স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় চার আসামি রিমান্ডে

48

স্বর্ণের দুই চালান আটকের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত চারজনকে পৃথক মামলায় রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল সোমবার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এবং জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী সাহাবুদ্দিন আহমদ বলেন, স্বর্ণসহ গ্রেপ্তারের ঘটনায় করা মামলায় পুলিশ দু’জনকে ১০ দিনের রিমান্ডে চেয়েছিল। মুখ্য মহানগর হাকিম মহিউদ্দিন মুরাদের আদালতে শুনানি
শেষে আদালত প্রত্যেককে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
এই দুইজন হলেন, প্রলয় কুমার সাহা এবং বিলাল হোসেন কাদের। গত রবিবার সকালে সিআরবি এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে তল্লাশি চালিয়ে ১০০টি সোনার বারসহ এই দুজনকে প্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রবর্তক মোড় থেকে নারায়নগঞ্জের উদ্দেশ্যে এসব সোনার বার নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান। উদ্ধার হওয়া এসব স্বর্ণের বারের মোট ওজন ১১ কেজি ৬৬২ গ্রাম। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
এদিকে একই দিন দুপুরে মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার সোনার পাহাড় এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রামে মহাসড়কে একটি জিপে তল্লাশি চালিয়ে মোট ৬০০টি সোনার বার উদ্ধার করে পুলিশ। এসব বারের ওজন মোট ৬০ কেজি এবং বাজার মূল্য প্রায় ২৪ কোটি টাকা। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার মো রফিক ও মো. করিমের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
জেলা আদালতের পরিদর্শক (প্রসিকিউশন) বিজন কুমার বড়ুয়া বলেন, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালতে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেককে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

স্বর্ণের উৎস ও
গডফাদারের
খোঁজে পুলিশ

ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানার উত্তর সোনাপাহাড় এলাকা থেকে পুলিশের হাতে উদ্ধার হওয়া ৬০০ পিস স্বর্ণের বারের উৎস ও স্বর্ণ চোরাচালানের গডফাদারদের খোঁজে নেমেছে পুলিশ। একই সঙ্গে নগরের সিআরবি এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া ১০০ পিস স্বর্ণের বারের উৎসের সন্ধানে কাজ করছে পুলিশ।
গতকাল সোমবার ছোটপুলে জেলা পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার নুরেআলম মিনা বলেন, ‘স্বর্ণের উৎস ও স্বর্ণ চোরাচালানের গডফাদারদের খুঁজে বের করতে কাজ শুরু করেছে পুলিশ’। তিনি বলেন, ‘জোরারগঞ্জে গ্রেপ্তার দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা নিজেদের তথ্য ছাড়া এখনও তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেননি। রিমান্ডে এনে আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’। নুরেআলম মিনা বলেন, ‘স্বর্ণগুলোর উপর ইউএই লেখা রয়েছে। এর মানে এসব স্বর্ণ দুবাই থেকে বাংলাদেশে এসেছে। তবে কিভাবে বা কোন মাধ্যমে এসব স্বর্ণ বাংলাদেশে এসেছে তা আমরা বলতে পারবো না। তদন্তসাপেক্ষে তা বের করা হবে’। খবর বাংলানিউজের
গত রবিবার দুপুরে একটি পাজেরো মিতসুবিশি জিপগাড়িতে করে পাচারের সময় জোরারগঞ্জের উত্তর সোনাপাহাড় এলাকা থেকে ৬০০ পিস স্বর্ণের বারসহ করিম খান কালু ও রাকিব নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ। এর আগে নগরের সিআরবি এলাকা থেকে প্রাইভেটকারে করে পাচারের সময় ১০০ পিস স্বর্ণের বারসহ লাভু শাহা প্রকাশ প্রলয় কুমার শাহা ও বিলাল হোসেন প্রকাশ কাদেরকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম।
গ্রেপ্তার হওয়া স্বর্ণ চোরাচালানকারী চক্রের চার সদস্য উদ্ধার হওয়া দুইটি স্বর্ণের চালান সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বাংলাদেশে এসেছে বলে স্বীকার করেছে। দুই চালানের স্বর্ণের উপর ইউএই লেখা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।
জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জোরারগঞ্জে উদ্ধার হওয়া স্বর্ণ রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকা থেকে গাড়িতে নেওয়া হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ তথ্য যাচাই-বাছাই হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে করিম ও রাকিব নিজেদের বহনকারী বলে দাবি করেছে। তবে তারা এর আগেও কয়েকবার একই কায়দায় স্বর্ণের চালান নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে’। ওই কর্মকর্তা জানান, করিম ও রাকিবের কাছ থেকে মোট ছয়টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। ফোনের কল রেকর্ডে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। করিম ও রাকিব যাদের কাছ থেকে স্বর্ণগুলো নিয়েছেন এবং যাদের কাছে পৌঁছে দেবেন তাদের সঙ্গে ভিওআইপি নম্বরে কথা বলেছেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর জোন) এসএম মোস্তাইন হোসেন বলেন, ‘গ্রেপ্তার দুইজনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাদের মাধ্যমে স্বর্ণ চোরাচালানের গডফাদারদের খুঁজে বের করা হবে’। তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর বারসহ লাভু শাহা প্রকাশ প্রলয় কুমার শাহা ও বিলাল হোসেন প্রকাশ কাদের পুলিশকে জানিয়েছে- তারা বদনা শাহ মাজার এলাকা থেকে স্বর্ণগুলো গাড়িতে নিয়েছে। তবে যারা দিয়েছে তাদেরকে চিনেনা বলে দাবি করেছে’। এসএম মোস্তাইন হোসেন বলেন, ‘লাভু শাহা প্রকাশ প্রলয় কুমার শাহা ও বিলাল হোসেন প্রকাশ কাদের এর আগেও কয়েকবার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় স্বর্ণ নিয়ে গেছে’।