সড়ক তুমি কবে নিরাপদ হবে ?

72

নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন, ধর্মঘট, মিছিল, সমাবেশ কত কিছুই না হলো। ছাত্রদের আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশে নানা কান্ড ঘটে গেলো ২০১৮ সালে। যার মধ্যে সাড়াজাগানো বিষয় নিরাপদ সড়কের জন্য ছাত্রদের আন্দোলন। জনমনে আজও প্রশ্ন, আদৌ কি এই নিরাপদ সড়ক আমরা পেয়েছি? থেমেছে কি সড়কে মৃত্যুর মিছিল? গত ২৩ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় স্বামী-স্ত্রীসহ চারজন নিহত হওয়ার ঘটনা যে কারো হৃদয়ে চোট দিতে পারে। তার চেয়ে বড় ঘটনা ২০ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জে ভাইবোনসহ ১২ জন নিহত হওয়া। আবার ১৮ ডিসেম্বর সারা দেশে ১১ জন নিহত হয় সড়ক দুর্ঘটনায়। তাহলে সড়কে মৃত্যুও মিছিল থেমেছে কই?
প্রথম আলোর হিসেবে, ৬৮৮ দিনে ৫ হাজার ৯৭৬ জন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। গড়ে দৈনিক ৮ জনের বেশি প্রাণ হারাচ্ছে আমাদের দেশে। আমি পরিসংখ্যান নিয়ে টানাটানি করবো না। কারণ পরিসংখ্যান ঘাটলে হতাশা আর কষ্ট ছাড়া কিছুই প্রাপ্তি নেই। আমি শুধু বলতে চাই, সড়কের প্রাণহানি কমিয়ে আনার কি কোনো উপায় নাই? নিরাপদ সড়কের জন্য আমাদের দেশে সংগঠনেরও অভাব নেই। কিন্তু কেউ কাজের কাজ করছে বলে মনে হয় না। সকলেই লোক দেখানো কাজে মেতে উঠে। আর বাকি সময় কেই যেন কিছু জানেই না। আর প্রতিদিন সড়কে ঝরে যাচ্ছে তাজা তাজা প্রাণ। কেউ মা, কেউ বাবা, আবার কেউ হারাচ্ছেন সন্তান। কেউ কেউ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। শত-শত পরিবার হয়ে যাচ্ছে অসহায়।
নতুন বছর, নতুন সরকার, নতুনভাবে দেশটা পরিচালনা করার আগে মনে করিয়ে দিতে চাই নিরাপদ সড়কের কথা। যে সড়কের জন্য ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছে, যে সড়কের জন্য স্বজনদের হৃদয় পুড়েছে, যে সড়কের জন্য হাজার হাজার পরিবার ধ্বংস হয়েছে। বর্তমান সরকার যদি এই বিষয়টির দিকে সুনজর না দেয় তাহলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল কখনোই থামবে না।
আমাদের আগে চিন্তা করতে হবে কোন কোন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনা বেশি হয় এবং প্রাণহানি হয় এবং কেন দুর্ঘটনা সৃষ্টি হয়। আমরা যদি সমস্যাটা বের করতে পারি তবে সমাধান কেন বের করতে পারবো না। গত নয় মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহা সড়কে সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে মোট দুর্ঘটনার প্রায় ১৭ ভাগ। যা সবচেয়ে বেশি। সুতরাং সড়কের কোথায় কি সমস্যা আছে, এবং কোথায় কি করতে হবে সেটা এখন থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ ২০১৯ সালে আর সড়কে মৃত্যু দেখতে চায় না। বর্তমান সরকারের সাফল্য এবং উন্নয়ন অস্বিকার করার মতো দুঃসাহস কারো নেই। তবে এই সেক্টরের উন্নয়নটা এখনো দৃশ্যমান হয়নি দেশের মানুষের কাছে। এই সেক্টরের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের মানুষের হৃদয়ে আরো অনেকখানি জায়গা পাবে বর্তমান সরকার। সেইসাথে এই সেক্টরের উন্নতি না হলে জনগণের আস্থা চলে যাওয়ার সম্ভাবনাও অধিক। কারণ বছরের আলোচিত ঘটনার মধ্যে অন্যতম আলোচিত ঘটনা এটি।
আমরা এই সেক্টরের কাজ দেখি শুধুমাত্র লোক দেখানো। আসলে এই সেক্টরে চলছে দুর্নীতির মহা উৎসব। যা হয়তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টির বাইরে। এ সেক্টরের প্রধান বাণিজ্য লাইসেন্স। যত বেশি টাকা, তত আগে লাইসেন্স। সে গাড়ি চালাতে জানুক আর না জানুক। এমন যদি হয়, তবে সড়কের মৃত্যু অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সেক্টরের প্রতি নজর দিয়ে দেশ এবং দেশের মানুষকে রক্ষা করা। সড়কে মৃত্যু প্রতিরোধ করার জন্য সরকারের বেতনভুক্ত অনেক কর্মকর্তা রয়েছে। যারা এই বিষয় নিয়ে কাজ করার কথা। অথচ তারা সরকার থেকে জনগণের সেবা করার জন্য পারিশ্রমিক নিয়ে জনগণকে বুড়ো আঙ্গুল দেখায়। সড়কে রোজ মৃত্যু হচ্ছে। অথচ এই সেক্টরের কারো কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। আইন থাকলেও কার্যকর হয় না সেই আইন। কারণ আইনেও এখন চলছে অংকের হিসাব। তাই সুশাসন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করলে সবদিকেই জনগণের উন্নয়ন হবে। আর জনগণের উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন। বিচারের আওতায় আনতে হবে সরকারি বেসরকারি সকল কর্মকর্তাদের যারা পরিবহন সেক্টরে অনিয়ম এবং দুর্নীতি করছে। এ বিষয়ে সড়কমন্ত্রী ওবাইয়দুল কাদেরের নজর দিতে হবে। কারণ তিনি আবারও এই সেক্টরের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই সড়কমন্ত্রীর কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা এখন নিরাপদ সড়ক।
সর্বশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বলতে চাই, দেশের উন্নয়ন করছেন দেশের মানুষের জন্য। কিন্তু দেশের মানুষ যদি বেঁচে না থাকে তবে দেশের উন্নয়ন করাটা বৃথা হয়ে যাবে। তাই শ্রদ্ধার সাথে বলছি, আগে দেশের মানুষ বাঁচান, তারপর দেশ সাজান। এটাই হোক ২০১৯ সালের কর্মসূচি। আমার বিশ্বাস বর্তমান সরকার এই সেক্টরকেও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারবে। সেই সুন্দরের অপেক্ষায় রইলাম আমি এবং আমার দেশের মানুষ।

লেখক : প্রাবন্ধিক