হাজার টাকায় বৈধ হচ্ছে প্রতিভরি স্বর্ণ

65

অবৈধ স্বর্ণ বৈধ করার সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। এজন্য আগামী ৩০ জুনের মধ্যে স্বর্ণের মজুদের ঘোষণা দিয়ে কর পরিশোধ করতে হবে। মাত্র এক হাজার টাকায় প্রতি ভরি স্বর্ণ, ৬ হাজার টাকায় প্রতি ক্যারেট কাট ও পোলিশড ডায়মন্ড (হীরা) এবং প্রতি ভরি রূপার জন্য ৫০ টাকা কর দিয়ে বৈধ করে নেয়া যাবে। আর স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের এ সুযোগ নেওয়ার জন্য তিনদিনের ‘স্বর্ণমেলা’র আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম আয়কর বিভাগ।
নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার পিএইচপি পেলিকান মেহজাবিন ভবনে শুরু হওয়া স্বর্ণমেলা চলবে আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত।
গতকাল রবিবার স্বর্ণমেলার উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের হতাশা ছিল। তারা হয়রানির শিকার হচ্ছিলেন। জনবান্ধব সরকার জনগণের কল্যাণ, সুবিধা ও অসুবিধা চিন্তা করে। এরই অংশ হিসেবে স্বর্ণ ব্যবসার বৈধতা দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছে। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের পরিবর্তনে ব্যবসায়ীদের বড় অবদান রয়েছে। ব্যবসায়ীদের ওপর অহেতুক কর চাপিয়েষ দেয় না সরকার। কর দিয়ে দেউলিয়া হয়েছেন, এমন ব্যবসায়ী নেই। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে কর দেন। দেশকে এগিয়ে নিতে কর দেন। করের টাকা দেশের উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে বলে দেশের সমৃদ্ধি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ভালো করে জানেন, দেশের পাসপোর্টের সম্মান বেড়েছে। ভাবমূর্তি বেড়েছে। একজন সুনাগরিক গর্বিত নাগরিক হিসাবে কর দিচ্ছেন।
চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-২ এর কর কমিশনার ও স্বর্ণমেলা উদযাপন কমিটির আহŸায়ক জিএম আবুল কালাম কায়কোবাদের সভাপতিত্বে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) কালিপদ হালদার, কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক, চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. জামাল উদ্দিন ও বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি চট্টগ্রামের সভাপতি মৃণাল কান্তি ধর।
এনবিআর সদস্য কালিপদ হালদার বলেন, এনবিআর শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক নয়- এ বার্তা নিয়ে এসেছি। দেশের রাজস্বের সিংহভাগ যোগান দেয় চট্টগ্রাম। ২০০৫ সালে যে চট্টগ্রাম দেখে গেছি, এখন তার থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। ফ্লাইওভার হয়েছে।
তিনি বলেন, আবহমানকাল থেকে মানুষের দুর্দিনের সঞ্চয় ছিল স্বর্ণ। বংশ পরম্পরায় স্বর্ণের ব্যবসা চলে আসছে। বর্তমান সরকার স্বর্ণ নীতিমালা ঘোষণা করেছে। এটি একটি বিরল ঘটনা। এতে ব্যবসায়ীদের ভীত হওয়ার কারণ নেই। এটি বড় সুযোগ, বুক ফুলিয়ে ব্যবসা করার ও মূল স্্েরাতধারায় আসার। আমি আশ্বাস দিচ্ছি, স্বর্ণ নীতিমালার কারণে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হবেন না।
কাস্টম একসাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, এ মেলার ব্যাপ্তি ও প্রভাব শত বছর থাকবে। সরকার প্রথমবারের মতো স্বর্ণ ব্যবসায় বিনিয়োগকে বৈধতা দিচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে হয়রানি শব্দটি থাকবে না। সামান্য ট্যাক্সে পুঁজি বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করছে স্বর্ণমেলা। আগামীতে সত্যিকারের বাজার মূল্যের উপর ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। যারা এখন ঘোষণার আওতায় কর দিবেন, তারা ১৫ শতাংশ রিবেট পাবেন। এটা ব্যবসায়ীদেরই লাভ।
বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি চট্টগ্রামের সভাপতি মৃণাল কান্তি ধর বলেন, স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের ৫ ধরনের কর দিতে হয়। আয়কর, রাজস্ব, চসিকের ট্রেড লাইসেন্স ফি, ডিলিং লাইসেন্স ফি দেওয়ার পরও প্রকৃত ব্যবসায়ীরা হয়রানির মুখে পড়ছেন। চট্টগ্রাম নগরে ৫ হাজার ২০০ জুয়েলারি দোকান। এর মধ্যে বৈধ ১ হাজার ৭০০টি। যারা ট্যাক্সের আওতায় নেই, তারা দেদারসে ব্যবসা করছেন। ট্রেড লাইসেন্স নেই অনেক প্রতিষ্ঠানের। তাদের করের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে অতিরিক্ত কর কমিশনার মফিজ উল্লাহ বলেন, সরকার এ মেলাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। মেলার ৩ দিন ছাড়াও ৩০ জুন পর্যন্ত কর অঞ্চলে ঘোষণা দিতে পারবেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। মেলায় এসে বুথ থেকেও সহজে সেবা নিতে পারবেন।
আয়কর বিভাগ আয়োজিত স্বর্ণ মেলায় নিবন্ধিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদের অঘোষিত ও মজুদ স্বর্ণ, স্বর্ণালংকার, কাট ও পলিশড ডায়মন্ড এবং রৌপ্যের ঘোষণার বিপরীতে কর পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলায় স্বর্ণ ব্যবসায় জড়িত নতুন করদাতাদের ই-টিআইএন প্রদান, চট্টগ্রামের প্রতিটি কর অঞ্চলের জন্য পৃথক বুথে ঘোষণা ফরম গ্রহণ, আয়কর পরিশোধের জন্য সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের বুথ ও পরামর্শ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মেলায় নতুন করদাতাদের ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্রের ছায়াকপি সঙ্গে আনতে হবে।
এদিকে তিন দিনব্যাপী স্বর্ণমেলার প্রথম দিনে ৮২৯ ভরি স্বর্ণ, ২ দশমিক ৫ ক্যারেট ডায়মন্ড ও ১৭০ ভরি রূপার বিপরীতে আয়কর জমা পড়েছে ৮ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
স্বর্ণমেলার তথ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির আহবায়ক ও অতিরিক্ত কর কমিশনার মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, প্রথম দিনে ১১ জন স্বর্ণ, ডায়মন্ড ও রূপা খাতে মজুদের ঘোষণা দিয়ে ৮ লাখ ৫২ হাজার টাকা আয়কর জমা দিয়েছেন।