সৈয়দ আমীর আলী (১৮৪৯-১৯২৮)

90

আইনবিশারদ, সমাজ সংস্কারক ও লেখক সৈয়দ আমীর আলী ১৮৪৯ সালের ৬ এপ্রিল ব্রিটিশ ভারতের উড়িষ্যার কটকে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রথম মুসলিম বিচারপতি। ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতের আইনে মুসলিম আইন প্রবর্তনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। তিনি অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সৈয়দ আমীর আলী ‘দ্য স্পিরিট অব ইসলাম’ বইটির জন্য বেশি পরিচিত। তার বাবা সাদত আলী ছিলেন ইউনানী চিকিৎসক এবং পাÐিত্যের অনুরাগী। সৈয়দ আমীর আলী পরিবারের ৪র্থ সন্তান। তার জন্মের পর পরিবারটি কলকাতায় চলে আসে। পরবর্তীতে তারা চীনসুরায় আবাস গড়ে তোলেন। সৈয়দ আমীর আলীর সাত বছর বয়সে সাদত আলী মারা যান। কুরআন, আরবি, ফারসি শিখানোর জন্য তার মা একজন মৌলভি গৃহশিক্ষক রাখেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতা মাদ্রাসা ও হুগলি মাদ্রাসায় পড়েন। হুগলি মাদ্রাসায় পড়াকালে ব্রিটিশ শিক্ষকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৮৬৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ১৮৬৮ সালে ইতিহাসে এমএ পাস করেন। ১৮৬৯ সালে এলএলবি শেষ করে সরকারি বৃত্তি নিয়ে লন্ডনে পড়তে যান। এ ছাড়া ঔষধশাস্ত্র, আরবি ও ফারসি ভাষায় তার অগাধ পাÐিত্য ছিল।
১৮৬৯ সালে লন্ডনে আইন ব্যবসায় যোগ দেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারমূলক কর্মকাÐে অংশ নিতে থাকেন। ১৯৭৩ সালে ভারতে ফিরে কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। এর এক বছর পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো নির্বাচিত হন ও প্রেসিডেন্সি কলেজে ইসলামী আইন বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১৮৭৮ সালে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য হন। ১৮৮০ সালে এক বছরের জন্য ইংল্যান্ড যান। ১৮৮১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। ১৮৮৩ সালে গভর্নর জেনারেল কাউন্সিলের সদস্যপদের জন্য মনোনীত হন।
১৮৭৭ সালে সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন। ২৫ বছর এ সংগঠনের সম্পাদক ছিলেন। ১৮৮০’র দশকে ভারতীয় মুসলমানদের জাগরণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৮৯০ সালে চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট থেকে কলকাতা হাইকোর্টের জজ পদে উন্নীত হন। এ সময় তিনি শিক্ষক, বিচারক, ইতিহাস লেখক ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পান। ১৯০৪, ১৯০৫ ও ১৯০৬ সালে মুসলমানদের জন্য রাজনৈতিক দলের কথা বক্তৃতায় ও লেখনিতে প্রচার করেন। তিনি ছিলেন মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। লন্ডনে ১৯০৮ সালে মুসলিম লীগের শাখা প্রতিষ্ঠা করে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯০৯ সালে প্রথম ভারতীয় ও মুসলিম হিসেবে জুডিশিয়াল কমিটি অব দ্য প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য হন। মুসলিম প্রিভি কাউন্সিলরের এ রেকর্ড ভঙ্গ হয় ২০০৯ সালে। এ বছর সাদিক খান প্রিভি কাউন্সিলের সদস্যপদ পান। ১৯১০ সালে লন্ডনে প্রথম মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। মাত্র বারো বছর বয়সে ঐতিহাসিক গিবনের বিখ্যাত ‘ডিক্লাইন অ্যান্ড ফল অব দ্য রোমান অ্যাম্পায়ার’ বইটি পড়ে শেষ করেন। এতে বুঝা যায় তিনি কতটা ধীশক্তির অধিকারী ছিলেন। ২৪ বছর বয়সে তার প্রথম বই ‘আ ক্রিটিকাল এক্সমিনেশন অব দ্য লাইফ অ্যান্ড টিচিংস অব মুহাম্মদ’ (১৮৭৩) প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি ইংরেজি সংবাদপত্রে প্রচুর সম্পাদকীয় ও প্রবন্ধ লিখেছেন। তার ইতিহাস সৃষ্টিকারী বই হলো- ‘দ্য স্পিরিট অব ইসলাম’ ও ‘আ শর্ট হিস্টোরি অব দি সারাসিনস’। বই দুটি বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে- ‘এথিক্স অব ইসলাম’, ‘ইসলাম’, ‘মোহামেডান ল’, ‘দ্য পার্সোনাল ল অব দ্য মোহামেডান’, ‘দ্য লিগ্যাল পজিশন অব উইমেন ইন ইসলাম’, ‘সিভিল প্রসিডিওর ইন ব্রিটিশ ইন্ডিয়া’, ‘আ কমেন্ট্রারি অন দ্য বেঙ্গল টেনান্সি অ্যাক্ট’ এবং ‘দ্য ল অব এভিডেন্স অ্যাপলিকেবল অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়া’।
১৮৮৭ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে সিআইই উপাধি প্রদান করে। ১৮৮৪ সালে লন্ডনে ইসাবেল ইভা কনস্ট্যামকে বিয়ে করেন এবং ১৯০৪ সালে ইংল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য চলে যান। এ দম্পতির দুই ছেলে। ১৯২৮ সালের ৩ আগস্ট তিনি ইংল্যান্ডে মৃত্যুবরণ করেন। সূত্র : ইন্টারনেট