স্বাস্থ্যসম্মত দুধ উৎপাদনে খামারিদের উৎসাহিত করতে হবে

44

প্রাস্তুরিত তরল দুধ নিয়ে গোলেমালে দিন যাচ্ছে মাসাধিককাল ধরে। দেশের শহর থেকে গ্রামের লোকরা একসময় নিজের সন্তান-সন্ততিকে খাঁটি দুধ খাওয়ানোর জন্য দেশীয় জাতের গাভী লালন-পালন করতেন। ক্রমান্বয়ে কৃষি জমি হ্রাস পাওয়া এবং নগরায়নের বিস্তৃতির কারণে গাভী লালন কমতে শুরু করে, সেইসাথে বৃদ্ধি পায় বিদেশি জাতের গাভীর খামার ও পেকেটজাত প্রাস্তুরিত তরল দুধের বাজারজাত। দেশের অধিকাংশ মানুষ এখন নিজের এবং সন্তান-সন্ততিদের জন্য বিভিন্ন কোম্পানির খামারের প্রাস্তুরিত তরলদুধের উপরই নির্ভর করতে হয়। বিশ্বাস এ দুধেই পুষ্টি মিলবে। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে এ তরল দুধ নিয়ে নান কথা চাউড় হতে থাকে। কোন কোন সময় শোনা গেছে এসব দুধে সিসা মিশ্রণসহ নানা ভেজাল দ্রব্য রয়েছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় তৈরি মিল্ক ভিটা নিয়েও অনেক কথা কানে আসলেও তা নিয়ে গ্রাহকদের তেমন মাথাব্যথা ছিলা বলে আমাদের মনে হয় না। তবে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক গবেষক কর্তৃক-এ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক ও সিসা এসব দুধে উপস্থিত রয়েছে মর্মে প্রদত্ত রিপোর্ট তোলপাড় পড়ে গেছে দেশব্যাপী। সে সাথে আদালতের নির্দেশনাও জারি হয়েছে প্রথমে ১১টি কোম্পানির বিরুদ্ধে পরবর্তীতে আরো ৩টিসহ ১৪ কোম্পানির বিরুদ্ধে। আদালত কয়েকদফা পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর সর্বশেষ এসব কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন ও বিপণন পাঁচ সপ্তাহের জন্য বন্ধের যে নির্দেশ দিয়েছেন আমরা মনে করি, আদালতের এ নির্দেশ যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। প্রয়োজনে এ জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং এর উদ্যোগ প্রয়োজন। কেননা এসব দুধ কোনোভাবেই বাজারজাত করা যাবে না। তবে আমাদের প্রশ্ন দেশের মানুষ, শিশু-কিশোর এ মূহূর্তে কোন দুধ পান করবে তারও একটি নির্দেশনা আসা জরুরি। একইসাথে এতগুলো কোম্পানীর খামার ও এখানে যে জনবল আছে তাদের জীবন-জীবিকার বিষয়টিও মানবিক বিবেচনায় আসা বাঞ্চনীয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল দলের এক বিশেষ সভায় লন্ডন থেকে টেলিকনফারেন্স-এ অংশগ্রহণ করে বলেছেন, দুধের এ সংকট সৃষ্টির পেছনে কোন স্বার্থান্বেষী মহলের দুরবিসন্ধি রয়েছে কিনা তা হাতিয়ে দেখা জরুরি। একইসাথে তিনি গুড়ো দুধের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হওয়া প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য এসময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। কারণ সম্প্রতি দেশে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একটি মহল সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির প্রয়াসে লিপ্ত রয়েছে। সাথে আমরা অবশ্যই আশা করি, যেসব কোম্পানির তরল দুধে ভেজাল দ্রব্য পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে এবং আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কোম্পানিগুলো নিজ বিবেচনায় এবং দায়িত্বেই বাজার থেকে এসব দুধ সরিয়ে নেবে। তারা আদালতের প্রতি সম্মান রেখে তাদের পাস্তুরিত তরল দুধ স্বাস্থ্য উপযোগী করার উদ্যোগ নেবে।
উল্লেখ্য, পাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিক, সিসা, ডিটারজেন্ট, ফরমালিন, ব্যাকটেরিয়াসহ ক্ষতিকর উপাদান থাকায় এর বিরুদ্ধে গত বছর রুল জারি করেন আদালত। আশা করা হয়েছিল, এ রুল জারির পর দুধ উৎপাদনকারী এবং সংশ্লিষ্ট তদারক প্রতিষ্ঠান দুধ পরিশুদ্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু তারা তা করেনি। তাই আদালতের আদেশ দেয়ার প্রয়োজন হয়। আদালতের নির্দেশের পর চারটি ল্যাবে দুধের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পরীক্ষায় দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও সিসার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
আমরা মনে করি, খাদ্যে ভেজাল দেয়া কোম্পানিগুলো যতই প্রভাবশালী হোক, কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। এটি শুধু মুনাফার বিষয় নয়, সুস্থ-সবল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার মতো মৌলিক বিষয় এর সঙ্গে জড়িত। ফলে খাদ্যদ্রব্যে ভেজালের উপস্থিতি কোনোভাবেই মেনে নেয়ার সুযোগ নেই।