স্যার কৃষ্ণগোবিন্দ গুপ্ত (১৮৫১-১৯২৬)

44

স্যার কৃষ্ণগোবিন্দ গুপ্ত প্রশাসক, ধর্মসংস্কারক, সমাজসেবক। তিনি কে.জি গুপ্ত নামে সমধিক পরিচিত। কে.জি গুপ্ত তৎকালীন পূর্ববাংলা তথা বর্তমান বাংলাদেশের প্রথম আইসিএস। তাঁর জন্ম ১৮৫১ সালের ২৮ ফেব্রæয়ারি নরসিংদী জেলার সদর থানার ভাটপাড়া গ্রামে। পিতার নাম কালীনারায়ণ গুপ্ত এবং মাতার নাম অন্নদাসুন্দরী গুপ্তা। পিতা ছিলেন ভাটপাড়ার জমিদার এবং ব্রাহ্ম সমাজের নেতা। কৃঞ্চগোবিন্দের শিক্ষাজীবন শুরু হয় ঢাকার পোগজ স্কুলে। পরে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৮৬৭ সালে প্রবেশিকা এবং ১৮৬৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এফ.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। একই বছর তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে ব্রিটেন যান। তিনি লিংকন্স ইন থেকে বার-এট-ল’ সম্পন্ন করেন। ১৮৭১ সালে তিনি আইসিএস (ওহফরধহ ঈরারষ ঝবৎারপব) উত্তীর্ণ হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসনে যোগদানের মাধ্যমে কে.জি গুপ্ত কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি দীর্ঘ কর্মজীবনে মহকুমা প্রশাসক, জেলা প্রশাসক, আবগারি কমিশনার, বিভাগীয় কমিশনার, বোর্ড অব রেভিনিউ-এর সদস্যসহ সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ব্রিটিশ-ভারতে ভাইসরয়ের ইন্ডিয়ান কাউন্সিলের সদস্য মনোনীত করে। তিনি ছিলেন এ পদে প্রথম ভারতীয়। এ ছাড়া তিনি একই সঙ্গে হাউস অব কমন্স-এর একমাত্র ভারতীয় সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯০৬ সালে তিনি সরকারি চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
কে.জি গুপ্ত ছিলেন সমাজসেবক এবং ধর্ম সংস্কারক। ১৮৬৯ সালে তিনি ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। ১৩০০ বঙ্গাব্দে তিনি নিজ জমিদারি এস্টেট কাওরাইদে ব্রাহ্মমন্দির নির্মাণ করেন। ১৮৭১ সালে ঢাকায় রামমোহন রায় লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি এবং তাঁর পিতা কালীনারায়ণ গুপ্ত ছিলেন ঢাকা ও ময়মনসিংহে ব্রাহ্ম সমাজের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তিনি ১৯১৯ সালে নিজ এলাকা পাঁচদোনাতে ‘স্যার কে.জি গুপ্ত উচ্চ বিদ্যালয়’ এবং কাওরাইদে ‘কালীনারায়ণ গুপ্ত উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন।
কে.জি গুপ্ত তাঁর কর্মকান্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ‘কে.সি.এস.আই’ (কহরমযঃ ঈড়সসধহফবৎ ড়ভ ঃযব ঝঃধৎ ড়ভ ওহফরধ) উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি ছিলেন এ উপাধি প্রাপ্ত প্রথম ভারতীয়। ১৯২৬ সালের ২৯ মার্চ স্যার কে.জি গুপ্তর মৃত্যু হয়। তাঁর নামানুসারে ঢাকার ল²ীবাজারে একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে ‘কে.জি গুপ্ত লেন’। সূত্র : বাংলাপিডিয়া।