‘সেফ জোন’ সম্ভব নয় : মিয়ানমার

33

রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ‘সেইফ জোন’ বা নিরাপদ অঞ্চল গঠনের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে মিয়ানমার বলেছে, দুই বছর আগে সম্পাদিত দ্বিপক্ষীয় প্রত্যাবাসন চুক্তির বাইরে গিয়ে কিছু করার নেই। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের পঞ্চম দিনের বিতর্কে নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় শনিবার রাতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর কার্যালয়ের মন্ত্রী কোয়ে তিন্ত সোয়ে একথা বলেন। তবে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগের মুখে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য ‘আরও উপযোগী পরিবেশ’ তৈরিতে মিয়ানমার এখন অগ্রাধিকার দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন দেশটির জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশ, জাতিসংঘ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির জোটে আসিয়ানের মধ্য সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২০১৭ সালের আগস্টে সেনা অভিযানের পর প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে। ওই বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যাবাসন হবে জানিয়ে কোয়ে তিন্ত সোয়ে বলেন, ‘মিয়ানমারের ভেতরে ‘সেইফ জোন’ বা নিরাপদ অঞ্চল তৈরির চাপ রয়েছে। কিন্তু এটি নিশ্চিত করা যাবে না, বাস্তবসম্মতও নয়’। বাংলাদেশকে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বিশ্বস্ততার সঙ্গে বাস্তবায়নের আহব্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এটাই বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের সমস্যা সমাধানের একমাত্র সম্ভাব্য উপায়। খবর বিডিনিউজের
এর আগে এই অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাখাইনে সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও চলাফেরার স্বাধীনতাসহ সামগ্রিক অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে রাজি নয়। বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা এসেছেন ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে নতুন করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন শুরু হওয়ার পর। জাতিসংঘ ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযান হিসেবে বর্ণনা করে আসছে।
যাচাই-বাছাই করে মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের ৩ হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গার তালিকা চূড়ান্ত করলেও দেশটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে ব্যর্থ হওয়ায় দু’দফা চেষ্টার পরও তাদের কাউকে ভিটেমাটিতে ফেরত পাঠানো যায়নি।
রোহিঙ্গা সঙ্কট বড় আকার ধারণ করার পর ২০১৭ সালে জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে এ সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন, যার মধ্যে রাখাইন রাজ্যে আলাদা ‘বেসামরিক পর্যবেক্ষক সেইফ জোন’ প্রতিষ্ঠাসহ কফি আনান কমিশনের সুপারিশগুলোর সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের কথা ছিল। তবে এবারের অধিবেশনে রোহিঙ্গাদের স্ব-ভূমে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে যে চারটি প্রস্তাব দিয়েছেন, তাতে সেইফ জোনের কথা নেই। তবে সেখানে ‘রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ও সুরক্ষার নিশ্চয়তায় আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় থেকে বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের’ কথা বলা হয়েছে।
তিন্ত সোয়ে বলেন, এখন মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের জন্য আরও অনুকূল পরিবেশ তৈরিকে অগ্রাধিকার দেবে। রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত এসব বাস্তুচ্যুতদের ‘পৃথক আইনি মর্যাদা’ আছে। তালিকাভুক্ত এসব প্রত্যাবর্তনকারীদের মধ্যে যারা নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য তাদের ‘নাগরিকত্ব কার্ড’ দেওয়া। বাকিদের দেওয়া হবে ‘ন্যাশনাল ভেরিকেশন কার্ড’ (এনভিসি), যাকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের জন্য দেওয়া ‘গ্রিন কার্ড’ এর সঙ্গে তুলনা করেন এই কর্মকর্তা।
সোয়ে দাবি করেন, বর্তমান মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে, যখন চরমপন্থী গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরএসএ) সশস্ত্র হামলা চালায়। তার আগে রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে সরকার সচেষ্ট ছিল।