স্থাপনা নির্মাণে কৃষিজমি জলাধার যেন নষ্ট না হয়

36

স্থাপনা নির্মাণের সময় কৃষিজমি ও জলাধার যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে প্রকৌশলীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দেশে শিল্পায়ন যেন দ্রুত হয় সেজন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হচ্ছে। এসব প্রকল্প গড়ে তোলার সময় আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, কৃষি জমি যাতে নষ্ট না হয়। জলাধারের যেন ক্ষতি না হয়। নদী ও খালবিল বাঁচাতে হবে। এতে পরিবেশ সুন্দর থাকে।’ গতকাল শনিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন-বাংলাদেশের (আইইবি) চার দিনব্যাপী ৫৯তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।-খবর বাংলা ট্রিবিউনের
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কৃষিকে আধুনিকীকরণ করতে চাই, যান্ত্রিকীকরণ করতে চাই। শিক্ষিত লোকজন যাতে কর্মবিমুখ না হয়, তারা যেন প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষির সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে পারেন। এ জন্য গবেষণাও দরকার। কোন কোন ক্ষেত্রে গবেষণা দরকার, সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিই। গবেষণার মাধ্যমে আমাদের দেশের মাটি মানুষের উপযোগী করে নতুন নতুন উদ্ভাবন করতে হবে। এভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি তা খেলায় রাখতে হবে সেটি মাথায় রেখেই উৎপাদন করতে হবে।’
জলাধার রক্ষার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জলাধার রক্ষা করা দরকার। রাস্তা বা কোনও স্থাপনা নির্মাণের সময় এটি খেয়াল রাখতে হবে। ঢাকা শহরে খাল-পুকুর এখন পাওয়া যায় না। আগুন লাগলে পানি পাওয়া যায় না। জেল খানার পুকুর থেকে পানি সাপ্লাই দেওয়া হয়েছে চকবাজারের অগ্নিকান্ডে। জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হাইওয়ে করার সময় দেখতে হবে, যেন পাশে জলাধার থাকে। আমাদের প্রাকৃতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ যেন দ্রæত হয় সেজন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোরলেন করেছি। রেলের ডাবল লাইন করেছি। রেলের ক্ষেত্রে সারাদেশে একটি নেটওয়ার্ক করার পরিকল্পনা আছে। মিটারগেজকে ব্রডগেজ করার পরিকল্পনা করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জলবায়ু লক্ষ করে হাসপাতালসহ ভবন নির্মাণ করতে হবে। বৃষ্টি-রোদ এগুলো লক্ষ রেখে স্থাপনা করতে হবে। যেটি নির্মাণ করা হচ্ছে সেটি আমাদের দেশের জন্য যথার্থ কিনা তা বিবেচনা করতে হবে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘খাদ্য, পুষ্টি, জীবনমান উন্নয়নে পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। কোনও কাজ করার আগে থেকে আমাদের পরিকল্পনা থাকে। গত পাঁচ বছরে খাদ্যে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একসময় দেশে ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মধ্যে মোবাইলফোন ছিল, প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল না বললেই চলে। আমরা ক্ষমতায় এসে প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছি। মানুষের হাতে মোবাইল দেওয়া হয়েছে। সবক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। প্রাইভেট সেক্টরকে আমরা উৎসাহিত করি। তাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়।’
বিএনপির আমলের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ক্ষমতা হারানোর পর, ২০০১ সাল থেকে দেশে দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, দুঃশাসন কায়েম হলো। সাত বছর পর আবার আমরা ক্ষমতায় আসলাম। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা কীভাবে দেশ গড়ে তুলবো তার একটি রোডম্যাপ তেরি করলাম। আমরা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করলাম, ১০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা করলাম। ২০১৪ সালে ঘোষণা দিলাম, ২০৪১ সালে দেশকে কোথায় দেখতে চাই। নির্বাচনি ইশতেহারেও আমরা এ বিষয়টি রাখলাম। এভাবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বে উন্নয়ন দৃশ্যমান। বাংলাদেশের উন্নয়নে সবাই বিস্মিত। দেশের মানুষের প্রতি একটি রাজনৈতিক কমিটমেন্ট থাকতে হয়, মানুষের জীবন মানের উন্নয়নের ওয়াদা রক্ষা করা। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন করার জন্য প্রতিটি সেক্টরে আমরা কর্মসূচি দিয়েছি। আমরা বাজেট বাড়িয়েছি। বিএনপির আমলের চেয়ে সাতগুণের বেশি বাজেট বেড়েছে। এসব অগ্রগতিতে আমাদের প্রকৌশলীদের অবদান রয়েছে। আন্তরিকতার সঙ্গে প্রকৌশলীরা কাজ করছেন বলেই আমরা সফল হচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতি দূর করে আমরা যেন কাজ করতে পারি। আমাদের ভূখন্ড সীমিত লোক বেশি, এটি মাথায় রেখে কাজ করতে হবে. স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। আমাদের খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত ও উন্নয়ন করতে হবে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছি। ভোকেশনাল ট্রেনিং খুবই দরকার।’