স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি সংস্থা ফেঁসে গেলেন প্রকৌশলী

100

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. কামাল হোসেন সেলিম। নিজে প্রকৌশলী হয়েও স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়ে নিজ বিভাগে করেছেন ঠিকাদারি। প্রতিষ্ঠানটির সত্ত্বাধিকারী হিসেবে স্ত্রীর নাম থাকলেও সবধরনের কর্ম সম্পাদন করতেন প্রকৌশলী নিজেই। এমন অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। ফলে ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এদিকে এমন অপরাধের শাস্তি হিসেবে বরখাস্ত করে জেলে পাঠানো উচিত বলে মন্তব্য করেছেন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমদ।
গত মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভাগী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর পত্র প্রেরণ করে মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, চসিকের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেন সেলিম তার স্ত্রীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করপোরেশনের ঠিকাদারি করেছেন। এটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্মচারী চাকরি বিধিমালা,২০১৯ এর ধারা ৩৬ এর ২(ঙ), সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ বিধি ১৭(৩) এবং স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ৫ম তফসিল ‘এই আইনের অধীনে অপরাধসমূহ’ এর ক্রমিক ৫৯ এর পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অবস্থায় উক্ত প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হবে। তারপর বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমদ বলেন, এটি খুবই খারাপ প্রবণতা। যেহেতু মন্ত্রণালয় তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে, সুতরাং সচিবালয় বিভাগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে এধরনের অপরাধকে কোনোভাবে ছাড় দেওয়া উচিত নয়। অপরাধের শাস্তি হিসেবে বরখাস্ত করে জেলে পাঠানো উচিত। যাতে করে আর কেউ এধরনের কাজ করতে সাহস না করেন। তবে এ বিষয়ে সার্বিক সিদ্ধান্ত নিবেন মাননীয় মেয়র।
স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর অধীন পঞ্চম তফসিলে বর্ণিত অপরাধসমূহের ৫৯ নম্বর ক্রমিকে বলা আছে, ‘কর্পোরেশনের কোনো কাউন্সিলর বা কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর স্বজ্ঞানে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, স্বয়ং বা অংশীদার মারফত কর্পোরেশনের কোনো ঠিকাদারিতে স্বত্ব বা অংশ অর্জন অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।’ অন্যদিকে আইনের এই ধারা লংঘন করে চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেন সেলিম কর্পোরেশনে তার নিজ বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগে ঠিকাদারি করেছেন। কামাল হোসেন তার স্ত্রী জেবুন্নেছা খানমের মালিকানাধীন মেসার্স এএইচ অ্যান্ড এবি ইঞ্জিনিয়ার্স এর মাধ্যমে ২০১৬ সালে ৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকায় বিবিরহাট গরু বাজারের জন্য পিসি পোল স্থাপনপূর্বক মেটাল হ্যালাইড শেডের মাধ্যমে আলোকায়নের কাজ, ৩৬ নং ওয়ার্ডের বারেক বিল্ডিং হতে নিমতলা পর্যন্ত পোল সরবরাহ, উত্তোলন ও স্থাপন কাজ; ৫ লাখ টাকায় চসিকের আওতাধীন নালা-খাল থেকে এস্কেভেটর দ্বারা মাটি অপসারণসহ বিবিধ কাজ করেছেন।
অভিযোগ পেয়ে ২০১৭ সালের ৪ জুন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগকে তদন্তের দায়িত্ব দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও রহস্যজনকভাবে দুইবছর পর গত ৮ মে মো. কামাল হোসেন সেলিমের দুর্নীতি তদন্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উজালা রাণী চাকমা। পরবর্তীতে গত ১৬ জুলাই কামাল হোসেনের দুর্নীতির সম্পূরক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক ইয়াসমিন পারভীন তিবরিজিকে একটি দাপ্তরিকপত্র দিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের (সিটি করপোরেশন-২, শাখা) এমদাদুল হক চৌধুরী। এরই প্রেক্ষিতে গত ৮ আগস্ট ওই প্রকৌশলীর বিষয়ে তথ্য চেয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহাকে একটি পত্র দিয়েছেন ইয়াসমিন পারভীন তিবরিজি। সেই পত্রে বলা হয়, কামাল হোসেনের স্ত্রী জেবুন্নেসা খানমের মালিকানাধীন মেসার্স এএইচ অ্যান্ড এবি ইঞ্জিনিয়ার্স নামের প্রতিষ্ঠানটি চসিকের কয়েকটি প্রকল্পে কাজ করেছে। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর ১৭ (৩) ধারা মোতাবেক ‘কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেখে তাহার পরিবারের কোন সদস্যকে তাহার এখতিয়ারাধীন এলাকায় কোনো ব্যবসায় জড়িত হওয়ার অনুমতি দিতে পারিবেন না।’ এই অবস্থায় অভিযুক্ত প্রকৌশলী সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে কোনো পুর্বানুমতি নিয়েছেন কি না, তা জানতে চাওয়া হয়। গত ১৪ আগস্ট সেই পত্রের জবাবে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন সেলিম তার স্ত্রী মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের সময় কোনো সরকারি অনুমতি পত্র যুক্ত করেননি। এমনকি লাইসেন্স গ্রহণ করার সময় কোনো পর্যায়ে তার স্বামী যে সিটি কর্পোরেশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাও উল্লেখ করা হয়নি।