স্কুল ক্রিকেটের নামে এসব কি হচ্ছে?

73

চলমান জাতীয় স্কুল ক্রিকেটে ভালমানের স্কুলগুলোর অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, ইস্পাহানী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট প্ল্যাসিড স্কুলসহ সরকারী-বেসরকারী, সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত ও প্রাইভেট স্কুলসহ শত শত স্কুলের মধ্যে মাত্র ১২টি স্কুল অংশগ্রহণে চলছে জাতীয় স্কুল ক্রিকেট প্রতিযোগিতা। মেধাবী স্কুলের মধ্যে এবার যাও কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয় জেনুইন ছাত্রদের নিয়ে টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে গতকালের খেলা শেষে তারাও প্রতিপক্ষ স্কুলের বহুজাতিক খেলোয়াড়দের সাথে পেরে না উঠে হতাশ হয়ে মাঠ ছাড়েন।
জানা গেছে, টুর্নামেন্ট পরিচালনার দায়িতপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদাসীনতা, দায়সারা মনোভাব এর কারণে হয়েকটি স্কুল নিজেদের টিমে নগরীর বিভিন্ন অ্যাকাডেমির সেরা খেলোয়াড়দের নিজেদের খেলোয়াড় বলে চালিয়ে দিচ্ছে। টুর্নামেন্ট পরিচালনার দায়িতপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সঠিকভাবে কোন কাগজ পত্র খতিয়ে দেখছে না। গতকাল ছিল কলেজিয়েট স্কুল ও চিটাগং পুলিশ ইনস্টিটিউশনের মধ্যকার খেলা। দেখা গেছে কলেজিয়েট স্কুলের জেনুইন ছাত্রদের নিয়ে দলটি প্রতিপক্ষ চিটাগং পুলিশ ইনস্টিটিউশনের ছাত্রদের সাথে দাঁড়াতেই পারেনি। কারণ চিটাগং পুলিশ ইনস্টিটিউশনের খেলোয়াড়রা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের চেয়ে শারীরিক গঠনে অনেক বড়, এ বয়সের তারকা খ্যাতির কারণেও তারা সবার পরিচিত। খেলা দেখতে আসা অনেকে বলাবলি করছে, এগুলো এ স্কুলের নামকাওয়াস্তা ছাত্র।
তার মধ্যে আনকোরা আম্পায়ার ঝোটন দাশের উল্টাপাল্টা সিদ্ধান্ত দেশ সেরা স্কুলটিকে তছনছ করে দিয়েছে। তার সিদ্ধান্ত দেখে মনে হচ্ছিল তিনিও প্রতিপক্ষ দলের একজন। এলবিডাব্লিউ, কট বি হ্যান্ড, স্টাম্পিং থেকে শুরু করে তার প্রতিটি আউটের সিদ্ধান্ত ছিল প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত যা দেখে গ্যালারিতে ম্যাচ দেখতে আসা সবাই হাসাহাসি করেছে। অথচ অপর প্রান্তে খেলা পরিচালনা করে প্রশংসা কুড়ান আরেক আম্পায়ার ইফতেখারুল আমিন। এসব অব্যবস্থাপনা দেখে কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক মন্তব্য করে বলেন, কী দরকার এ রকম টুর্নামেন্টে অংশ নেয়ার। আমরা অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে টিম দিতে চাই নি। কিন্তু ছাত্রদের অনুরোধে অনেক বছর পর এবারই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছি। টুর্নামেন্ট পরিচালনার দায়িত্ব পালনকারীরা যদি ছাত্র-অছাত্র যাচাই না করে কাউকে চ্যাম্পিয়ন বানানোর জন্য দায়িত্ব নেয় তাহলে সেরা স্কুলগুলো কেন আসবে? ভালমানের ক্রিকেটার কিভাবে বেরিয়ে আসবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস)’র সহযোগিতায় ক্রিকেটের এই মহৎ উদ্যোগ ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণ হতে থাকবে।
তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, গত ক’বছরের চ্যাম্পিয়ন দলগুলোর পোস্ট মর্টেম করুন, দেখবেন ঐসব দলে সংশ্লিষ্ট স্কুলের ক’জন খেলোয়াড় আছে? আরো পিলে চমকানো তথ্য হল, স্কুল ক্রিকেটে এমন টিমও আছে যাদের কতৃপক্ষও জানে না স্কুল খেলছে। ব্যবসায়ী মনোভাবের স্বঘোষিত কতক নামধারী কোচ নিজেই প্রিন্সিপাল বা হেড মাস্টার সেজে কাগজ সই করে ছেলেদের থেকে টাকা নিয়ে টিম চালাচ্ছে। মাঠে ক’টা স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক বা স্কুল প্রধান আসছেন? ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি নাই বললেই চলে। কেনই বা আসবে-নিজের স্কুলের ছাত্ররা তো নেই। এ ব্যাপারে সিজেকেএস’র নজরদারিও প্রশ্নবিদ্ধ। অবশ্য, আগের মত সিজেকেএস কর্মকর্তাদেরও এখন আর মাঠে দেখা যায় না। আর যাবেই বা কি করে- কোন্ টুর্নামেন্ট কারা চালাবেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে বা কারা? সাগরিকায় কে দায়িত্বে? বিভিন্ন উপ কমিটি এখন আর নাই। ফলে কর্মকর্তাদের পারফর্ম্যান্স বিচারের বিষয়টা চাপা পড়ে গেছে। ক্রীড়া পাগল প্রচুর মানুষ (কাউন্সিলর) সিজেকেএসে থাকলেও দায়িত্ব পালনে আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে না কারও। কারণ কেউ কেউ আছেন অন্য কেউ দায়িত্ব নিতে না আসলেই যেন তারা খুশি। নইলে সিজেকেএস খেলা চালাচ্ছে আর এমন কোন ব্যক্তি নাই যে টিমের ফাইলগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে? ধিক এ ধরণের টুর্নামেন্টকে। বিসিবির টাকার শ্রাদ্ধ! ক্রিকেট এখন আর রাজার খেলা নয়, ব্যবসার খেলা।