স্বর্ণকুমারী দেবী (১৮৫৫-১৯৩২)

86

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম উল্লেখযোগ্য নারী সাহিত্যিক হিসেবে স্বর্ণকুমারী দেবী পরিচিত। এ বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সঙ্গীতকার ও সমাজ সংস্কারক ১৯৩২ সালের এই দিনে (৩ জুলাই) কলকাতায় মারা যান। সেই যুগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বর্ণকুমারী দেবীর মতো নারী সাহিত্যিকের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। তিনি ছিলেন শিক্ষিত বাঙালি নারীসমাজের প্রথম যুগের অন্যতম প্রতিনিধি। স্বর্ণকুমারী দেবী ১৮৫৫ সালের ২৮ আগস্ট কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দ্বারকানাথ ঠাকুরের নাতনি ও দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্থ মেয়ে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ে পাঁচ বছরের বড় ছিলেন স্বর্ণকুমারী। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ছেলেমেয়েদের শিক্ষার পরিবেশ ছিল। স্বর্ণকুমারী দেবী বাড়িতেই লেখাপড়া শেখেন। ১৮৬৮ সালে জানকীনাথ ঘোষালের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের তিন সন্তান হিরন্ময়ী দেবী, জ্যোৎস্নানাথ ঘোষাল ও সরলা দেবী চৌধুরাণী।
সঙ্গীত, নাটক ও সাহিত্যে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পুরুষ সদস্যদের সৃষ্টিশীলতা স্বর্ণকুমারী দেবীকেও স্পর্শ করেছিল। এই সময় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর এই তিন ক্ষেত্রে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছিলেন। তাকে সাহায্য করছিলেন অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী ও রবীন্দ্রনাথ। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবন-স্মৃতি থেকে জানা যায়, জানকীনাথ ইংল্যান্ডে গেলে স্বর্ণকুমারী দেবী জোড়াসাঁকোয় এসে থাকতে শুরু করেন। এই সময় তিনিও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মেতে ওঠেন।
১৮৭৬ সালে স্বর্ণকুমারী দেবীর প্রথম উপন্যাস ‘দীপনির্বাণ’ প্রকাশিত হয়। এর আগে ১৮৫২ সালে হানা ক্যাথরিন মুলেনস ‘ফুলমণি ও করুণার বৃত্তান্ত’ প্রকাশ করে বাংলা ভাষার প্রথম ঔপন্যাসিকের মর্যাদা লাভ করেছিলেন। অন্যদিকে স্বর্ণকুমারী ছিলেন প্রথম বাঙালী নারী ঔপন্যাসিক। ‘দীপনির্বাণ’ ছিল জাতীয়তাবাদী উপন্যাস। এর পর তিনি একাধিক উপন্যাস, নাটক, কবিতা, গান ও বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রবন্ধ রচনা করেন। ১৮৭৯ সালে স্বর্ণকুমারী দেবী প্রথম বাংলা গীতিনাট্য (অপেরা) ‘বসন্ত উৎসব’ রচনা করেন। পরবর্তীকালে এ ধারা অনুসরণ করেন রবীন্দ্রনাথ।
স্বর্ণকুমারী দেবীর লেখনির মধ্যে রয়েছে- উপন্যাস : দীপনির্বাণ (১৮৭৬), মিবার-রাজ (১৮৭৭), ছিন্নমুকুল (১৮৭৯), মালতী (১৮৭৯), হুগলীর ইমামবাড়ি (১৮৮৭), বিদ্রোহ (১৮৯০), স্নেহলতা (১৮৯২), কাহাকে (১৮৯৮), ফুলের মালা (১৮৯৫), বিচিত্রা (১৯২০), স্বপ্নবাণী (১৯২১), মিলনরাতি (১৯২৫) ও সাব্বিরের দিন রাত (১৯১২)। নাটক : বিবাহ-উৎসব (১৮৯২), রাজকন্যা ও দিব্যকমল। কাব্যগ্রন্থ : গাথা, বসন্ত উৎসব ও গীতিগুচ্ছ। বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রবন্ধ : পৃথিবী। ১৯২৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণকুমারী দেবীকে জগত্তারিণী স্বর্ণপদকে সম্মানিত করে। ১৯২৯ সালে তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন। সূত্র : ইন্টারনেট