার সৃষ্টি করেনি সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু বাজারের গ্রাহক বেড়েছে, তার মানে নাগরিক বেড়েছে। সুতরাং সিটি কর্পোশেনের উচিৎ জনসংখ্যা অনুপাতে কিচেন মার্কেট নির্মাণ করা। এরফলে ফুটপাত বা সড়কে যারা ভাসমান ব্যবসা করছেন তাদের স্থায়ী একটি ব্যবসার সুযোগ হবে, অপরদিকে সিটি কর্পোরেশন বা সরকারের বড় অঙ্কের একটি রাজস্ব আয় হবে। বর্তমান যত্রতত্র বাজারে কিছু চাঁদাবাজ, মাস্তান এবং কিছু অসাধু পুলিশ লাভবান হচ্ছে মাত্র।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, নগরে মানুষ বাড়ছে, সেই অনুপাতে নিত্যপণ্যের চাহিদাও বাড়ছে। একইসাথে মানুষের কর্মব্যস্ততা বাড়ছে, গড়ি ধরে জীবনের গতি পাল্টাচ্ছে। সময় নেই, নিঃশ্বাস ফেলার জো নেই। এরমধ্যে প্রতিদিন বড় বাজারগুলোতে গিয়ে বাজার করে রসনা ভোজন করা! মোটেই সম্ভব নয়। ফলে সময়, পরিবেশ ও চাহিদাকে পুঁজি করে গড়ে উঠেছে যত্রতত্র হাটবাজার। একটি সুশৃঙ্খলও আধুনিক নগরে এমন বিশৃঙ্খলাপূর্ণ ও জনদুর্ভোগসম্পন্ন বাজার ব্যবস্থানা কল্পনা করা যায় না। কামরুল হাসান বাদল তার কলামে লিখেছেন পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতেও ফুটপাতে হকার বসে। অনেক ভালো ভালো খাবারের দোকান ফুটপাতে আছে, যাদের চাহিদাও দেশগুলোর পর্যটকদের কাছে কম নয়। তবে এসব দেশের এ জাতীয় দোকানগুলোর বসার একটি শৃঙ্খলা আছে, আছে খাবারের পরিবেশ। সবচেয়ে বড় যেটি তা হল, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। কিন্তু আমাদের দেশের এ জাতীয় বাজার বা দোকানগুলো সেই কাঁচা বাজার বলি অথবা খাবারের দোকান বলি-কোন একটি স্বাস্থ্যসম্মত কিনা,তা নিয়ে ভাবতে হবে অনেকক্ষণ। এরপরও আমরা বলতে চাই, নাগরিক অধিকার, শহরের সৌন্দর্য এবং পরিবেশ নিশ্চিত করে বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা প্রয়োজন। এজন্য কিচেন মার্কেটের বিকল্প আছে বলে মনে হয়না। এ বিষয়ে চসিক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।