স্তব্ধ পুরো বিশ্ব, ফুলেল শ্রদ্ধায় নিহতদের স্মরণ

43

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দু’টি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় স্তব্ধ পুরো বিশ্ব। উঠেছে নিন্দার ঝড়। ফুলেল শ্রদ্ধায় নিহতদের স্মরণ করছেন ক্রাইস্টচার্চবাসী। গতকাল শনিবার ক্রাইস্টচার্চ পার্কে জড়ো হন শতশত মানুষ। এরই মধ্যে এ ঘটনায় দেশটির অস্ত্র আইনে ব্যাপক পরিবর্তন আনার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডার্ন। এদিকে হামলায় প্রধান অভিযুক্ত ব্রেন্টন ট্যারান্টকে ২০ দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন দেশটির আদালত।
এদিকে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতদের পরিবার ও আহতদের সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডার্ন। তিনি বলেন, হামলাকারী বৈধ অস্ত্র বহন করায় গুলি কিনতে সমস্যার মুখে পড়েনি। নিউজিল্যান্ডের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হবে বলেও জানান তিনি।
জাসিন্দা আরডার্ন পরে দেশটির মুসলিম নেতাদের সঙ্গে দেখা করে পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।
এদিকে শুধু খুনের অভিযোগ এনে আদালতে হাজির করা হয়েছে নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে গুলি চালিয়ে অর্ধশত মানুষ হত্যাকান্ডে গ্রেপ্তার প্রধান সন্দেহভাজন ব্রেন্টন ট্যারেন্টকে।
২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ার এই নাগরিককে গতকাল শনিবার ক্রাইস্টচার্চের ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে হাজির করা হয়। আগামী ৫ এপ্রিল পরবর্তী হাজিরার দিন পর্যন্ত তাকে আটক রাখার আদেশ হয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, আদালতে হাজির করা সময় ট্যারেন্টের হাতে ছিল কড়া, গায়ে ছিল বন্দিদের সাদা পোশাক। আদালতে কোনো কথা বলেননি তিনি। তার পক্ষে কোনো জামিন আবেদনও হয়নি।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, আদালতে স্বল্প সময়ের উপস্থিতিতেই ট্যারেন্ট হাতকড়া বাঁধা হাতে আঙুল দিয়ে ‘শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের’ বর্ণবাদী প্রতীক দেখাচ্ছিলেন। বিবিসি জানিয়েছে, ট্যারেন্টের বিরুদ্ধে শুধু খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এক মিনিটের মতো সময় এজলাসে ছিলেন ট্যারেন্ট। এই সময়ে তার বিরুদ্ধে আনা খুনের অভিযোগ পড়ে শোনান বিচারক পল কেলার।
ট্যারেন্টকে এজলাস থেকে নিয়ে যাওয়ার পর বিচারক বলেন, এই মুহূর্তে মাত্র একটি অভিযোগ আনা হয়েছে আসামির বিরুদ্ধে, কিন্তু এটা ধরে নেওয়ার যৌক্তিক কারণ রয়েছে যে তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে।
ট্যারেন্টের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আনা হতে পারে বলে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন হামলাকারী ট্যারেন্টকে ‘উগ্র ডানপন্থি একজন সন্ত্রাসী’ আখ্যায়িত করেছিলেন। ট্যারেন্টের এই কান্ডকে সন্ত্রাসবাদ বলেছিলেন নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা অ’ডুর্ন।
ট্যারেন্টের পাঁচটি বন্দুক এবং আগ্নেয়াস্ত্রের একটি লাইসেন্স রয়েছে বলে নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন। তবে নিউ জিল্যান্ডে অপরাধীদের খাতায় তার নাম ছিল না।
ট্যারেন্টের পাশাপাশি সন্দেহভাজন আরও দুজন আটক রয়েছেন জানিয়ে নিউজিল্যান্ড পুলিশ বলছে, এই ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৪৯ জনকে হত্যা করেন ট্যারেন্ট, আহত হন আরও ৪৮ জন। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৪ জন বাংলাদেশি রয়েছেন।
দুপরে প্রথম হামলাটি হয় ক্রাইস্টচার্চের ডিনস এভিনিউয়ের আল নূর মসজিদে। সেখানে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে হামলাকারী গাড়ি চালিয়ে মাইল তিনেক দূরের লিনউড মসজিদে যায় এবং একই কায়দায় গুলি শুরু করে।
নিউ জিল্যান্ড সফররত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কয়েকজন খেলোয়াড় আল নূর মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন।

হামলাকারী এ হত্যাযজ্ঞের পুরো ঘটনা ফেইসবুকে সরাসরি স¤প্রচার করেছিলেন, ইন্টারনেটে ছড়িয়েছেন বর্ণবাদী, অভিবাসী বিদ্বেষী, উগ্র ডানপন্থি বার্তা।
হামলা চালানোর আগে ট্যারেন্ট তার টুইটার অ্যাকাউন্টে ৭৩ পৃষ্ঠার একটি কথিত ‘ম্যানিফেস্টো’ প্রকাশ করেন। হামলার উদ্দেশ্য ও নিজের পরিকল্পনার বিষয়ে সেখানে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন তিনি।
সিনেটর অ্যানিংয়ের মাথায় ডিম ভেঙে প্রতিবাদ : ক্রাইস্টচার্চে দুই মসজিদে রক্তাক্ত হামলার দায় মুসলিম অভিবাসীদের উপর চাপিয়ে বিতর্ক উসকে দেওয়া অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর ফ্রেজার অ্যানিংয়ের মাথায় ডিম ভেঙে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এক তরুণ।
নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড জানায়, শনিবার মেলবোর্নের মোরাবিনে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন অ্যানিং। ঠিক তার পেছনে দাঁড়িয়ে এক তরুণ মোবাইলে ভিডিও করছিল। হঠাৎ করেই ওই তরুণ বা-হাতে মোবাইল ধরে ডান হাতে অ্যানিংয়ের মাথায় একটি ডিম ভেঙ্গে দেন।
হতবাক অ্যানিং পেছনে ঘুরেই তরুণের মুখে চড় মারতে শুরু করে। দুইজনের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে লোকজন ওই তারুণকে মাটিতে চেপে ধরে; অন্য একজন অ্যানিংকে সরিয়ে নেয়।
শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ক্রাইস্টচার্চের দুইটি মসজিদে বন্দুকধারীর হামলায় ৪৯ জন নিহত এবং আরও ৪৮ জন গুলিবিদ্ধ হন।
অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ওই হামলাকারীর নাম ব্রেন্টন ট্যারেন্ট। যাকে ‘একজন উগ্র ডানপন্থি নৃশংস সন্ত্রাসী’ বলে বর্ণনা করেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।
ওই দিন বিকালে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে অ্যানিং বলেন, ওই হামলা অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডে ‘মুলসলমান অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাড়তে থাকা আতঙ্কের’ কথা বলছে।
বিবৃতিতে কুইন্সল্যান্ডের সিনেটর অ্যানিং মসজিদে হত্যাযজ্ঞের জন্য নিউ জিল্যান্ডের অভিবাসন নীতিকে দায়ী করে বলেন, বরাবরের মতই, বামপন্থি রাজনীতিবীদ এবং সংবাদমাধ্যম আজ যে হামলার হয়েছে তার পেছনে অস্ত্র আইন অথবা যারা জাতীয়তাবাদী মনভাব ধারণ করে তাদের দায়ী করতে ব্যস্ত হয়ে যাবে। যদিও এ সবই ফালতু কথা।
আজ নিউ জিল্যান্ডের সড়ক রক্তে রঞ্জিত হওয়ার আসল কারণ তাদের অভিবাসন নীতি। যে নীতি মুলসমান ধর্মান্ধদের আশ্রয় প্রার্থনা করতে প্রথম পছন্দের দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ডকে বেছে নেওয়ার অনুমতি দেয়।
কড়া ভাষায় অ্যানিংয়ের বিবৃতির নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মরিসন বলেন, অভিবাসী ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে সিনেটর অ্যানিং যে মন্তব্য করেছেন তা আতঙ্কজনক এবং কুৎসিত। অস্ট্রেলিয়ায় এ ধরনের মনভাবের কোনো স্থান নেই। নিজের মন্তব্যের জন্য তার সত্যিই লজ্জিত হওয়া উচিত। আমার সরকার কোনোভাবেই এর সঙ্গে একমত নয় ।
শুক্রবারের বিবৃতির জন্য অ্যানিংয়ের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া সরকার পার্লামেন্টে তিরস্কার প্রস্তাব তুলবে বলেও জানান তিনি।