সড়কে প্রিয় নায়কের অবাক ছবি

59

নিরাপদ সড়কের জন্য বাংলাদেশের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে অভিনেতা ইলিয়াছ কাঞ্চনের নাম অক্ষয়-অমর হয়ে থাকবে। কারণ এই জোরদার আন্দোলনের তিনিই পথিকৃৎ। কারণ তিনিই রাষ্ট্র এবং জনগণের ঘুম ভাঙ্গিয়েছেন নিরাপদ সড়কের জন্য। শুধু পরিবহন শ্রমিকদের কথা কেন বলব- যেখানে সেখানে মৃত্যুকে তো আমরাও নিয়তি নির্ধারিত মনে করি। আর শ্রমিক নেতারা নিজেদের নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য এটা গাড়িচালক ও শ্রমিকদের বুঝিয়ে-পড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সেখান থেকে বের হবার কোনো পথের সন্ধান আমরা করিনি। ইতিহাসের কথা বাদ দিলেও আজ পর্যন্ত বাংলা চলচ্চিত্রের নায়ক ইলিয়াছ কাঞ্চনের তুলনা তিনি নিজেই। সিনেমার জগতের নয়, প্রকৃত হিরো তিনি। আমরা অনেকেই যারা নিজেদের সময়ের নায়কদের সিনেমা দেখে দেখে বড় হয়েছি, সিনেমা হল ও সিনেমা হলের আশেপাশে সিনেমার পোস্টারে ইলিয়াছ কাঞ্চনদের সেসব ছবি আমরা কৌতূহল নিয়ে দেখতাম, পোস্টারের অ্যাকশন দেখে হয়তো সিনেমা হল পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছি। কিন্তু এসব দেখে মনের নানা প্রতিক্রিয়ার মধ্যেও হয়ত কোনো কোন সিনেমার দৃশ্য আমাদের চোখে আজও ভাসে। সেখানে বিরহ-বিচ্ছেদ, থাকতে পারে, আনন্দময় দৃশ্য কিংবা নায়কের সঙ্গে ভিলেনের যুজুমান দৃশ্য। যা দেখে হয়ত কারো পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে ভেবেছি। তার কোনোটাই হয়ত আজ মনে নেই। কিন্তু তা মনে না থাকলেও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন আমাদের মনে থাকবে। কিন্তু নতুন সড়ক আইন পাশ হওয়ার পর তিনি যখন রাস্তায় নামলেন সেই বহুরূপে ধরা দেওয়া অভিনেতার একটি ছবি আবার যেন সেই সিনেমা দৃশ্যে নিয়ে গেছে। যা সিনেমার মত নাটকীয় কিছু নয়। পত্রিকার ছবিতে যখন দেখা গেল তিনি একাই। রাস্তায় মাইক হাতে যেন অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কিংবা পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের বলে যাচ্ছেন সতর্ক হতে ও নিয়ম ও আইন মানার জন্য। ছবিটা পত্রপত্রিকার বাইরে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। সিনেমায় নায়কের পক্ষে যেখানে সব জয় করা সম্ভব, সেখানে সেই ছবিটাতে কষ্ট আছে, বেদনা আছে, একজন নায়কের শঙ্কা আছে, আতঙ্ক আছে, আছে অসহায়তা। এখানে সব জয় করা কেন জানি অসম্ভব। সেটা শুধু পরিবহন শ্রমিকদের জন্য নয়। আমরাও দায়ি। যে আন্দোলন করতে গিয়ে তার আশেপাশে আর কাউকে দেখা যায়না। যেখানে মাইক হাতে তিনি একাই লড়ছেন। আশেপাশে তার মতই ড্রেস চাপানো কিছু মানুষদের দেখা গেলেও তাদের কাউকে একা ঠেকে না।
পাশাপাশি আরও কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে। এটা নিয়ে বেশ প্রতিক্রিয়া এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে। যেখানে ইলিয়াছ কাঞ্চনকে জুতার মালা দেয়াসহ নানাভাবে অপমানিত করে পোস্টার ও ব্যানার দিয়েছে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা। তারা সুযোগ বুঝে অস্বীকার করবে, তাতে সন্দেহ নেই কিন্তু সড়কের সমস্ত অপরাধে এই পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও শ্রমিক নেতারা জড়িত আছে। এমনকি তারা আলাদাভাবে মাস্তান লালন পালন করে। মূলত সকল যানবাহন স্ট্যান্ডগুলো তাদের এই মাস্তানির কাÐকারখানা। অবস্থাভেদে তাদের কারণে এসব স্ট্যান্ড বা টার্মিনালে যাত্রীরাও নিরাপদ নয়।
নায়ক ইলিয়াছ কাঞ্চনের জুতার মালা পরানো ছবির চেয়ে আমার কাছে বেদনাদায়ক মনে হয়েছে তার একা একা সড়ক আইন নিয়ে মাইক হাতে সতর্ক করার বিষয়টা। প্রায় সাতাশ বছর তিনি এভাবে একাই বলে যাচ্ছেন। যখন থেকে তার স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনকে তিনি হারান সড়ক দুর্ঘটনায়। আর পরিবহন শ্রমিক-মালিক নেতা নামধারী মাস্তানরা তার উপর ক্ষেপেছে- কারণ গত ২৭ বছর আন্দোলনের ফসল আজকের নতুন সড়ক পরিবহন আইন। এটা তার জন্য বিরাট সাফল্যের। তারা তো মাস্তানি করলে শাস্তি পাবে। যাত্রী-পথচারী হত্যা করলে শাস্তি পাবে। পঙ্গু করলে শাস্তি পাবে। কারণ সড়ককে পরিবহনের লোকরা নিজেদের বাপ-দাদার সম্পত্তি মনে করে গাড়ি চালাতে পারবে না। এজন্য তারা ক্ষেপবে। পথচারী ও যাত্রীদের জন্য এই অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এগুলো সবটাই ইলিয়াছ কাঞ্চনের অবদান। তাই সেটা অপমান মনে করিনা। ২৭ বছর পর এটা তার পুরস্কার।
কিন্তু সড়ক যাদের জন্য নিরাপদ করা হচ্ছে- তারা তো পরিবহন মাস্তানদের বিপরীতে ইলিয়াছ কাঞ্চনের পক্ষে রাস্তায় নামেনি। মানে আমরা পথচারী ও যাত্রীরাও। আর সড়ক দুর্ঘটনায় শুধু পথচারী ও যাত্রী মারা যায় না। মারা যায় গাড়ির চালক-হেলপাররাও। দুর্ঘটনায় পড়লে তো মালিক-শ্রমিক ভেদাভেদ থাকে না। তাদের স্বজন-পরিজনও রেহাই পায় না। এটা না বোঝে পরিবহন শ্রমিক-মালিক নেতা ও তাদের পোষ্য মাস্তানরা ইলিয়াছ কাঞ্চনকে অপমান করতে পারে। সেই ছবি নিয়ে আমরাও জোরালো প্রতিবাদ করছি। নিন্দা জানাই। কিন্তু তিনি রাস্তায় এই মাস্তানদের বিপরীতে যে একা মাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে কাজ করছে সেটার তার জন্য বিপদ এবং অসহায়তাও। এই অসহায় ও উদ্বিগ্ন ছবি আমাদের কাম্য হতে পারে না। এভাবে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পথিকৃৎ নায়ক ইলিয়াছ কাঞ্চনকে আর একা দেখতে চাই না। ছবিটা দেখে মনে হয়েছে এটাই আজ বাংলাদেশের সড়কের ছবি। অজস্র মৃত্যু, সড়কে রক্তের নহর, কান্না, বিলাপ, পঙ্গুত্ব, শঙ্কা, আতঙ্ক, অসহায়ত্ব। এসব কিছু নিয়ে কোনো নির্মাতা আর একটা সিনেমা বানালেও সবটা ফুটিয়ে তোলা যাবে না। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বা নিহতের খবর পড়ার পর আমরা কি জানি -সেই অসহায় পরিবারগুলোর কি হচ্ছে। কিভাবে দিন যাচ্ছে। আর তাদের স্বজন-পরিজনদের। এভাবে এক একটা দিন, এক একটা সপ্তাহ, এক একটা মাস, এক একটা বছর, দশক-দশক ধরে যদি আমরা হিসাব করি তাহলে এ পর্যন্ত সড়কে কি পরিমাণ মানুষ নিহত হয়েছে, তাদের মৃত্যু দশা ভাবলে আমাদের গা শিউরে উঠার কথা, রক্ত হিম হয়ে যাওয়ার মত কিছু! আর কত কত মানুষ এভাবে শারীরিক ও মানসিক বিকলাঙ্গতা নিয়ে দুর্বিসহ জীবন অতিবাহিত করছে। কিন্তু সড়ক আইন পাশ হবার পর এই নায়ককে যখন আমরা রাস্তায় একা দেখি, তখন নাগরিক হিসাবে আমাদের জন্য অত্যন্ত পরিতাপের।
একজন পথচারি হিসাবে নিরাপদ সড়কের দাবি আমাদের প্রত্যেকের। সব পথচারীর এই দাবিতে সমর্থন থাকার কথা। কারণ আমরা সকলে পথচারী কিংবা যাত্রী। কিন্তু আমি কি করছি বা করেছি নিরাপদ সড়কের জন্য। চালকদের বেপরোয়া, অমানবিক ও নির্দয়-নির্বোধ গাড়ি চালানোর প্রবণতা প্রতিরোধের কথা চিন্তা করে সকলে সড়কে গিয়ে নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন সমর্থন জানানোর কথা ছিল। সড়কে চলাচলরত আমার স্বজন-পরিজনদের কথা ভেবে আমার গা শিউরে উঠার কথা ছিল। সড়কের আশঙ্কায় সন্ত্রস্ত হওয়ার কথা ছিল। সেরকম কোনো কিছু আমাদের মধ্যে নেই বলে- আমরা আজ নির্ভার। যে কারণে ইলিয়াছ কাঞ্চনকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে হুমকি ও অপমান করার সাহস দেখাচ্ছে তারা। পরিবহন শ্রমিকরা। এটা হবার কারণ- যেখানে আমরা আমাদের জন্য বা আমাদের স্বজন-পরিজনদের কথা ভাবছি না, সেখানে ইলিয়াছ কাঞ্চনের জন্য ভাবব কেন। ইলিয়াছ কাঞ্চনকে হুমকি বা অপমান করলেই আমাদের কি আসে যায়। বরং আমরা সকলে সুযোগটা নেয়ার অপেক্ষায় আছি। কারো জানমালের বিনিময়ে। অপমান লাঞ্ছনার বিনিময়ে। যেখানে আমরা আমাদের স্বজন-পরিজনদের জন্যও কেউ কারো নয়। যে কারণে আমরা ঘর থেকে বেরুনো মানুষটার জন্য চিন্তিত না। এর সব দায় যেন নায়ক ইলিয়াছ কাঞ্চনের। আমরাও পরিবহন শ্রমিকদের মত তার প্রতিপক্ষ যেন। তাই তিনি একা। ১৮ কোটি মানুষের পক্ষে একাই তার ফরিয়াদ।
ইলিয়াছ কাঞ্চনের একটি সংগঠন আছে- নিরাপদ সড়ক চাই। যে কারণে আমরা কমবেশি নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ব্যাপারে সচেতন হয়েছি। তাও পত্রপত্রিকা পড়ে, শরীকদার হয়ে নয়। সম্ভবত তার এই সংগঠনটির সারাদেশব্যাপি কমিটিও আছে। কিন্তু এই সংগঠনটির এতগুলো জেলা-উপজেলায় কমিটি থাকার পরও ইলিয়াছ কাঞ্চনের পক্ষ হয়ে তারা কেউ অন্য কোথাও রাস্তায় নামেনি। এমনকি তাকে হুমকি দেওয়া ও অপমান করার পরেও না। ঘটনার পর শেষ পর্যন্ত তার সংগঠন মানে চলচ্চিত্র সমিতির লোকজন এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু তারা এই আন্দোলনে আরও আগে যুক্ত হতে পারত। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন যদিও তাদের দায় নয়। কিন্তু তার সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা সারা দেশব্যাপি আছে তারা কি করছে? সংগঠনের জেলা উপজেলাব্যাপী কমিটিগুলোর কি কাজ। আর কমিটিগুলোর কাজকর্ম আদৌ কারো চোখে পড়েছে কিনা নতুন সড়ক আইন পাশ হবার পর। কোনো বাদ প্রতিবাদ, বিবৃতিও না। খোদ ঢাকায়ও তার সাথে দু’একজনকে দেখা গেছে। তাও হয়তো মিডিয়ার কাভারেজ পাওয়ার ধান্ধায়। ধান্ধাবাজদের ওদের আর কোথাও দেখা যায়নি।
ধান্ধাবাজরা কেন সংগঠনে জড়ায়। এখানে সংগঠনের কথাই বলব- নিরাপদ সড়কের কথা নয়। কারণ একজন মানুষ যখন অনেক কষ্ট করে কোনো কিছু দাঁড় করায়, তখন তাকে বাহবা দেয়ার জন্য মানুষের অভাব হয় না। আবার সেটার সুনামে জড়িয়ে ধান্ধা করার জন্য এদেশে মানুষের অভাব তো নেই। যেমন- এখন আর আওয়ামী লীগারের অভাব নেই দেশে। যুবলীগের নেতা কর্মির অভাব নেই। অভাব নেই ছাত্রলীগের নেতা কর্মির। টোটাল আওয়ামী পরিবার একটি বিশাল সংগঠন। রাজনৈতিক প্লাটফরম। এ মুহূর্তে সম্ভবত বাংলাদেশে সবচেয়ে বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এতবড় রাজনৈতিক দল দেশে আর নেই। এটা এই অঞ্চলে একটি প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠনও বটে। হাজার হাজার দেশপ্রেমিক ও রাজনীতিকের ঘামে ও শ্রমে এই সংগঠন। যেটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে এসে বিশালতা ও ব্যাপ্তি লাভ করে। যে দলটি এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, জন অধিকারের জন্য বছরের পর বছর মানুষের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, মানুষকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের ব্যাপারে সচেতন করেছে, মানুষের নাগরিক পাওনার ব্যাপারে আন্দোলন সংগ্রাম করতে শিখিয়েছে- সেই দলটিকে এবং তাদের স্বাধীনতার ইতিহাসকে ৭৫ পরবর্তি সময়ে বাংলাদেশের মানুষ একরকম ভুলেই গিয়েছিল। কিন্তু আজ সুদিনে কত রমরমা নেতা-কর্মি তাদের। ঠিক এমনই সুদিনে ভেড়ার ভিড় বাড়ে। যেখানে লাখ লাখ পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে একাই তার আন্দোলন। যারা কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই। অথচ সংগঠনের সুনামের কারণে এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পুঁজিপতি, ব্যবসায়ীরাও। যারা প্রধান অতিথি ও প্রধান বক্তা হয়ে আসেন। সুযোগ পেলে প্রধান ভোক্তার রূপধারণ করেন। মূলত কোনো আদর্শিক কারণে নয়, জনগণের নিরাপত্তা ও অধিকারের জন্য নয়, ধান্ধাবাজরা জুটে সুবিধা নেয়ার জন্য। তাই ধান্ধাবাজ এ ধরনের সংগঠন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সড়কে মানুষ মরছে কিংবা বাঁচছে সেই আকুলতায় আকুল কেউ নয়- যারা ইলিয়াছ কাঞ্চনের সংগঠনে আছে তারাও তাই।
শুধু কি ইলিয়াছ কাঞ্চনের স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায়? এই বাংলাদেশে আর কারো স্ত্রী, পুত্র সন্তান, সন্ততি আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব কি মারা যায়নি। তাহলে শুধুমাত্র ইলিয়াছ কাঞ্চনের স্ত্রী মারা যাবার কারণে কেন তিনি সড়কে। তিনিই কি একমাত্র স্ত্রীকে ভালোবাসতেন বা নিজের স্বজন-পরিজনদের। তাহলে অন্য যাদের স্বজন-পরিজন মারা গেছে, তাদের জন্য কি জীবিতদের ভালোবাসা ছিল না। নাকি মারা যাওয়ার পর পরই ব্যক্তির ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তা পণ্যের মত ফুরিয়ে গেল, কিংবা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির করুণ, নিদারুণ পরিসমাপ্তির কথা ভেবে আমরা বিচলিত হই না। রাষ্ট্র আমাদের এমন নাগরিক বানিয়ে দিয়েছে-অন্নের সংস্থানে ছুটতে ছুটতে কিংবা আরো পাবার লাভে ও লোভে নিজের জন্য বা অন্য কারো জন্য হিতাহিত ভাবার সময় নেই। গাড়ির চাকায় যে কোনো কেউ পিষ্ট হতে পারি- এটা অনেক সময় আমরা অবধারিতভাবে জেনেও সবকিছু ঠিকঠাকমত চালিয়ে নিচ্ছি।
এক্ষেত্রে যারা সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী, পুত্র, স্বজন-পরিজন, বাপ- ভাই- স্বামী হারিয়েছে তাদেরকে সংগঠিত করে তার নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনে যুক্ত করলে আন্দোলন আরও বাড়ানো যেত। আর তাতে ধান্ধাবাজদের সরিয়ে সংগঠন আরও মজবুত হতো। কারণ এদেশে নিরাপদ সড়কের আন্দোলন একদিনে শেষ হবে না। সেজন্য জেলা উপজেলায় যারা ধান্ধাবাজির জন্য এই সংগঠনটির চেয়ার টেবিল দখল করে যারা পরিচয়-প্রসার বাড়ানোর চেষ্টা করছে, তাদের চেয়ে যারা স্বজন-পরিজন হারিয়েছে তাদের কার্যক্রম আরো জোরদার হবে। আর ধান্ধাবাজদের চমৎকার ধান্ধাবাজিতে রাশ টানা যাবে।
যেমন আওয়ামী লীগ না হয়েও আওয়ামী লীগ হয়ে উঠা, বিএনপি না হয়েও বিএনপি হয়ে উঠা, তেমন নিরাপদ সড়কের জন্য ন্যূনতম প্রতিশ্রæতি না থাকার পরও যারা এই সংগঠনে আছে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইলিয়াছ কাঞ্চনকে বুঝতে হবে। তার ত্যাগ-তিতিক্ষা- পরিশ্রমের সুফল কিছু ধান্ধাবাজ আর টাউটদের পাতে যাবে- তা হয়না। কারণ ঘুরেফিরে পত্রপত্রিকায় সেই ছবিটার কথা মনে আসছে। অবাক ছবি। মাইক হাতে একা একজন মানুষ। কেউ নেই মানুষটির আশেপাশে। থাকলেও নিস্পৃহ গতিবিধি। আর কোথায় এদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত-আহত অন্তত লাখ লাখ মানুষের স্বজন-পরিজন। কিন্তু কেবল ইলিয়াছ কাঞ্চনের ছবি দিয়ে আমরা কি বোঝাতে চাই। পত্রপত্রিকা নানা শিরোনামে তার পক্ষে ও তার কার্যক্রম নিয়ে বলেছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়, তার সাথে সড়কে মানুষ থাকা অত্যন্ত জরুরি। যেমন নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীরা যেভাবে যুক্ত হয়েছিল। যেটাকে যৌক্তিক মনে করেছিল সকলে। সেই ছাত্রছাত্রীদের মত আমাদের সোচ্চার হওয়া চাই। প্রিয় নায়ক ইলিয়াছ কাঞ্চনের পাশে থাকা চাই আমাদের।
লেখক : সাংবাদিক