স্বাগতম : হে আল্লাহর ঘরের মেহমানেরা

105


মহান আল্লাহর ঘরের মেহমানদের প্রতি সালাম ও অভিনন্দন। সালাম ও শুভেচ্ছার সাথে তাদের সর্বাত্মক সুস্থতা ও সফলতা কামনা করছি। সমস্ত মেহমানের উৎকৃষ্ট মেহমান হলো আল্লাহর ঘরের মেহমান হাজী সাহেবান। তারা আল্লাহর জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ মেহমান। ছেলে সন্তান আত্মীয় স্বজন সহায় সম্পত্তি সবকিছু সাময়িক সময়ের জন্য ত্যাগ করে সব ধরনের দুনিয়ার মায়া মমতা ছেড়ে দিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যেই পবিত্র হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে সবকিছু ত্যাগ করে দেশের মাটি ছেড়ে চলে যাবে। সামর্থ্যবান এসব মহান মানুষদের প্রতি অত্যাধিক ভালোবাসা অন্যসব মানুষের দেখা চায়। যাদের হজ্ব পালন করার মতো সামর্থ্য ও অর্থ রয়েছে তারাই মূলত হজ্বের মতো ব্যয়বহুল ও শারীরিক পরিশ্রমের ইবাদতে মশগুল হন। তাই এসব হাজী সাহেবান অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধার দাবিদার। সমাজ, রাষ্ট্র তাদেরকে অবশ্যই হজ্ব সম্পন্ন করতে দেশ বিদেশে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে এগিয়ে আসবে। এ ফরজ ইবাদত আল্লাহ এবং আল্লাহর রসূলের দয়া ছাড়া কারো পক্ষে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট হজ্ব কাফেলা দেশের প্রশাসন সুস্থ ও সুন্দরভাবে হজ্ব সম্পন্ন করতে হাজী সাহেবানদের প্রশাসনিক সহযোগিতা করেন। কিন্তু হজ্বের ফরজ ওয়াজিব সুন্নাতসহ সমস্ত আনুষঙ্গিক নিয়ম কানুন একজন হাজীকেই সম্পন্ন করে ইবাদত পরিপূর্ণ করতে হয়। আল্লাহর ঘরের মেহমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মেহমান। বাংলাদেশে কতিপয় অসাধু হজ্ব এজেন্সি এসব হাজীদেরকে নিয়ে অসাধু ব্যবসা করে অনৈতিক পথে অর্থ উপার্জনের জন্য হাজীদের কষ্ট দিয়ে থাকে। সহজ সরল গাঁ গ্রামের মুসল্লিরা কাফেলার মারপ্যাঁচ না বুঝে তাদের পাতানো জালে ঢুকে যায়। ফলে এসব মুসল্লিদের অনেকেই তাদের কারসাজির মধ্যে পড়ে শেষ পর্যন্ত অর্থ এবং হজ্ব দু’টোই আনজাম দিতে পারে না। পথে পথে ঘুরতে হয় ওইসব অবৈধ হজ্ব কাফেলার কারণে। অন্যের লাইসেন্স ও ঠিকানা ব্যবহার করে কতিপয় মানুষ প্রতিবছর হজ্ব মৌসুম আসলে হাজীদের এসব ভোগান্তির মধ্যে ফেলে। তখন হাজীদের নিস্তার পাওয়ার আর পথ থাকে না। এ ধরনের পরিস্থিতি হজ্বের মৌসুমে দেখা যায়। সরকারের পক্ষে ব্যাপকভাবে ওইসব এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রচেষ্টা দেখা গেলেও তবুও অসাধু এজেন্সিগুলোর চেষ্টা বন্ধ থাকে না। আমাদের বক্তব্য হলো যেভাবেই হোক আল্লাহর ঘরের মেহমানদের কোনো অবস্থায় ভোগান্তিতে ফেলা যাবে না। দেশের ও বিদেশের মাটিতে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে মহান এ ইবাদত আনজাম দিতে সাহায্য করতে হবে। যারা এ ইবাদত করার নিয়ত করেছেন তারা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পদ পদবীর সাথে তাদের সম্পর্ক। এসব মানুষকে বুঝে না বুঝে খেয়াল ও বেখেয়ালে কষ্ট দেয়া কোনো অবস্থায় সমুচিত নয়। আল্লাহর মেহমান হিসেবে তারই বান্দারা তাঁকে সন্তুষ্ট করতে হজ্বব্রত পালন করতে যান। রাষ্ট্রীয় সমস্ত শাখাগুলো যেনো তাদেরকে সর্বাত্মক সম্মান ও সহযোগিতা প্রদান করেন। ৪ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের হাজীগণ সৌদিতে প্রবেশ করবেন। এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লক্ষ ২৭ হাজার ১৫৮ জন হজ্ব যাত্রী পবিত্র হজ্ব পালনে সৌদি আরব যাবেন। সরকারি বেসরকারি ব্যস্থাপনায় যাওয়া এসব হাজীদের সর্বাত্মক সুরক্ষা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ফ্লাইট সিডিউল শৃঙ্খলাপূর্ণ রাখতে হবে। ফ্লাইটে যাওয়া আসার সময় অহেতুক বিমান বন্দরে হাজীদের হয়রানি ও ভোগান্তি কোনো অবস্থায় মেনে নিতে পারি না। সংশ্লিষ্ট কর্মচারি কর্মকর্তাদের অবৈধ চাহিদা বন্ধ করতে হবে। আল্লাহর ঘরের মেহমানদের সুশৃঙ্খল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিমান বন্দরের ভোগান্তির কথা কম বেশী আমরা সকলেই জানি। সারাবছর এসব ভোগান্তি চলে আসছে। অন্তত পক্ষে হাজী সাহেবানদের এয়ারপোর্ট ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই। হাজী সাহেবানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখে বলবো বাংলাদেশ থেকে যারা হজ্বে যাবেন তারা যেনো বাংলাদেশের মানুষের শান্তি শৃঙ্খলার জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করেন। পরিবার পরিজন সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বাত্মক মঙ্গলের জন্য দোয়া করেন। দেশ বিরোধী যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত থেকে হাজী সাহেবানদের অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। দেশের সম্মান সুনাম ক্ষতি হয় এমন ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ইবাদতের সাথে দেশের সুনাম মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশের অব্যাহত সুনাম অগ্রগতি উন্নতির জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। অহেতুক ঝামেলা এড়িয়ে চলে কায়িক পরিশ্রম করে মহান হজ্বকে পরিপূর্ণভাবে আদায় করতে হবে। মনে রাখতে হবে হজ্ব একটি কষ্টসাধ্য ইবাদত। আরাম আয়েশের নাম হজ্ব নয়। সুতারাং হজ্বে আরামের কথা চিন্তা না করে ইবাদত হিসেবে হজ্ব সম্পন্ন করতে সকল হাজীদের সার্বিক প্রস্তুতি থাকতে হবে। বাংলাদেশের মুসলমানদের পক্ষ হতে অজ¯্র ও অগণিত সালাম জানাতে যেনো আপনারা ভুল না করেন। বিশ্বের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লী হাজী সাহেবানদের সাথে সুর মিলিয়ে এদেশের কোটি কোটি মুসল্লীদের সালাম জানাতে ভুলবেননা প্রিয় নবীর কদমে পাকে। দেশ জাতি মুসলিম বিশ্বের শান্তি সমৃদ্ধি আর কল্যাণের প্রত্যাশা রাখলাম।
লেখক : প্রাবন্ধিক