স্কুলছাত্রের ওপর বর্বরতা তারপর উল্টো মামলা!

82

বাঁশখালীর বৈলছড়ি নজমুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র আনতে যায় অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র নাবিল। প্রতিপক্ষের হাতে হামলার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় বন্ধুদের নিয়ে যায় সেখানে। শেষ পর্যন্ত আশঙ্কাটিই সত্যি হলো। গত ১২ জানুয়ারি বিদ্যালয় মাঠেই নাবিলসহ তার বন্ধুদের ওপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। এতে শাকিল নামে নাবিলের এক বন্ধু গুরুতর আহত হলে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনো হাসপাতাল বেডেই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে শাকিল।
এ ঘটনায় শাকিলের স্বজনরা থানায় গেলে মামলা নেয়নি পুলিশ। উল্টো গত ১৭ জানুয়ারি শাকিলকে ৪ নম্বর আসামি করে নয়জনের বিরুদ্ধে বাঁশখালী থানায় মামলা দায়ের করেছেন সামশুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বাঁশখালী থানার ওসি ও এক উপ-পরিদর্শকের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি ও চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার বরাবরে অভিযোগ করেছেন শাকিলের ভাই শরাফত আলী।
স্থানীয়রা জানান, স্কুলছাত্র নাবিলের বাড়ি কাথরিয়া হলেও সামশুল ইসলামের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল। এরমধ্যে দুইজনের সম্পর্কের অবনতি ঘটলে শামসুর ভয়ে নাবিল গা ঢাকা দেয়। ১২ জানুয়ারি নাবিল বৈলছড়ি স্কুল থেকে ছাড়পত্র আনতে গেলে সেখানে শামসুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন মিলে পৌরসদর থেকে আসা নাবিলসহ অন্যদের উপর হামলা চালান। লোহার রড় ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নাবিলের সাথে যাওয়া শাকিল নামে এক কিশোর গুরুতর আহত হয়। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বাঁশখালী থানার উপ-পরিদর্শক নাজমুল হাসানসহ সঙ্গীয় ফোর্স।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বাঁশখালী থানার উপ-পরিদর্শক নাজমুল হাসান পূর্বদেশকে বলেন, ‘বৈলছড়িতে হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্তনাধীন আছে। কারা আসামি হয়েছে তা তদন্ত শেষে বলা যাবে। কারা হামলা করেছে, কারা হামলার শিকার হয়েছে এটা তদন্তের পর বলা যাবে। আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে বলেই মামলা একটা নিয়েছি।’ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা না নিয়ে হামলার শিকার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনার সত্যমিথ্যা আমি বলতে পারবো না। একটা ছেলে আহত হয়েছে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মামলা নেয়া হয়েছে। মামলা নেয়ার দায়িত্ব ওসির এখতিয়ার। মামলা নিয়েছেন ওসি স্যার। উনি আমাকে মামলাটি তদন্ত করতে বলেছেন। এর আগে আমার কাছে কেউ মামলার কপি নিয়ে আসেনি। ঘটনাটি মিথ্যা। এসব বিষয়ে ওসি স্যারই ভালো জানবেন।’
বাঁশখালী থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার পূর্বদেশকে বলেন, ‘বৈলছড়িতে দুইপক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। দুইপক্ষই মামলা দিতে থানায় আসে। আবার দুইপক্ষই কিছু নিরীহ ব্যক্তিকে আসামি দিতে চেয়েছে। এরমধ্যে যে মামলাটি গ্রহণ করা হয়েছে তারা নিরীহ ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে ঘটনার দিন ছিল এমন ব্যক্তিদের আসামি করেছে। অপর পক্ষটি নিরীহদের আসামি করতে না পেরে মামলা করেনি। আমাদের কাছে এখনো যদি ঘটনার সাথে জড়িতদের আসামি করে মামলা দিলে তা গ্রহণ করবো।’ মৃত্যুশয্যায় থাকা ব্যক্তি আসামি হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সে ঘটনার সময় ছিল বলেই প্রতিপক্ষরা আসামি করেছে।’
শাকিলের ভাই শরাফত আলী পূর্বদেশকে বলেন, ‘নাবিল হামলার ভয়ে আমার ভাইসহ কয়েকজনকে নিয়ে স্কুলে টিসি আনতে গিয়েছিল। সেখানে চিহ্নিত সন্ত্রাসী শামসু তার দলবল নিয়ে হামলা চালালে আমার ভাইসহ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। গত আটদিন ধরে শাকিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। শাকিলের ডান পা ভেঙে গেছে। একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। নাকেও আঘাত পেয়েছে। চিকিৎসকরা এখনো বলছেন আমার ভাই বাঁচবে কিনা সন্দেহ আছে। এতকিছুর পরেও মামলা করতে থানায় গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। পাঁচদিন ধরে এজাহারের কপি হাতে রেখে আমাকে মামলা নেয়া হবে না বলে জবাব দেয়া হয়েছে। উল্টো মৃত্যুশয্যায় থাকা আমার ভাইকে আসামি করে আরেকটি মামলা নিয়েছেন।
মামলায় নিরাপরাধ ব্যক্তিদের আসামি করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছিলাম। এরপরেও কেউ নিরাপরাধ হলে পুলিশ তদন্ত করে মামলা থেকে বাদ দিতে পারতো। কিন্তু মামলা না নেয়ার মধ্যে কোন রহস্য আছে। এসব বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে আমি ডিআইজি ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছি।’