স্বাস্থ্যমন্ত্রী বললেন রিজেন্টের বিষয়ে তিনি জানতেন না

67

লাইসেন্সহীন রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চুক্তির বিষয়টি আগে জানা ছিল না বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় বিতর্কিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সাহেদের এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তির জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দিকে আঙুল তোলার পর এই দাবি করলেন তিনি। জাহিদ মালেক বলেছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুরোধে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনি। এই বিষয়টি ধরে গত কয়েকদিনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ চললেও মন্ত্রী দাবি করছেন, অধিদপ্তরের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কোনো ‘সমস্যা’ নেই।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় গত ২১ মার্চ রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চুক্তি হয়। ওই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ কয়েকজন সচিব উপস্থিত ছিলেন। ভুয়া সনদ দেওয়া, রোগীর কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়াসহ রিজেন্ট হাসপাতালে নানা অনিয়মের খবর র‌্যাবের অভিযানে প্রকাশ্য হওয়ার পর ওই চুক্তি বাতিল করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে এর মালিক সাহেদ পালিয়ে যাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি এখনও।
বিতর্কিত রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি করা নিয়ে সমালোচনার মুখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ১১ জুলাই দাবি করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের’ নির্দেশে ওই চুক্তি করা হয়েছিল।
এর পরদিন মন্ত্রণালয় থেকে অধিদপ্তরকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ বলতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাকে বুঝিয়েছে, সে বিষয়ে তিন কার্যদিবসের মধ্যে মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদকে ‘সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা’ দিতে হবে।
ওই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার আগে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সামনে এসে জাহিদ মালেক এনিয়ে মুখ খোলেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা ডিজি অফিসে একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ছিল। সেখানে সচিবরাসহ অন্যান্য বক্তিরাও ছিল। ওখানে ডিজির অনুরোধে যে আপনারাও একটু থাকেন চুক্তি স্বাক্ষর হবে। কী স্বাক্ষর হবে.. রিজেন্টের সাথে স্বাক্ষর হবে। তো আমরাও সেখানে ছিলাম।
“আমরাও খুশি ছিলাম যে একটা নতুন হাসপাতাল আসল করোনার চিকিৎসা দিবে। প্রাইভেট তো তখন করোনার চিকিৎসা দিতে দ্বিধা করছিল।”
রিজেন্টকে বাছাই করার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকা ছিল না দাবি করে মন্ত্রী বলেন, “হাসপাতালকে নিয়োগ দেওয়ার কাজ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রক্রিয়া মেনে তাদের নিয়োগ করা হয়েছে।”
রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে মন্ত্রণালয় কোনো নির্দেশনা দেয়নি দাবি করে তিনি বলেন, “মন্ত্রণালয় কোনো নির্দেশনা দিলে তো ফাইলেই থাকত। সেটার ব্যাখ্যা দিলেই তো পাবেন। আমরা অপেক্ষা করি, দেখি কী ব্যাখ্যা দেয়।”
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জেকেজি ও রিজেন্ট হাসপাতালের অনৈতিক কর্মকাÐ কতটুকু হয়েছে, তা সরকার খতিয়ে দেখছে।
“দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের কঠোর বিচার করতে হবে এবং তাদেরকে প্রশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধেও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।”
করোনাভাইরাসের পরীক্ষা নিয়ে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা জেকেজি হেলথ কেয়ারের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দাবি করেছিল, এর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ করা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ওভাল গ্রুপ লিমিটেডের মালিক আরিফুল চৌধুরীর এই প্রতিষ্ঠান এভাবে প্রতারণা করবে তা তাদের ধারণায় ছিল না।
এদুটি ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের মধ্যে দূরত্ব অনেকটাই স্পষ্ট। মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও এই প্রসঙ্গ তুলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে বলেছেন।
সমন্বয়হীনতা নিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কোনো সমস্যা নেই, এটি সাময়িক ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হতে পারে।
তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে মন্ত্রণালয় প্রশাসনিকভাবে কোনো কাজের ব্যাখ্যা চাইতেই পারে, এটি সরকারি কাজের একটি অংশ। মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর দুটিই সরকারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।”