স্বাধীনতার তাবৎ চেতনার বৃত্তে বঙ্গবন্ধু

178

আজ লালসূর্যোদয়-প্রাতে দিক হতে দিকে/
ছড়িয়েছে খবর, মুখরিত এই দিন/
যতদূর বাংলাভাষা ততদূর বাঙালির আনন্দ উল্লাস/
আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস,/
পত পত উড়ে পতাকা সবুজে রক্তে রঙিন।/
আজ কানে কানে গুঞ্জরে সাতই মার্চের বজ্রকণ্ঠের বাণী,/
অবাক বিশ্ব শুনেছে মুজিবের লালসূর্য ছৌঁঁয়ার কাহিনী।/
বিশ্বের মানচিত্রে আজ শান্তির অমিয়বাণী, সবুজের বুকে শহীদের রক্তলালে সূর্য আঁকা পতাকা উড়িয়ে আবির্ভূত হলো যে ‘বাংলাদেশ’ নামক স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ, তার মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্ন পুরণ তাঁর হাতে।
জন্ম থেকে জ্বলছিল হাজার বছরের ঐতিহ্য-কৃষ্টি বুকে ধরে বঙ্গ বরেন্দ্র হরিকেলের একটি দুর্বার প্রজাতি ‘বাঙালি’। পদ্মা মেঘনা যমুনা লুসাই, কর্ণফুলী ধলেশ্বরীর উর্মীল সঙ্গমে, ইতিহাস, ভৌগোলিক, নৃ-তাত্বিক দর্পণে যারা খোঁজে বেড়িয়েছে নিজেদের অস্তিত্বের সার্বভৌম। বারেবারে অশান্তি, ঝঞ্ঝা, আঁধার নামে এ’জাতির অনিশ্চিত বাসভ‚মে। গৃহহীন বাঙালি তার গৃহের সন্ধানে, ভাষা হারা বাঙালি তার মায়ের ভাষা বাংলার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছে। লড়াই করেছে। বার বার তার স্বাধীকার স্বাধীনতা-আন্দোলন পিষ্ঠ হয়েছে, রক্তলাল হয়েছে স্বদেশী বিদেশী হায়েনার নখ-দন্তে আঘাতে। দুর্লঙ্ঘ প্রাচীরে তার উচ্চশির আঘাত খেয়ে লহু-লোহান হয়েছে। রাহাবরদার, লৌহ মানব-নেতা আর সঠিক বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অভাবে তার কোন আশাই পুরণ হয়নি। অবশেষে নির্ভয় নির্ভিক, মহাসৈনিক, সিপাহশালার, পরমপুরুষ, মুক্তির দূত, স্বাধীনতার সূর্যসৈনিক এলেন বঙ্গশার্দুল শেখ মুজিবুর রহমান। যাঁকে উপাধিত করা হয়, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’।
ছাত্রজীবন থেকেই শেখ মুজিবের ছিল নেতৃত্ব দেয়ার বিচক্ষণতা এবং প্রচন্ড সাংগঠনিক শক্তি। কোলকাতায় ইসিলামিয়া কলেজে অধ্যয়ন কালেই তিনি ছাত্র আন্দোলন ও পাকিস্তান আন্দোলনে তাঁর সাংগঠনিক ক্যারিশ্মা এবং প্রজ্ঞার কারণে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এ কে ফজলুল হক, শরৎ বসু, আবুল হাসিম ও খাজা নাজিমুদ্দীনের মত খ্যাতিমান নেতৃবৃন্দের ঘনিষ্ঠ সাহচর্য লাভে ধন্য হয়েছিলেন।
১৯৪৭ সালের আগস্টে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভাজন কার্যকর হলো। ( The poison of the two-nation theory, propagated by V D Savarkar since 1925, Which Jinnah recklessly adopted in1939 (ÔTowards Freedom’, Edited by Sucheta Mahajan. Oxford University press)

পাকিস্তান তো হলো। কিন্তু ভিন্ন ভাষা,ভিন্ন সংস্কৃতির পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠি তাদের থেকে বারোশত মাইল দূরে অবস্থিত বাঙালি জাতি অধ্যুষিত পূর্ববাংলার সমাজ, সংস্কার, ভাষা সংস্কৃতি সম্বন্ধে কিছুই অবগত ছিলনা। পূর্ববাংলার মানুষের ধর্মীয়-জোসকে শুধু পাকিস্তান হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিলো। ফলে পূর্ববাংলা ছিলো মূলতঃ বঞ্চনা, প্রতারণার শিকার। আর পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠির শোষণ ও লুটপাটের ক্ষেত্র মাত্র। স্বাধীনতার পর পরই তারা বাঙালির মাতৃভাষা বাংলার উপর আঘাত হানে। এলো ১৯৫২ সাল। বঙ্গবন্ধু ছিলেন মাতৃভাষা বাংলার জন্য নিবেদিত প্রাণ। তিনি ভাষা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। শেখ মুজিব শুধুমাত্র ভাষা-সংগ্রামী ছিলেননা, বাংলা ভাষা ভিত্তিক ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’র প্রবক্তাও। তিনি অবলোকন করলেন অর্থনৈতিক শোষণ, সর্বস্তরে বৈষম্য। সংখ্যা সাম্য উপেক্ষা। সেনাবাহিনীসহ সর্বস্তরে চাকুরি, পদ পদবি লাভে বঞ্চনা। পূর্ব বাংলা ও বাঙালির প্রতি উপেক্ষা। কালক্রমে শুরু হলো ভাষা স্বায়ত্ব শাসন স্বাধীকার স্বাধীনতা আন্দেলন। নেতৃত্বের সিপাহশালার শেখ মুজিবুর রহমান। স্বসস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া যে কোনকালে কোন দেশে মুক্তি বা স্বাধীনতা আসেনা, তা তাঁর জানা ছিলো। শুরু করলেন ধাপে ধাপে আন্দোলন সংগ্রামের প্রক্রিয়া।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি, ঢাকায় ছাত্রনেতা নঈমুদ্দিন আহমদকে আহব্বায়ক করে সর্বসন্মতিক্রমে “পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ” আত্মপ্রকাশ করে। নির্লোভ শেখ মুজিব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে না থেকে সরকারের বৈষম্যমূলক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আন্দেতালন সংগ্রামে রত থাকলেন। বিপ্লবী ছাত্রনেতা, অভাবনীয় সাংগঠনিক ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তাঁকে তখন অনেকের মধ্যে বিশিষ্ট একজনে পরিণত করেছে।
১৯৪৯ সালে ২৩ শে জুন ঢাকায় মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে পাকিস্তানের প্রথম বিরুধী দল, “পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিমলীগ” গঠিত হয়। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিব। ১৯৫২ সালে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। ১৯৫৩ সাল থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক।
মাওলানা ভাসানীর ইচ্ছানুসারে শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে দিয়ে ‘পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিমলীগ’ গঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধান ভ‚মিকা পালন করেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৯৫৩ সালে লাহোর গমন করেন। ঐ সালেই সোহরাওয়ার্দী ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সদস্যপদ লাভ করেন এবং তাঁকে আহাবায়ক করে ‘পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠন করা হয়।
১৯৫৪ সালে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর ‘যুক্তফ্রন্ট’র আকাশচুম্বি বিজয়ে এবং মুসলিম লীগের ভূমিধ্বস পরাজয়ের মূলেও ছিল শেখ মুজিবের সাংগঠনিক শক্তি ও সবল নেতৃত্ব। পূর্ব পাকিস্তানকে পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন দেয়ার অঙ্গিকারপত্রে স্বাক্ষর করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং আতাউর রহমান খান, শেখ মুজিব, আবুল মনসুর আহামদ সহ অনেকেই পূর্ব পাকিস্তানের মন্ত্রী হয়েছিলেন।
১৯৫৭ সালে ইতিহাসখ্যাত কাগমারী সন্মেলনে, পূর্ব পাকিস্তানকে পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন না দেয়া, সিয়াটো, সেন্টু চুক্তি বাতিল না করায় মাওলানা ভাসানী শহীদ সোহরাওয়র্দীর কঠোর সমালোচনা করে পশ্চিম পাকিস্তানকে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে বিদায় জানিয়ে মাওলানা ‘ন্যাশানাল আওয়ামী পার্টি’ গঠন করায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগে ভাঙন দেখা দেয়। ১৯৫৮ সালে মার্শাল’ল জারি হলে আওয়ামী লীগ নির্জিব হয়ে পড়ে। ১৯৬২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবন করতে চাইলে সোহরাওয়ার্দীর বাধায় ব্যর্থ হন।
১৯৬২ সালের দিকে শেখ মুজিবকে সামনে রেখে সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, শাহজাহান সিরাজ, ড. আহমদ শরীফ সহ বিপ্লবী কিছু ছাত্রনেতা, বুদ্ধিজীবী, ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’ গঠন করেছিলেন।
১৯৬৩ সারের ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়র্দী ইন্তেকাল করলে শেখ মুজিব পাকিস্তান আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেন। ১৯৬৪ সালে ‘সন্মিলিত বিরোধী দল (কপ) গঠন করা হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘কপ’র পসিডেন্ট পদপ্রার্থী মোহতরমা ফাতেমা জিন্নার পক্ষে পূর্ব পাকিস্তানে প্রধান নির্বাচন পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিব। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধকালে পূর্ব পাকিস্তান চির অরক্ষিত। সর্বোপরি পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত, অর্থ হারা, স্বাধীকার হারা।
তাই ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বাঙালির মুক্তিসনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা পেশ করেন। ছয় দফার মূলে ছিলো পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্ব শাসন, ভাষা ভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়ীকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির শপথ। শুরু হলো ধর্ম, বর্ণ, জাতপাত নির্বিশেষে পাকিস্তান বিরোধী দুর্বার গণআন্দোলন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে কারারুদ্ধ করা হলো। ১৯৬৯ এ শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে ৬ দফা ১১ দফার ভিত্তিতে দুর্বার গণআন্দোলন সৃষ্টি হলো। তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাক সরকার। রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ লক্ষ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়া হয়। ১৯৭০ এ সাধারণ নির্বাচন। ৬দফা তথা বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে পাকিস্তানে সংখ্যা গরিষ্ঠ আসন পেয়ে জয়লাভ। কিন্তু ইয়াহিয়া-ভুট্টু-সেনাচক্রের বেঈমানীতে সরকার গঠন করা গেলোনা। ১৯৭১’র ১ মার্চ থেকে শুরু অসহযোগ আন্দোলন। রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭১ এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা দিলেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক কুতর্ক কিছুই চলেনা। কারণ ৭ মার্চেই ৭/৮ লক্ষ জনতার সামনে স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণার পর আর কোন নেতা, কোন সেনানায়ক কখন কি বললেন, তার কোন রাজনৈতিক ভিত্তি নেই। তিনি ১ মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের শাসনভার নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছিলেন। তখন থেকে পূর্ব বাংলা কার্যতঃ স্বাধীন। সর্বোপরি ৩ মার্চ মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে এসে জানতে চাইলেন, ‘পাকিস্তানকে বাঁচানো যায় কিনা’? এব্যাপারে সেখানে উপস্থিত তাজ উদ্দিনের কাছে বঙ্গবন্ধু জানতে চাইলে তিনি জবাবে বলেন, “ .. .. জাতীয় পরিষদ দুইভাগে ভাগ হয়ে যাক-একটি পূর্ব, আর একটি পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য। প্রতিটি পরিষদ তার নিজ অংশের জন্য একটি সংবিধান লিখতে পারে”। রাও ফরমান আলীর মনে হলো, এটি একটি কনফেডারেশনের ফর্মুলা, ফেডারেশনের নয়। (সূত্র :হাউ পাকিস্তান গট ডিভাইডেড-রাও ফরমান আলী)
তা ছাড়া ৪ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসক সাহেবজাদা ইয়াকুব খান ঢাকার রাস্তা থেকে সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরিয়ে নেন। কার্যত ঐদিনই তিনি ‘বাংলাদেশে ‘পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব’ ছেড়ে দেন। (প্রাগুপ্ত,- সৌজন্যে, মহি উদ্দিন আহমদ) তবুও বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ধারা রক্ষা করে দুটি পথ উন্মুক্ত রেখেছিলেন। (এক) পাকিস্তানের অখন্ডতা। শর্ত-“সামরিক আইন মার্শাল’ল উইথড্র করতে হবে। সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকের ভেতর ঢুকতে হবে। যে ভাইদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের তদন্ত করতে হবে। আর জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। (দুই) বাংলাদেশের স্বাধীনতা। নির্দেশ- “এরপর যদি একটি গুলি চলে, এরপর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়- তোমাদের কাছে অনুরোধ রইল প্রত্যেকের ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তা দিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। .. .. প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলুন।.. যখন রক্ত দিয়েছি আরো দেব। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে তুলবো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।জয় বাংলা”।
১৯৭১ এর ২৫ মার্চের মধ্যরাতে প্রেসিডেন্ট ইয়হিয়ার নির্দেশে ‘অপারেশান চার্চলাইট’ নামে নির্মম ভাবে বাঙলি হত্যার সাথে সাথে পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার শর্ত অটোমেটিক্যালি বিলুপ্ত হয়ে যায এবং বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা সংগ্রামের নির্দেশ কার্যকর হয়েছে। তাই নতুন করে স্বাধীনতা ঘোষণার প্রয়োজন পড়েনা। তবুও মুজিব নগরে ‘বিশ্বজনমতকে অবহিত এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সরকার পরিচালনার নিমিত্তে স্বাধীনতার যে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়, তাতে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে।
১০ এপ্রিল (১৯৭১) মুজিবনগরে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
“ÒTHE PROCLAMATION OF INDEPENDENCE”.
Mujibnagar, Bangladesh. >> PZz_© c„ôvq †`Lyb
>> Z…Zxq c„ôvi ci
Dated 10th day of April, 1971.
Whereas free election were held .. .. ÒWhereas in the fact of circumstences of the such treacherous conduct Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahaman, the undisputed leader of the 75 million people of Bangladesh, in due fulfillment of the legitimate right of the people of Bangladesh, duly made a declaration of independence at dacca on March 26,1971,and urged the people of Bangladesh to defend the honour and integrity of Bangladesh.”
এরপর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন তোলা দেশদ্রোহিতার সামিল। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এ নির্যাতিত, নিগৃহীত, শোষিত, অর্থনৈতিক-সুবিদা বঞ্চিত বাঙালি জাতিকে স্বাধীকার, স্বাধীনতা আন্দোলনে উজ্জীবিত করেছে। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় সহকর্মি তাজ উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতা সংগ্রামের জয়যাত্রা। তাঁর নামে গঠিত মুজিব নগরে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করা হয়। সরকার গঠন করা হয়। প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। মুক্তিযোদ্ধাদের অন্তর জুড়ে শেখ মুজিব। শ্লোগান ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’। ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রাণের বিনিময়ে এলো কাঙ্খিত স্বাধীনতা। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বাঙালির ‘জাতী রাষ্ট্র’। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন সার্রভৌম ‘বাংলাদেশ’ মানচিত্রে সাকার করেছে।
কেন বঙ্গবন্ধুু বিশ্বনেতা? দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভাজনের জন্য অবাঙালি ভি ডি সাভারকার, এম এস গোলওয়াকার, প্যাটেল. আচার্য কৃপালিনী, লালা লাজগত রায় (আর্য সমাজ, গৌ রক্ষা সমিতি), লোকমান্য তিলক (গণেশ পূজা, শিবাজি উৎসব) গান্ধি ( হিন্দু, হিন্দি, হিন্দুস্থান তথা রামরাজ্যের স্বপ্নদ্রষ্ঠা), মতিলাল নেহেরু (কেবিনেট মিশনের স্বিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ভারত বিভাজনের জেদ), জিন্নাহ, লিয়াকত আলী খান, সর্দার আবদুর রব নিস্তার, মাওলানা আজাদ সহ তৎকালীন সর্ব ভারতীয় সাম্প্রদায়ীক নেতৃবৃন্দই দায়ী। এঁরা সবাই যেখানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কাছে পরাজিত হয়েছেন, সেখানে বঙ্গবন্ধু ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ একটি অসাম্প্রদায়ীক স্বাধীন সার্বভৌম দেশের স্থপতি পুরুষ। “বঙ্গবন্ধুর অতুলনীয় কৃতিত্ব এখানে যে, তিনি বাংলাদেশে চারটি ধর্মে বিভক্ত অসম ও অসমন্বিত উপাদানে গঠিত বাঙালি জাতির এবং প্রায় ঊনপঞ্চাশটি ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বাকে একই জাতীয়তাবাদী (বাঙালি) আন্দোলনে অটুট ঐক্যে গথিত করে একটি জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন। এ; রকম সাফল্য নজিরবিহীন”। (শেখ মুজিব কেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশ রাষ্টের শ্রষ্টা এবং বাঙালি জাতির পিতা শামসুজ্জামান খান)
তাঁর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনসহ বিশ্ব ব্যক্তিত্বদের সাথে মহান ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে ‘ইউনেসকো’তে গৌরবোজ্বল স্থান লাভ করেছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু ‘জুলিয় কুরি’ শান্তি পদক লাভ করেন। জাতিরাষ্ট্র ও জাতির পিতার তাত্ত্বিক ভাবনা প্রসঙ্গে জার্মান দার্শনিক ‘হেগেল’ বলেন, ÒThe Great man of the age is one who can put into words the will of his age, what its will is, and accomolish it. What he does is the heart and essence of his age, he actualizes his age.” (Philosophy of Right) শেখ মুজিব তাঁর যুগের ইচ্ছা ও এষণাকে (Will of his age) বাস্তবে রূপ দিয়েছেন (actualize his age)
বৃটিশ পার্লামেন্ট সদস্য খড়ৎফ ঋবহহবৎ ইৎড়পশ বলেন, Lord Fenner Brock e‡jb, ÒIn sense, Shaikh Mujib is a great leader than George Washington, Mahatma Gandhi and De Valera”.
তাই ইতিহাস ও দেশ বিদেশের মণিষীদের সংজ্ঞা, তত্ব. তথ্য বিশ্লেষণ করে নিঃসন্দেহে বলা যায, শেখ মুজিব শুধু বাঙালি জাতির পিতা, শুধুমাত্র বাংলাদেশ-রাষ্ট্রের স্রষ্টা নন, তিনি বিংশ শতাব্দীর একটি যুগের স্রষ্টা। যে যুগের নাম ‘মুজিব যুগ’। (‘গঁলরন ঊৎধ’) এবং সফল রাষ্ট্রনায়ক, জাতিরাষ্ট্রের স্রষ্টা, জাতিরজনক, সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ-বিশ্বব্যক্তিত্ব, যুগস্রষ্টা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান শুধুই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নন, শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ। বিশ্বনেতা।