হলি আর্টিজানে হামলা মামলার রায় কাল

13

বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা মামলার রায়কে ঘিরে সতর্কাবস্থায় রয়েছে পুলিশ। নাশকতার আশঙ্কায় নগরী ও জেলায় বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। তবে পুলিশ বলছে, হামলা চালানোর মত শক্তি জঙ্গিদের নেই। তারপরও আমরা সতর্ক রয়েছি।
জানা গেছে, আগামীকাল বুধবার এ মামলায় রায় ঘোষণা করার কথা রয়েছে। রায়কে ঘিরে দেশজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয় পুলিশ সদর দপ্তর। এ ধরনের নির্দেশনা চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় পৌঁছনো হয়। এরপরই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয় নগর ও জেলা পুলিশ।
সিএমপি সূত্রে জানা যায়, রায়কে ঘিরে যাতে কোন জঙ্গিগোষ্ঠী হামলার চেষ্টা বা বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, সেজন্য পুলিশকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে নগরীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। বসানো হবে চেকপোস্ট। টহলও জোরদার করা হবে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার এমএম মোস্তাইন হোসাইন বলেন, জঙ্গিদের সে শক্তি-সামর্থ আর নেই। সে সুযোগও দেয়া হবে না। জঙ্গি নিয়ে পুলিশ সবসময় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তবে এ মামলার রায়কে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জেলায়ও নিরাপত্তার সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সকল থানাকে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, রায় ঘিরে নব্য জেএমবির আনাগোনা কিছুটা কমলেও পুরনো জেএমবি সদস্যদের অনেক বেশি সক্রিয় থাকতে দেখা যাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির কারণে তারা ধরাও পড়ছে। জঙ্গিদের আড়ালে অন্য কেউ যাতে সুযোগ নিতে পারে সেজন্য নজরদারি করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, জঙ্গিরা সব সময়ই হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে। তবে তাদের গতিবিধি নজরদারিতে থাকায় তারা দৌড়ের ওপর রয়েছে। জঙ্গি সংগঠনগুলোর বর্তমান অবস্থা এমন হয়েছে যে, সমর্থক আছে তো নেতা নেই। আবার নেতা থাকলেও ক্যারিশম্যাটিক নেতা নেই। ফলে একটি হামলার জন্য এবং একটি সংগঠন পরিচালনার জন্য যাকে দরকার তার অভাব রয়েছে। তবে রেডিক্যালাইজেশনের মাত্রা বেড়েছে। সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোসহ জঙ্গি নেটওয়ার্কগুলোতে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়। এই রেডিক্যালাইজড ব্যক্তিদের এক্সট্রিম পর্যায়ে নিয়ে জঙ্গিতে পরিণত করতে সমস্যা হচ্ছে।
ঢাকার অভিজাত গুলশান এলাকায় হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালের ১লা জুলাই। মামলার তদন্তে ঘটনার সাথে মোট একুশ জন জড়িত ছিল বলে তথ্য পায় পুলিশ এবং এর মধ্যে ঘটনার দিন ও পরে ১৩ জনই বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়।
বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করা ওই ঘটনায় জঙ্গিরা ওই রাতে ২০ জনকে হত্যা করে যাদের ৯ জন ইতালি, ৭ জন জাপান, ৩ জন বাংলাদেশী এবং ১ জন ভারতীয় নাগরিক। এছাড়া জঙ্গিদের হামলায় দুজন পুলিশ কর্মকর্তাও প্রাণ হারান।
পরে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে হামলাকারী ৫ জনও প্রাণ হারায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে আরো একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়; যাকে পরবর্তীতে রেস্টুরেন্টের কর্মচারী হিসেবে শনাক্ত করা হয়। হামলাকারীদের মধ্যে অনেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। এরা শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান।
চার্জশিটে আট জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরা হলেন, রাকিবুল হাসান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাশেদুল ইসলাম, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, মামুনুর রশীদ রিপন ও শরীফুল ইসলাম খালেদ।