সৎযোগ্য দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের বিকল্প নেই

97

অনেকে আমাকে লেখতে বলেন। লেখতে বললে আমাকে ভ‚তে ধরে। সাংবাদিক ও লেখকগণ প্রায় লেখা চায়। আমি পড়তে যত স্বস্তিবোধ করি লেখতে তো পারি না। ভালো লেখক হতে হলে ভালো পাঠক হতে হয়। আজকাল পাঠ্যাভাসই কমে যাচ্ছে। আকাশ সংস্কৃতির ঢেউয়ে বই পড়ার সংস্কৃতিতে ভাটার টান। শিক্ষিতের হার বেড়েছে, বই পাঠক বৃদ্ধি পাচ্ছে না। আমাদের ভ‚তের মত উল্টেপিঠে যাত্রা। দ্বিতীয়, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র যখন বই পড়ার সময় হয়নি তখন তাদের পিটে গাদা গাদা বই। এই সকল অসহায় শিশুদের কাছে জানতে চেয়েছি ক্লাসের নির্ধারিত বইয়ের সংখ্যা কত! বলতে পারেনি। যখন বই পড়ার সময় হয়, তারা বেড়ে উঠে, তখন বই পড়ে না। বাঙালি যত পড়ে তত লেখতে চায় না। একুশ শতকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে, হরণও করেছে। একবার লেখা দশবার পড়ার সমান। এখন লেখতে হয় না। কত চিঠি কত লেখা কত দলিল দস্তাবেজ ছিল লেখার এখন কম্পিউটার, ই-মেইল, ই-কর্মাসের কল্যাণে লেখার জোর নেই। মালেয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্র জায়াকে বলা হয় পেপার ল্যাজ সিটি। কালি কলম কাগজের দরকার হয় না বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণ।
আমাকে যারা ভালোবাসেন তারা মাঝে মাঝে লেখতে বললে আমি চিন্তা করি লেখে কি হবে! কত ভালো বই অনুদিত হয়েছে, কত ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি গ্রন্থ আছে, আছে কোরআন হাদিসের মত পবিত্র গ্রন্থ, সে সত্য মানুষ গ্রহণ করছে না, আমার লেখায় কি হবে ? হ্যাঁ কিছ তো হবে। লেখক হবো, সকলেই লেখক বলবে, হবে পত্রিকার পাতা পূর্ণ।
আমার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা কি ? একজন বললো জনসংখ্যা, কেউ বললো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি। আমি তাদের সাথে একমত না হয়ে বললাম, বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা নেতৃত্বের সঙ্কট। জেলেদের গ্রাম সিঙ্গাপুর আবাসস্থল ছিল জলদস্যুদের। লি কোয়ান ইউ’র নেতৃত্বে সিঙ্গাপুর আজ কোথায়! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান ধ্বংস হয়েছিল, জার্মান হয়েছিল বিভক্ত, কোন খনিজসম্পদের জোরে নয় নেতৃত্বে কারণে হয়েছে শৈন শৈন উন্নত। দেশে দেশে যুগে যুগে সকল সমস্যা সমাধান হয়েছে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দ্বারা। ভালো নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে ভালো শিক্ষা থেকে, ভালো শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে দরকার ভালো নেতৃত্ব। মুরগি আগে না ডিম আগে সে বির্তকে না গিয়ে বলে দেয়া যায় দু’টিই প্রধান সমস্যা। সকলে বলেন, শিক্ষায় মুক্তি, এটা খন্ডিত সত্য, পুরোপুরি সত্য নয়। বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, মুখ্য ভ‚মিকা পালন করেছে সর্বোচ্চ মেধাবী শিক্ষার পাদপীট বুয়েট হতে বের হওয়া ইঞ্জিনিয়ারগণ। শুধু তাই নয়- বি সি এস পরীক্ষায় যারা সর্বোচ্চ নাম্বার অর্জন করেন তাদের চাকরির পছন্দের তালিকায় এক নাম্বারে আছে কর বিভাগ, দুই নাম্বার কাস্টমস, তিনে আছে পুলিশ। জাতির ভাগ্য পরিবর্তন না হলেও তাদের ভাগ্য পরিবর্তন তো হবেই। হায়ে রে জাতির বিবেক ‘শিক্ষকতা’ মেধাবী ছাত্রদের কাছে তোমার স্থান সতের নাম্বারে। একটি প্রবাদ অনেকের জানা, ‘সুন্দরী রমনী যখন বারবনিতা হয় তখন বেশি মানুষের চরিত্র নষ্ট করে’। একজন অসৎ মুটেমুজুর যত ক্ষতি করতে পারে না, একজন নষ্ট শিক্ষিত মানুষ পারে তার চেয়ে শতগুণ বেশি। প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জিজ্ঞেস করেছিলেন, সর্বোত্তম ব্যক্তি কে ? তিনি বললেন, জানি। জানতে চাইলেন, সর্বাধম ? জবাবে বললেন, তাও জ্ঞানীগণ। সৎ চরিত্রবান জ্ঞানী হলে সর্বোত্তম, অসৎ হলে সর্বাধম। শেখ সাদী (রহ.) বলেছেন, চরিত্রের মাঝে দীপ্ত শিখা প্রদীপ্ত না হলে, জ্ঞান গরিমা আভিজাত্য সবই বৃথা। তাই কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ বলে গেছেন, ‘আমাদের শিক্ষা যেন তথ্য না দেয় সত্যও দেয়, ইন্দন না দেয় অগ্নিও দেয়’। তিনি আলোকিত শিক্ষার কথা বলে গেলেন। আলোকিত শিক্ষা হতেই জন্ম নেয় সৎ ও দেশপ্রেমিক রাজনীতিক। কথায় বলে যে জাতি বীরের মর্যাদা দেয় না, সে জাতির কাছে বীর জন্মায় না। সৎ ও দেশপ্রেমিকদের যথাযথ মর্যাদায় অভিষিক্ত না করলে তাদের জন্ম হবে কীভাবে! ফুলে বাগিচা যখন কাকের দল দখল করে বুলবুলি পালিয়ে যেতে বাধ্য যে সকল সৎ দেশপ্রেমিক নেতা জাতিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন তারা আজ মিডিয়া প্রচার পায় না। তাদের হাতে অর্থকড়ি নেই। নেই ক্ষমতার জোর। চীনা প্রবাদ : ‘টাকা যখন কথা বলে সত্য তখন চুপ থাকে’। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইরশাদ হলো, আখেরী জামানায়, ‘দ্বীনহুম দানানিরহুম’ দ্বীন ধর্ম হবে টাকা পয়সায়। সংস্কৃতিতে আছে ‘তংকাই কেবলং’ টাকাই সব। ইংরেজিতে প্রবচন আছে, মানি ইজ সুইটার দ্যান হানি’। টাকার জোরে সৎ দেশপ্রেমিক নেতৃবৃন্দের স্বপ্ন স্বাপ্নিক হয়ে উড়ে যায়। যাদের জীবনে স্বপ্ন নেই, আছে দুঃস্বপ্ন, তারাই আজ হর্তাকর্তা বিধাতা। বাইবেলে আছে, ‘অন্ধ যদি পথ দেখায় নেতা ও অনুসারী উভয়ই খাদে পরে’। স্বপ্ন কী ? তার উত্তর খুঁজতে গেলে ধার করতে হবে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল কালামের কথা। তিনি বলেছেন, বড় মাপের এক কথা ‘আমরা যা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখি তা স্বপ্ন নয়, যে স্বপ্ন ঘুমাতে দেয় না তাই স্বপ্ন’। দেশ জাতির মুক্তির চিন্তায় যাদের ঘুম আসে না, যারা সত্যিকার দেশপ্রেমিক তাদের সম্মানজনক রাজনৈতিক অঙ্গনে স্থান কোথায়! রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের স্থান করে দিতে না পারলে সকল সৎ উন্নয়নশীল কার্যক্রম পরাভ‚ত হতে বাধ্য।
সৎ দেশপ্রেমিকদের জাতি মূল্যায়ন করলে, প্রতীক ও দল না দেখে নির্বাচনে রায় দিলে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সৎ দেশপ্রেমিক ব্যক্তিদের মনোনয়ন দিতে বাধ্য হবে। এ আমার তোমার পাপ, শুধু বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের নয়।

লেখক : রাজনীতিক ও কলাম লেখক