সে ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’ ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলে দিল

148

এক.
ফেব্রূয়ারি ২৮ তারিখ, ওটা বৃষ্টির রাত ছিল, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সাথে ঠান্ডা বাতাস। আমার দীর্ঘ জীবনে এই প্রথম আমি ভীষণভাবে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। এই রাতে বিজয় টিভির নিজাম আমাকে ফোন করে। আমি তখন লিখতে বসেছি। কাগজ কলম নাড়াচাড়া করছি- লেখা আসছেনা। এক লোক ফোন করে বলে, আমি আপনার পাঠক। আপনি ভাল লিখেন। আমরা পড়ি। আমার বাসার সামনে রাস্তায় পানি জমে। জলাবদ্ধতা হয়। একথা আপনার কলামে লিখেন। লিখবেন কি? নিজাম আমাকে বলে, আগামীকাল সন্ধ্যায় বিজয় টিভির স্টুডিওতে আসতে পারবেন? টক শো তে বসতে হবে। কিছুক্ষণ কথা বলতে হবে। আমি অন্যমনষ্ক হয়ে পড়ি। সে বলে, আপনাকে আরো আগে ডাকা আমাদের উচিৎ ছিল। আমি তাকে বলি, কেন ডাকা উচিৎ ছিল? আমি ভাল লিখি সে জন্য? হায়, প্রিয় পাঠক, আমি এত ভাল লেখক যে, মানুষ আমাকে ফোন করে এবং তাদের বাসার সামনে পানি যাতে না জমে সে বিষয়ে লিখতে বলে।
এটা কাকতালীয় ব্যাপার বলে আমার মনে হচ্ছে। তার এক ঘণ্টা পর কামাল ফোন করে। সে বলে, স্যার বাংলা টিভির অনুষ্ঠান দেখেন? আমি কিছু বলিনা। বলে, আজ রাত একটার অনুষ্ঠান দেখবেন। আপনার আর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিম উদ্দিন শ্যামলের সাক্ষাৎকার আছে। বিটিভির উপস্থাপকরা আমাকে ডাকে। তাদের মধ্যে এ এফ এম মোদাচ্ছের আলী, কামরুল হাসান বাদল বেশি ডাকে।
পেনশনের সঞ্চয় পত্রের কুপন ক্যাশ করতে প্রতি মাসে একবার সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখায় যাই। ওই ব্যাংকে আমার ছাত্ররা আছে, গিয়াস, আবদুল্লাহর মতো ব্রাইট অফিসারগণ আছেন। তারা আমাকে সাহায্য করেন। সঞ্চয় ব্যুরোর অফিস কক্ষটি ছোট। ক্লায়েন্ট অনেক বেশি। খুব ভীড় হয়। গাদাগাদি অবস্থা। কুপন ক্যাশ করতে সময় লাগে। অফিসার সীমিত। তারা আমাদের উপর ত্যাক্ত বিরক্ত হন। এটা তাদের দোষ না। আমি তাদের স্থানে হলে, আমি ও বিরক্ত হতাম। কোন কোন যায়গায় ধমক খেলেও ভাল লাগে। ধৈর্য্য ধরে বসে থাকি। কিছু টাকা তো পাই। আমার তো “তেরজুরি” নাই। ওটাই মেইন আয়। বয়স্ক লোক চাকুরী করলে কত আর বেতন দেবে? চাকুরীটা ভাই অর্নামেন্টাল। সেদিন সোনালী ব্যাংকে সঞ্চয় ব্যুরোর অফিসে গেলাম। ভীড় ঠেলে ভেতরে ঢুকি। সঞ্চয় ব্যুরোর অফিসার চেয়ার এগিয়ে দেয়। বলে, স্যার, চেয়ারে বসেন। এত ভীড়ের মধ্যে চেয়ারে বসব? উনি বল্লেন, স্যারকে চেনেন? ইনি সরকারী হাজী মহসিন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। গত রাতে স্যারকে টিভিতে দেখেছি। টক্ শোতে স্যারের বক্তব্য ওয়ান্ডার ফুল হয়েছে। তখন আমি বুঝলাম, টিভি চ্যানেলে কাউকে দেখালে- সে পাদ প্রদীপের সামনে চলে আসে। ওই টিভি চ্যানেলের টকশো আমি দেখিনি। তখন টিভি আমার স্ত্রীর দখলে ছিল। তারা সারাক্ষণ জি বাংলা দেখে।
দুই.
আমি অন্যমনষ্ক হয়ে পড়ি। পুরোনো কথা মনে পড়ে। তখন এত টিভি চ্যানেল ছিলনা। কাউকে টিভি চ্যানেলে দেখালে আমরা তাকে হিরো ভাবতাম। একদিন বাসা থেকে বের হয়ে রিকসা নিই। যাব মহসিন কলেজে। তখন টাকা পয়সা কম ছিল, বাসে ও রিকসায় চড়তাম। কদমতলী রেলক্রসিং-এ এসে দেখলাম রেল লাইনের পাশে অনেক লোক। হৈ চৈ চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, ট্রেন এক দিকে কাত হয়ে পড়ে আছে। ইঞ্জিন ও কয়েকটা বগি লাইন থেকে দূরে গিয়ে পড়েছে। দুমড়েমুচড়ে গেছে। বাস বিধ্বস্ত হয়েছে। এক অংশ বাম দিকে ছিটকে পড়েছে। চেসিস থেকে বডি আলাদা হয়ে গেছে। দূর থেকে ট্রেন বাস সংঘর্ষ দেখেছি। আমি সংঘর্ষের শব্দ শুনেছি। চোখের সামনে বাসের বাম্পার উপরে উঠে যেতে দেখেছি। রিকসা থেকে নেমে যাই। সামনের আয়না ভেঙে চালকের মাথায় লেগেছে। তার মাথার মগজ বের হয়ে গেছে। যায়গায় যায়গায় রক্ত লেগে আছে। মানুষের হাত পা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে আছে। আমি চোখ বন্ধ করি। দুদিনের দুনিয়া। এক লোক লাঠি হাতে বকবক করতে করতে আমার দিকে আসছে। এ আবার কে? আমার মুখের দিকে লাঠি এগিয়ে দেয়। বলে, আপনি ঘটনার কি দেখেছেন? ওমা? দিনের বেলায় আলো জ্বেলে আমার চোখ ঝলসে দেয়। হ্যাঁ, সে রিপোর্টার, তার হাতে ওটা মাইক্রোফোন। তার পেছনে হাতে বিশাল ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ক্যামেরা ম্যান। সে বলে, আপনি ঘটনা চোখে দেখেছেন? কিভাবে এসব হল? আমি কাশি দিয়া গলা পরিষ্কার করি। তখন আমার মাথা ভর্তি চুল, পকেটে চিরুনী। চিরুনী বের করি। রুমাল দিয়া মুখ মুছি। বলি, বাসের চালক রং সাইড দিয়া রেল লাইন পার হবে, উল্টা দিকে বাস ঢুকাইয়া দিছিল। সে হুঁশে ছিলনা। মাদক নিতেও পারে। ট্রেন বার বার হর্ন দিচ্ছিল। কিন্তু সে রেল লাইন পার হবেই। গেট পড়ে গেছে তার ভ্রক্ষেপ নাই। রিপোর্টার আমার মুখ থেকে মাইক্রোফোন নিয়া নিল। সে বলতে লাগল, শান্তা, শান্তা- আমাকে শুনতে পাচ্ছেন? আপনি শুনছিলেন শান্তা- একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলছিলেন, কিভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল। কি ভয়ংকর অবস্থাতো দেখতেই পাচ্ছেন।
আমার রিকসা চলে গেছে। ভীড়ের মধ্যে তাকে দেখতে পাচ্ছিনা। সে বলছিল, মানুষের রক্ত দেখে তার মাথা ঘুরছে। তাকে কিছু টাকা নামার সময় দিয়েছিলাম। আমি কলেজে না গিয়া আজাদী অফিসের দিকে যাই। তখন আজাদীতে আমাদের উঠাবসা। টি স্টলে দাঁড়িয়ে এক কাপ লেবু চা খাই। একটা ক্যাপস্টান কিনি, যদিও আমি সিগারেট খাইনা। রনজিতের সাথে দেখা। সে কি কাজে এসেছে। সে ভীষন খুশী। দারোয়ান ছুটে আসে। ছার? ছার? ওই দোকানের দিকে তাকান। ওই টিভি আছেনা? ওই টিভিতে আপনারে দেখছি। আমি দেখছি ছার। এই জামা দেখি? হ-এই জামা ও দেখছি। ছার, সুন্দর লাগছে। রনজিত বলে, টিভিতে দেখছি, আপনি কি সুন্দর করে কথা বলছেন। নাটকের নায়কের মতো। দোকান থেকে পোলা পান দৌড়াইয়া আসে। বলে, ইনি না? ইনিই তো এতক্ষণ টিভিতে কথা বলছিলেন। দারুণ বলেছেন।
তিন.
আমি পত্রিকায় কলাম লিখি। আমার লেখা একটা উপন্যাস ও একটা গল্পগ্রন্থ আছে, ৬টির মতো প্রবন্ধের বই আছে, আপনারা জানেন- তবুও আমি লেখক হিসেবে পরিচিত হতে পারিনি। এখন আমি বই লিখিনা। তিনটা উপন্যাস পড়ে আছে পাবলিশ করছিনা। কোকিল প্রকাশনী (ছদ্মনাম) নামের একটা প্রকাশনী সংস্থার সাথে কথা বলেছিলাম। উনি বল্লেন, উপন্যাস চলেনা। আপনি শিশুদের জন্য লিখুন। শিশু সাহিত্যিকের কিছু কদর আছে। প্রকাশককে বলি, আমার একটা উপন্যাস ছাপেন। উনি বল্লেন, পান্ডুলিপি কমাইয়া ছয় ফর্মার মধ্যে আনতে পারেন কিনা দেখেন। আমার প্রকাশনা সংস্থা বইয়ের মান ঠিক রাখতে চায়। বাইন্ডিং ভাল। আমরা ভাল কাগজ দিই। আপনি কিছু খরচ দিলে আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি। ১০০০ কপির জন্য ৮০ হাজার টাকা আমি দিব, সেরকম কথা হলো প্রকাশকের সাথে। সেখানে ৪০/৪২ বছর বয়সী এক লোকের দেখা পাই- সে বল্ল সে নাকি মুদির দোকানের মালিক। সে আমার ফোন নং নেয়। কোকিল প্রকাশনীর (ছদ্মনাম) স্বত্বাধিকারী আমাকে বিদায় দিতে চাচ্ছে, তার সাথে কথা বলতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কি আর করা, আমি চলে আসি। আমাকে ৮০ হাজার টাকা যোগাড় করতে হবে।
চার.
রেল দুর্ঘটনার সময় আমার লাইভ সাক্ষাৎকার টিভিতে দেখে আমার আত্মীয়রা ফোন করতে থাকে। আমার এক চাচি আমার মুখে হাত বুলাতে বুলাতে বলে, তোরে টিভিতে দেখাইয়ে। আমার ছেলে মেয়েরা আনন্দিত। আমার ভেতরে হিরো হিরো ভাব। ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখি, ক্যামেরা ও মাইক্রোফোনের সামনে আমি। টেলিভিশনে যদি প্রতিদিন আমাকে দেখাত? প্রচারের আগ্রহ কোকেনের মতো। আমাকে প্রচার- আসক্তিতে পেয়ে বসেছে।
পাঁচ.
ভোরবেলায় এক অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে। স্যার আছেন? আমি বলি, আছি। সে বলে, আমার নাম, আশ্রাফ আলী। আমি মুদির দোকানদার কাম হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। বুঝতে পারি, এই লোকের সাথে কোকিল প্রকাশনীর অফিসে পরিচয় হয়েছিল। সে বল্ল, আপনার বাসায় আসব? আহ্, এই সকালে? তবুও কি মনে করে তাকে বলি, আচ্ছা আস।
আশ্রাফ আলী বলল, প্রচারের আসক্তি কোকেনের আসক্তির মতো। আমি টেলিভিশনে পারফর্ম করতে চাই। কিন্তু কোন সুযোগ পাচ্ছিনা। টিভি সাংবাদিকরা যখন শোনে আমি মুদির দোকান করি, আমাকে দূরে সরিয়ে দেয়। তাই ঠিক করছি, আমি একটা বই লিখব। বই লিখে ও ফেলেছি। খুঁজে খুঁজে কোকিল প্রকাশনীর সন্ধান পাইছি। আমি বলি, আশ্রাফ তোমার বইয়ের নাম কি? আশ্রাফ গলা খাকারি দিল। সুর নরম করে বল্ল, গল্প নয়, উপন্যাস নয়, কবিতা নয়, প্রবন্ধ নয়, কাব্যগ্রন্থ নয়- আমি লিখেছি মৌলিক জ্ঞানের বই “সবার উপরে মানুষ সত্য।” বইটি একদিনে লেখা। ঘুনেধরা সমাজকে পথে আনার জন্য আমার বই- “সবার উপরে মানুষ সত্য।”
আশ্রাফ বলল, আমি আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে সেরা নির্যাস তুলে এনেছি। বলেছি, কি ভাবে মানুষ হওয়া যায়। কিভাবে ছাত্ররা পড়াশোনায় মনযোগ দেবে। সংসার জীবন আপনি কি ভাবে কাটাবেন। রাজনীতিবিদরা কি ভাবে রাজনীতি করবেন। কিভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। কি করে সফল হবেন। কি ভাবে ঘুষখোর অফিসারকে ঘুষ না দিয়া ফাইল পাস করাবেন, কিভাবে রেলের টিকেট করবেন, কি ভাবে সিনেমার টিকেট করবেন। প্রেমে ছ্যাকা খেলে কি ভাবে মনোবেদনা কাঠিয়ে উঠবেন। আশ্রাফের বক্তৃতা শুনে কোকিল প্রকাশনের মালিক বল্ল- ওহ। তারপর তিনি চশমা খুলে কাঁচ মুছতে মুছতে বল্লেন, বইটা সেরা হয়েছে। কিন্তু দাদা দেরী হয়ে গেছে। এখন বই ছাপতে অনেক খরচ পড়বে। খরচ পাতি যদি দেন। ১০০০ কপি “সবার উপরে মানুষ সত্য” ছাপতে প্রকাশক ১ লক্ষ টাকা চেয়েছে। আশ্রাফ একথা আমাকে বলার সময় ফোঁফাতে লাগল। আমি টিস্যু দিয়ে তার চোখের পানি মুছে দিলাম। আমার এক ছাত্রের প্রেস আছে সে মুদির দোকানের রশীদ বই ছাপে। তাকে বল্লাম, তোমাকে “সবার উপরে মানুষ সত্য” ছেপে দিতে হবে। সে কাটছাট করে ২০০ কপি “সবার উপরে মানুষ সত্য” ছাপাতে রাজি হলো। আশ্রাফ তাকে ৫ হাজার টাকা পে করল।
আশ্রাফ বই মেলায় তার বই নিয়ে গেছে। মেলায় অনেক মানুষ। আশ্রাফ মানুষকে বলে, আমার একটা বই কিনুন। ইয়াংদের বলে, দেখুন ভাই? কারো আগ্রহ নাই ভালো বই এর প্রতি। স্টলে প্রেমের গল্প বিক্রি হচ্ছে। এ যুগের ছেলেমেয়ে দেখতেছে একজন পোড় খাওয়া মানুষ বই বেচতে এসেছে- কারো শ্রদ্ধাবোধ নাই। আখেরী জামানা এসে গেছে।
আশ্রাফ ঠিক করে রিপোর্টারদের কাছে যাবে। একটা টিভি ইন্টারভূ দিতে পারলেও জীবন সার্থক। বই এর মর্ম দেশবাসীকে জানাতে পারলেও হয়। এক সাংবাদিককে আশ্রাফ বলে, আমার বইটা দেখুন, এটা বইমেলার সেরা বই। ওরা প্রশ্ন করে কোন্ প্রকাশনী? আশ্রাফ বলে, সেলফ পাবলিকেশন। বইটা একবার টিভিতে দেখায়ে দেন ভাই। কেউ এগিয়ে আসেনা। এক মেয়ে সাংবাদিক তার বিলাইয়ের মতে চোখ আশ্রাফের দিকে তাক্ করে বল্ল, কি নিয়ে লেখা এ বই? আশ্রাফ বলতে শুরু করল, এটা গল্প কবিতা উপন্যাস নয়, এটা মৌলিক জ্ঞানের গ্রন্থ। সাংবাদিক মেয়েটা হাঁটা দিল। আশ্রাফ তার পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করল। বল্ল, আমি কোন্ দিন আসব ইন্টারভূ দিতে? মেয়েটা জবাব দিলনা। আশ্রাফ তাকে একটা বই উপহার দিয়েছিল। সে খবর নিল মেয়েটির নাম প্রিয়া। প্রিয়া হাঁটতে হাঁটতে একটা স্টলের সামনে গিয়ে থামল। বইটা খুলল। দেখল। দোকানের রশিদ ছাপার প্রেসের মফিজ বইটিরে সুন্দর একটা কাভার করে দিয়েছিল। মেয়েটি বইটা ছুড়ে পাশের ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলে দিল। আশ্রাফ হাল ছাড়েনি। সে আরেক রিপোর্টর মেয়ের পেছনে দৌড়াতে শুরু করে। আশ্রাফ এখনো দৌড়াচ্ছে।

লেখক : সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
ঊ-সধরষ: ভধুষঁষযড়য়ঁবথ৭@ুধযড়ড়.পড়স