সৌন্দর্যবর্ধনের পেটে গেল খাল!

88

নগরীতে বিদ্যমান খালগুলো ভরাট হওয়ার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে তীব্র জলাবদ্ধতা শিকার চট্টগ্রামবাসী। খালগুলো পরিষ্কার করে জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে কয়েকটি সেবা সংস্থা। এমন সময়ে নগরীর প্রবর্তক মোড় এলাকায় খালের অর্ধেক দখল করে ‘কক্ষ’ সদৃশ স্থাপনা নির্মাণ করছে চট্টগ্রামের গণপূর্ত বিভাগ-১। তবে কোনো কক্ষ নয়, ফুল গাছ প্রদর্শনের জন্য এমন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে বলে দাবি গণপূর্ত বিভাগের।
এদিকে কোনো সংস্থার কেউ খাল দখল করতে পারবে না জানিয়ে আগামীকালের (আজ রবিবার) মধ্যে এ স্থাপনা ভেঙে ফেলার কথা পূর্বদেশকে জানিয়েছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
গতকাল বিকেলে প্রবর্তক মোড়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মোড়ের উত্তর পাশে সড়ক ঘেঁষেই রয়েছে একটি খাল। ময়লা-আবর্জনায় প্রায় ভরাট হতে যাওয়া খালটির পাশে করা হয়েছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। এতে সাইনবোর্ডে লেখা ‘গণপূর্ত অধিদপ্তরের নিজস্ব সম্পত্তি’। ফুটপাতের ওপর সিটি কর্পোরেশন নির্মিত যাত্রী ছাউনির সামনে ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে। ছাউনিতে কোনো যাত্রী না থাকলেও রয়েছে কাক। এসব কাক পড়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা থেকে খাবার খুঁজতে ব্যস্ত। খালের পাড়ে লাগানো হয়েছে নানা রকমের ফুলের গাছ। কাকের দখলে যাত্রী ছাউনি আর পড়ে থাকা জায়গায় সৌন্দর্যবর্ধন সবকিছু ঠিক থাকলেও রহস্য দেখা দেয় ছাউনির পেছনে টিন দিয়ে ঘেরা নির্মাণাধীন স্থাপনাটি নিয়ে। সামনে এগিয়ে টিনের বেড়ার ফোকরে দৃষ্টি দিতেই স্পষ্ট হয়ে উঠে নির্মাণাধীন দেয়ালের দৃশ্য। যাত্রী ছাউনিতে ঢাকা পড়ায় সড়ক থেকে সহজে টিনের বেড়া দেখা যাচ্ছে না। তবে আপাতত যে কারোরই মনে হবে এখানে একটি স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। টিনের বেড়ার ভিতরে জায়গারটির অধিকাংশই খাল ভরাট করে দখলে নেয়া হয়েছে। ফলে খালটির প্রায় অর্ধেকাংশ বেদখল হয়ে গেছে। এতে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
এসময় স্থানীয় বাসিন্দা ছৈয়দুল হাসান পূর্বদেশকে বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই পুরো শহর পানিতে তলিয়ে যায়। সামনে বর্ষা আসছে, তাই মানুষ রয়েছে আতঙ্কে। এমনিতেই এখানে বৃষ্টি হলেই পানি উঠে। তিনি বলেন, দেখেন খালটি প্রায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ভালো করে পানি চলাচল করতে পারছে না, সেখানে আবার দখল করে কি যেন নির্মাণ করছে। এসব দেখবে কে ? শুনেছি, কোটি কোটি টাকা সরকার ঢালছে জলাবদ্ধতা নিরসনে, কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখছি না। একজন পরিষ্কার করবে, আরেকজন দখল করবে আর আমরা পানিতে ভাসবো।
চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ-১ এর উপ-প্রকৌশলী জাহেদুন নবী চৌধুরী বলেন, এটি কোনো কক্ষ নয়, কয়েক ধাপে ফুলের গাছ প্রদর্শন করতে ‘স্টেজ’ তৈরি করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এটা আমাদের জায়গা। জায়গাটি ছোট হওয়ায় অন্য কোনো কিছু করা যাচ্ছে না। তাই সৌন্দর্যবর্ধন করা হচ্ছে। যাত্রী ছাউনির আড়ালে ঢাকা পড়া ‘কক্ষ’ সদৃশ স্থাপনাটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার একটি মাস্টারপ্ল্যান রয়েছে। সে মাস্টারপ্ল্যান অনুসারে খালের প্রস্থ ঠিক রেখেই সৌন্দর্যবর্ধনে ‘স্টেজ’ তৈরি করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এই জায়গাটিতে সৌন্দর্যবর্ধনের একটি ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে। জায়গাটি গণপূর্তের হলেও এখানে পাবলিক টয়লেট করে ইজারা দিতে চেয়েছিল সিটি কর্পোরেশন। আমাদের এসব জায়গার হিসাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হয়। তাই জায়গাটি মূলত দখলে রাখতে সৌন্দর্যবর্ধন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। এখন আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। কোনো সংস্থার কেউ খাল দখল করতে পারবে না। খাল দখল না হওয়ার জন্য যেখানে সবকটি খালের পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণের কথা চলছে সেখানে খাল দখলের প্রশ্নই আসে না। আমি আগামীকালের (আজ রবিবার) মধ্যে ভেঙে ফেলার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ প্রদান করবো।