সৌদির কাছে অস্ত্র বিক্রি বেআইনি

74

ইয়েমেনের যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য সৌদি আরবের কাছে অব্যাহত অস্ত্র বিক্রিকে বেআইনি বলে রুল দিয়েছে যুক্তরাজ্যের একটি আপিল আদালত। ব্রিটিশ সরকারের অস্ত্র বিক্রির বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন অ্যাগেইনিস্ট দ্য আর্মস ট্রেড (সিএএটি) এর দায়ের করা এক মামলায় এই রুল জারি করা হয়েছে। সিএএটির দাবি যুক্তরাজ্যের যুদ্ধবিমান ও বোমা ব্যবহার করে ইয়েমেনে বেসামরিক নাগরিক হত্যা করা হচ্ছে আর লঙ্ঘিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক আইন। এর আগে ২০১৭ সালে একবার ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছিল দেশটির উচ্চ আদালত। ইয়েমেন যুদ্ধ থেকে নতুন করে তথ্যপ্রমাণ হাজির করে ওই রায় চ্যালেঞ্জ করা হলে বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে রুল দেয় আপিল আদালত। তবে এই রুলের কারণে এখনই সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রির লাইসেন্স বাতিল হচ্ছে না।
২০১৪ সালে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদিকে উচ্ছেদ করে রাজধানী দখলে নেয় ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা। সৌদি রাজধানী রিয়াদে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন দেশটির প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্টের অনুগত সেনাবাহিনীর একাংশ হুথিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। ২০১৫ সালের মার্চে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন ডিসাইসিভ স্টর্ম’ নামে সামরিক অভিযান পরিচালনা শুরু করে সৌদি আরব ও তার মিত্র দেশগুলো। তারপর থেকে এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার ৬০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। কয়েক লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে। পুরো ইয়েমেন রয়েছে দুর্ভিক্ষের মুখে। সৌদি জোটের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে নির্বিচার বোমা বর্ষণ ও বিমান হামলা চালিয়ে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের।
ব্রিটিশ আদালতে দায়ের করা মামলায় সিএএটি অভিযোগ করে যুক্তরাজ্য সরকারের কাছ থেকে কেনা অস্ত্র ব্যবহার করে ইয়েমেনে যুদ্ধাপরাধ করছে সৌদি আরব। তবে ব্রিটিশ হাইকোর্ট ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষে রুল দিয়ে জানায় ইয়েমেনে সৌদি জোট পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বেসামরিক মানুষদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে না। ইয়েমেন থেকে নতুন করে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে ওই রুল চ্যালেঞ্জ করে সিএএটি।
এসব তথ্য প্রমাণ বিশ্লেষণ ও শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার আপিল আদালতের বিচারকেরা রুল দিয়ে জানান, অতীতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন (আইএইচএল) লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যালোচনা ছাড়াই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মন্ত্রী অস্ত্র রফতানির যে লাইসেন্স দিয়েছেন তা ’অযৌক্তিক আর সেকারণেই তা বেআইনি’। আপিল আদালতের প্রধান বিচারপতি স্যার টেরেন্স অ্যাথারটন বলেন, আদালতের আজকের সিদ্ধান্তের অর্থ এই নয় যে তাৎক্ষনিকভাবেই সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রির লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। তবে সরকারকে অবশ্যই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং অতীতের সিদ্ধান্তের আলোকে ভবিষ্যতের ঝুঁকি বিবেচনায় নিতে হবে।
আদালতে সিএএট’র প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী রোসা কার্লিং বলেন, সরকারকে এখন পুনর্বিবেচনা করতে হবে যে বিদ্যমান রফতানি লাইসেন্স বাতিল করা হবে নাকি লাইসেন্স অনুমোদন চালু রাখার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হবে। তিনি বলেন, আমার ক্লায়েন্ট আশা করে সরকার খুব দ্রুত তাদের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করবে আর ভবিষ্যতে কোনও লাইসেন্স অনুমোদন না করার সিদ্ধান্ত নেবে।