সড়কে অব্যাহত দুর্ঘটনা ও মৃত্যু প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

52

সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু আমাদের জন্য যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ঈদের ছুটি থেকে শুরু করে এ যাবত চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫২ জন। এর বাইরে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামসহ চার জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৪ জন। চট্টগ্রাম নগরীর পোস্তারপাড় এলাকায় একটি দ্রæতগামী বাস মোটর সাইকেলকে ধাক্কা দিয়ে দুইজন আরোহীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী বাসের বেপরোয়া গতিই এর জন্য দায়ী। এভাবে বাস, ট্রাক, টেক্সি-টেম্পোর বেপরোয়া মনোভাব, যত্রতত্র যাত্রী উঠা-নামা, মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ি চালানোর সুযোগ ইত্যাদির কারণে দুর্ঘটনা কোনভাবেই কমছে না, বরং সরকার যত কঠোর হচ্ছে দুর্ঘটনাও তত বাড়ছে। প্রতিদিনের সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর ও বীভৎস লাশের ছবি দেখলে সহজে অনুমান করা যায়, প্রতিদিন সড়কে কত প্রাণ ঝরছে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির খবর যেন আমাদের গা-সহা হয়ে গেছে। তাই সড়কে প্রাণ ঝরলেও তা আমাদের আবেগতাড়িত করে না! কিন্তু মৃত ব্যক্তির স্বজনদের কাছে এর বেদনা সীমাহীন। আর তিনি যদি হন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, তাহলে ওই পরিবারের বাকি সদস্যদের জীবনে নেমে আসে অমানিশা। তাই দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। দুর্ঘটনা রোধে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণের কথা শুনেছি। কিন্তু তাতে দুর্ঘটনা কমেনি। বন্ধ হয়নি বেপরোয়া যান চলাচল। সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠা-নামা করা, ওভার টেকিং এবং প্রতিযোগিতা। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শতকরা ৮০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে বিরামহীন গাড়ি চালনা, অত্যাধিক গতিতে গাড়ি চালনা এবং চালকের অসাবধানতার কারণে।
একজন চালক একটানা চার-পাঁচ ঘণ্টা গাড়ি চালানোর পর বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় গাড়ি চালাবেন এটাই নিয়ম। কিন্তু আমাদের দেশের কোনো চালকই এ নিয়ম পালন করেন না। ফলে একজন ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত চালক যখন গাড়ি চালান তখন স্বভাবতই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে বেশি।এজন্য মূলত বাস মালিকদের অত্যাধিক ব্যবসায়িক মনোভাবই দায়ী। এ প্রবণতা রোধে সরকারের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এবং সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে গত বছরের জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ ছয় দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন। নির্দেশনাগুলো হল- দূরপাল্লার গাড়িতে বিকল্প চালক রাখা, একজন চালকের পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি না চালানো, চালক ও তার সহকারীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর সড়কের পাশে সার্ভিস সেন্টার বা বিশ্রামাগার তৈরি করা, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করা বা সিগন্যাল মেনে পথচারী পারাপারে জেব্রা ক্রসিংয়ের ব্যবহার এবং চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধা নিশ্চিত করা।
এসব নির্দেশনা যাতে বাস্তবায়িত হয় তা দেখতে তিনজন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রশ্ন হল, দায়িত্বপ্রাপ্তরা এসব নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন? না পেরে থাকলে কী তার কারণ? এসব খতিয়ে দেখে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়িত হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমে যাবে। এগুলোর বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা তৎপর হবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।