সোহেল তাজ আসছেন ‘লাল কার্ড’ দেখাতে

135

‘সোহেল তাজ আসছেন আপনার দরজায়, আপনি রেডি তো’- ফেসবুকে এমন ভিডিও দিয়ে সবাইকে কৌতূহলী করে তোলা সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সব জল্পনার অবসান ঘটিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তার এক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট হলো, এটি তার একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানের ‘প্রোমো’। পরিবেশ দূষণ, যানজট, নারী নির্যাতন, সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির মতো সামাজিক ব্যাধিকে ‘লাল কার্ড’ দেখাতে ওই অনুষ্ঠান নিয়ে আসছেন তিনি।
আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে আরটিভিতে শুরু হচ্ছে এই টেলিভিশন শো ‘হটলাইন কমান্ডো’। এর উপস্থাপনা করবেন সোহেল তাজ। তার মিডিয়া প্রডাকশন প্রতিষ্ঠান ফিটনেশন মিডিয়ার ব্যানারে নির্মিত হচ্ছে এই টিভি শো।
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক বছরের মাথায় মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর রাজনীতি থেকেও দূরে সরে যান তিনি। পরে তার আসনে সংসদ সদস্য হন তারই বোন সিমিন হোসেন রিমি।
কয়েক বছর বাদে সম্প্রতি তিনি হঠাৎ নিজের ফেসবুক পাতায় ওই ভিডিও তোলার পর তাকে নিয়ে সব মহলে শুরু হয় আলোচনা। তিনি রাজনীতিতে আবার সক্রিয় হচ্ছেন বলেও গুঞ্জন ছড়ায়। ওই ভিডিও শেয়ার করে তিনি লেখেন, ‘গ্রাম থেকে শহর, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, ইউরোপ থেকে আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য থেকে এশিয়া, পৃথিবীর যেই প্রান্তেই থাকেন না কেন, আপনার দরজায় টোকা পড়তে পারে। খবর বিডিনিউজের
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে সংবাদ সম্মেলন সব খোলাসা করে সোহেল তাজ বলেন, তার ওই তথ্যভিত্তিক ও বিনোদনমূলক টিভি অনুষ্ঠানে সামাজিক সমস্যার সমাধান বাতলে দেওয়া হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গড়া প্যানেল বলবেন সমস্যা সমাধানের উপায়। তিনি জানান, ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর মা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের মৃত্যুর পর দেশ ও সমাজের জন্য নিজেকে নিবেদনের পরিকল্পনা করেন তিনি।
দুর্দিনে আওয়ামী লীগের হাল ধরা মায়ের কথা স্মরণ করে সোহেল তাজ বলেন, ‘(তিনি বলেছিলেন) যাই করিস না কেন, মানুষের জন্য কিছু করিস’। মায়ের ওই কথাই এই অনুষ্ঠানের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে বলে জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধুর পর কারাগারে হত্যাকান্ডের শিকার তাজউদ্দীন আহমদের ছোট সন্তান সোহেল তাজ শৈশবেও বাবাকে খুব একটা পাননি। তাই নিজের দুই সন্তান যেন বাবার অভাব কখনও অনুভব না করে, সেজন্য তাদের পাশে থাকাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে দিলেও তাজউদ্দীন পরিবারের সন্তান হিসেবে দেশ-বিদেশে যেখানে গেছেন, গণমানুষের ভালোবাসায় আপ্লুত হয়েছেন সোহেল তাজ। সেই ভালোবাসার ‘প্রতিদান’ দিতে এবার সামাজিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত করার পরিকল্পনা তার। সোহেল তাজ বলেন, ‘বছরের পর বছর আমি ভেবেছি। রাজনীতি করতে যেয়ে মানুষের জন্ম-মৃত্যু, মানুষের কান্না-দুঃখ আমাকে কাছ থেকে দেখতে হয়েছে। আমি মেধা ও চিন্তা দিয়ে সমাজ ও মানুষকে সহায়তা করতে পারব। মেয়েদের জানাতে তারা বলল, মানুষের জন্য যদি কিছু করতে পার, তাহলে কর’।
সংবাদ সম্মেলনে ‘পাওয়ার পয়েন্ট’ উপস্থাপনায় তিনি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, শিশুদের খেলার মাঠের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যখন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছেন, তখন সামাজিক ব্যাধির সমাধান জরুরি বলে মনে করেন সোহেল তাজ। তিনি বলেন, ‘আজকে সমাজের এই সমস্যাগুলো যদি আপনি সমাধান না করেন, তাহলে কি করে সোনার বাংলা আপনি গড়বেন? সোনার বাংলা কেউ গড়ে দিতে পারে না। নিজের উদ্যোগ থাকতে হবে; যে যে অবস্থানে আছে। আমার টাকা-পয়সা নাই, ধন-দৌলত নাই, কিন্তু মানুষের ভালোবাসা, আমার পরিচিতি আছে। মানুষের কল্যাণে আমি সেটাকে ব্যবহার করব। সমাজের মানুষের প্রতি আমি আমার ঋণ পরিশোধ করব। সবাইকে নিয়ে সামাজিক ব্যাধিকে লাল কার্ড দেখাতে হবে’।
সামাজিক সঙ্কট নিরসনে কাজ করতে নামা সোহেল তাজ বাস্তবতা বিবেচনায় বলেন, ‘সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষকে তাদের মতো করেই বোঝাতে হবে, জানাতে হবে। পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় ওই লেভেলে গিয়েই আসলে মানুষকে বোঝাতে হবে’। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সোহেল তাজ বলেন, ‘যে কোনো দেশ যখন উন্নতির পথে যায়, তখন বাধা দুর্নীতি। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের সন্তান হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করে যাব’।
আবারও আওয়ামী লীগে সক্রিয় হবেন কি না- এই প্রশ্নে সোহেল তাজ বলেন, ‘রাজনীতিতে আমি নাই। কিন্তু রাজনীতির পরিবারের সন্তান। রাজনীতি এটা আমাদের রক্তে, দেশ আমাদের রক্তে। এটার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই মুহূর্তে সক্রিয় রাজনীতি করার স্কোপ নেই। এই প্রজেক্ট আমার সমস্ত টাইম নিয়ে নেবে’।
‘হটলাইন কমান্ডো’ টিভি শোটির পৃষ্ঠপোষকতা করছে সুজুকি মোটরবাইকস, মিৎসুবিশি মোটরবাইকস। অনুষ্ঠানের শেষে র‌্যানকন গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা রম্য রউফ চৌধুরী, র‌্যানকন মোটরবাইকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাওন হাকিম, মিৎসুবিশির ডিভিশনাল ডিরেক্টর শোয়েব আহমেদ, আরটিভির সিইও সৈয়দ আশিক রহমানের সঙ্গে এই অনুষ্ঠান সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন সোহেল তাজ।

পরিচয় অ্যাপ দিয়ে তথ্য
কিভাবে যাচাই হবে?

জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করতে গত বুধবার নতুন একটি মোবাইল অ্যাপের উদ্বোধন করা হয়েছে, যার নাম রাখা হয়েছে ‘পরিচয়’। ‘পরিচয়’ নামের এই গেটওয়ে সার্ভারটি নির্বাচন কমিশনের জাতীয় ডেটাবেসের সঙ্গে সংযুক্ত। এই অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে সরকারি, বেসরকারি বা ব্যক্তিগত যেকোনো সংস্থা তাদের গ্রাহকদের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য যাচাই করে সহজে এবং দ্রæত সময়ের মধ্যে সেবা দিতে পারবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সচিব এস এম জিয়াউল আলম। তবে এখনও এককভাবে কোনো ব্যক্তি এই অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এই অ্যাপ থেকে কী তথ্য যাচাই করা যাবে?

পরিচয় অ্যাপের মাধ্যমে মূলত এনআইডি কার্ডের নাম্বারটি থেকে গ্রাহকদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে। প্রাথমিকভাবে গ্রাহকের নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, বয়স ও ঠিকানা যাচাই করা যাবে। গ্রাহকের এসব তথ্যের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা এই অ্যাপে সুরক্ষিত থাকবে বলে জানান জিয়াউল আলম। তবে সামনে আরও কি কি তথ্য যাচাই করা যাবে এবং অ্যাপটি কিভাবে পরিচালনা করা হবে- সে বিষয়ে শিগগিরই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি নীতিমালা প্রণয়নের কথা জানান তিনি।
সামনের মাসেই এই পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে। ‘অ্যাপটা ছাড়া হয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ ডাটা এখনও পাওয়া যাবে না। এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাজেই ব্যবহার করা যাবে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যবহারের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে’- বলেন জিয়াউল আলম। তিনি জানান, ‘বলা যায় আমরা শুধুমাত্র শুরু করেছি। এটাকে ধীরে ধীরে আরও ডেভেলপ করা হবে। ক্রমান্বয়ে সব ডাটা অ্যাড করা হবে’।
কেন এই ‘পরিচয়’ অ্যাপের উদ্যোগ?
জিয়াউল আলম জানান, এই অ্যাপের মাধ্যমে একদিকে যেমন জাল আইডিগুলো শনাক্ত করা যাবে, তেমনি জালিয়াতি প্রতিরোধ করে পরিষেবাগুলোকে আরও নিরাপদ করা যাবে। আর এজন্য আর আগের মতো ৪-৫ কর্মদিবস অপেক্ষা করতে হবে না। ভোগান্তিও পোহাতে হবে না। খবর বিবিসি বাংলার
এতোদিন, নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে লগ ইন করে সংস্থাগুলো জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ম্যানুয়ালি যাচাই করতে হতো। আবার নির্বাচন কমিশনের এনআইডি ডাটাবেসে প্রবেশের কোনো সুযোগ না থাকায় অনেক সংস্থা এনআইডি যাচাইও করতে পারতেন না। কিন্তু ‘পরিচয়’ অ্যাপের মাধ্যমে এনআইডি যাচাইয়ের জন্য বাড়তি জনবলের প্রয়োজন না হওয়ায় যেকোনো প্রতিষ্ঠান ‘শুধুমাত্র পরিচয় গেটওয়ে’ সার্ভারের সাথে সংযোগ স্থাপন করে এনআইডি তথ্য যাচাই করতে পারবেন। তাই এখন থেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, ডিজিটাল ওয়ালেট অ্যাকাউন্ট খোলা, আর্থিক লেনদেন বা যেসব কাজে, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের প্রয়োজন হয়, সেখানে খুব সহজে এবং কম সময়ে পরিচয় যাচাই করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জিয়াউল আলম বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো ক্লায়েন্ট যদি প্রোপার (সঠিক) সেবাটা নিতে আসে, যদি তার সাথে আর্থিক লেনদেন, সোশ্যাল বেনেফিট (সামাজিক সুযোগ-সুবিধা) দেয়ার প্রয়োজন হয়, তখন ওই ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করাটা বেশ জরুরি হয়ে পড়ে। এখন এই অ্যাপের মাধ্যমে সেটাই করা সম্ভব হবে। এতে গ্রাহকরাও কম সময়ে সেবা পাবেন আর আমাদেরও কোনো ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে না। … কোথাও কোনো দুই নম্বরির সুযোগ নেই’।
গত বুধবার তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ‘পরিচয়’ অ্যাপ উদ্বোধন করে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সরকারি সেবা সাধারণ মানুষের কাছে সহজে এবং সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে এই অ্যাপটি বড় ধরণের ভূমিকা রাখবে। সরকারি সেবা পেতে জনগণকে যেন সরকারি অফিসগুলোতে যেতে না হয় সেজন্যই আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি’।