সড়কেই ৩ অবৈধ স্ট্যান্ড

62

শনিবার বেলা ১১টা। বহদ্দার মোড়ে রাস্তার উপরই সারি করে দাঁড়িয়ে আছে অর্ধশতাধিক মাইক্রোবাস। তার ঠিক বিপরীত পাশে রয়েছে সিএনজি অটোরিকশার সারি। এর খানিকদূরে বহদ্দারহাট ট্রাফিক পুলিশ বক্সের বিপরীত পাশে রয়েছে সিএনজি টেম্পিুর স্ট্যান্ড। এ মোড়ের তিনটি প্রবেশ মুখে রাস্তার উপরই করা হয়েছে অবৈধ এসব গাড়ির স্ট্যান্ড।
রাস্তার উপর গাড়ির স্ট্যান্ড থাকায় তীব্র যানজট যেমন লেগে থাকে। আবার গাড়িগুলো যাত্রী তোলার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় রত। আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথ চলছে পথচারীরা। এসব অবৈধ গাড়ির স্ট্যান্ড পুলিশ ও স্থানীয় নেতাদের মাসোয়ারা দিয়ে টিকে আছে বলে জানা গেছে। যদিও মাসোয়ারা নেওয়ার বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করেছেন চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বশর।
জানা গেছে, বহদ্দার মোড়ের মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডটি ‘বহদ্দারহাট কার ও মাইক্রোবাস সমিতির’ নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে। রাস্তায় পার্কিং করা বা স্ট্যান্ড করার কোন বৈধতা না থাকলেও বছরের পর বছর রাস্তা দখল করে তারা গাড়ি পার্কিং করছেন। ওই স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন কার ও মাইক্রো দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও কক্সবাজার জেলার লোকাল যাত্রী পরিবহন করেন। দিনওয়ারি যারা গাড়ি চালান তাদের দৈনিক ২৫০ টাকা থেকে ৩শ টাকা এবং মাসিক হলে প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকা দিতে হয় সমিতিকে। তবে মূল হোতা হিসেবে রয়েছে সংগঠনটির সভাপতি মো. ইয়াকুব। তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ ম্যানি’ দিয়ে রাস্তার উপর স্ট্যান্ড টিকিয়ে রেখেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর বহদ্দাহাট ফ্লাইওভারের কালুরঘাটমুখি র‌্যাম্পটি খুলে দেওয়া হয়। র‌্যাম্পটির উভয়পাশে রাস্তা থাকলেও একপাশ বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। র‌্যাম্পের পূর্বপাশের রাস্তার পুরো মুখটাই দখল করে রেখেছে এ অবৈধ মাইক্রোবাসের স্ট্যান্ডটি। রাস্তাটি বন্ধ থাকার কারণে একপাশ দিয়েই উভয়মুখি যানচলাচল করছে। ফলে তীব্র যানজট এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি বরাবরই থেকে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির সভাপতি ইয়াকুব পূর্বদেশকে বলেন, আমাদের সংগঠন সরকারের রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত। তাই আমরা এখানে স্ট্যান্ড করেছি। রাস্তার উপর স্ট্যান্ড করার অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্ট্যান্ড করার অনুমিত নেই। তবে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, তাই এখনও আছে।
মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডটি বিপরীত পাশে রয়েছে সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ড। শাহ আমানত নতুনব্রিজ এলাকা থেকে আসা বহদ্দারহাট মোড়ের প্রবেশের অংশটি জ্যাম করে রেখেছে এ সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ডটি। ওই স্ট্যান্ড থেকে প্রতিবার যাত্রী নিলে লাইনম্যানকে ১০ টাকা করে দিতে হয়। এছাড়াও রয়েছে মাসিক মাসোয়ারা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা। এর আরেকটু খানিক পশ্চিমে রয়েছে বহদ্দারহাট ট্রাফিক পুলিশ বক্স। এ বক্সের বিপরীতে রয়েছে সিএনজি টেম্পুর স্ট্যান্ড। চকবাজারমুখি রাস্তাটি সারাক্ষণ জ্যাম করে রাখে এ স্ট্যান্ড।
সারাদিন যাত্রী তোলা নিয়ে রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু করে সিএনজি টেম্পুগুলো। ফলে রাস্তা পারপারে মারাত্মক ঝুঁকি নিতে হয় পথচারীদের। এছাড়াও স্ট্যান্ডটির সামনেই রয়েছে এখলাছুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেখানে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থী পড়তে আসে। তাদের রাস্তা পারাপারে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে এসব টেম্পুগুলো।
সরেজমিন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সাথে কথা বলে জানা গেছে, সবগুলো স্ট্যান্ড ও ফুটপাতের দোকান থেকে সোর্সের মাধ্যমে নিয়মিত টাকা তোলেন পুলিশ বক্সের পুলিশরা। যার পরিমান দৈনিক ১০০ টাকা থেকে ৩০০টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বশর পূর্বদেশকে বলেন, বহদ্দারমোড়ে যেসব গাড়ির স্ট্যান্ড রয়েছে, সবগুলো অবৈধ। তাদেরকে প্রায় সময় তুলে দেই। কিন্তু আবারও তারা গাড়ি পার্কিং করে। মাসোয়ারা গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।