সেপ্টেম্বরের মধ্যে তৃণমূলে নতুন কমিটি করতে হবে

41

আসছে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগের সকল জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন করে সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ঈদ উল ফিতরের পরেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রতি জেলায় সাংগঠনিক টিমের সদস্যদের অর্ন্তভুক্ত করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রামের সাত জেলা ইউনিট নিয়ে আয়োজিত বিশেষ বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা এসব সিদ্ধান্তের কথা তৃণমূলের নেতাদের জানিয়ে দেন।
গতকাল শনিবার কাজীর দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল মতিন খসরু এমপি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের মূল্যায়নের পাশাপাশি নতুন নেতাদের রিক্রুট করতে হবে। আওয়ামী লীগে গুন্ডাপান্ডা ও সন্ত্রাসীর প্রয়োজন নেই। দলের কমিটিতে সমাজের ভালো মানুষদের আনতে হবে। তবেই আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হবে। আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে কাজ করছি। জেলা পর্যায়েও যাবো। আমাদের অনেক নেতা, সবাই পদ চায়। পদ পাওয়ার পর কাজে আসবে না এমন নেতাদের বাদ দিতে হবে।
সভপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, ১০, ১২, ১৪ বছর ধরে চলা কোনো কমিটি থাকতে পারবে না। আপনারা প্রস্তুতি নেন। ঈদের পর প্রত্যেক জেলায় কাজ শুরু করবো। উপজেলার সভাপতি-সম্পাদকের বক্তব্য নিতে পারলে ভালো হতো। জেলায় তাদের কথা শুনবো।
এমপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের অনেকের সাথে কমিটির সভাপতি-সম্পাদকদের দূরত্ব আছে। এটা কাটিয়ে তুলতে হবে। কারণ তৃণমূলই দলের প্রাণ। যত দূরত্ব কমিয়ে আনবেন তত মঙ্গল হবে। আপনাদের অনেক বরাদ্দ আছে। যেসব উন্নয়ন করবেন সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করবেন।
উপজেলা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার বিষয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী পক্ষ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। নির্বাচন যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় সেজন্য আমরা কিছুটা শীতিলতা দেখিয়েছি। তাই বলে দলের কেউ নৌকার বিরুদ্ধে যাবে সেটা অন্যায়। এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলায় দ্বন্দ্ব নিরসন করতে হবে। এমন কিছু উপজেলা আছে, কাউন্সিল হয়েছে কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সকল স্তরের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন শেষ করতে হবে।
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগে তৃণমূলের নেতারাই প্রাণ। তৃণমূলের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ আজ ক্ষমতায়। আমরা পরপর তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার কারণে দলে অনেক সুবিধাবাদী ও অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। ধীরে ধীরে তাদেরকে বের করে দিতে কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। বিনয় মানুষকে মহান হতে সাহায্য করে। আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে যেন ঔদ্ধত্য না থাকে সেজন্য বার্তা দিতে হবে। অনেক উন্নয়ন করেই যদি ঔদ্ধত্যমূলক আচরণ করি তাহলে সে উন্নয়ন জনপ্রিয়তা পাবে না। সে নেতাদের সাথে তৃণমূলের নেতাদের সুসম্পর্ক থাকে না। এমন আচরণ যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, অমুক ভাইয়ের কর্মী, তমুক ভাই এগিয়ে চল এমন রাজনীতি হলে সংগঠন এগিয়ে যেতে পারবে না। আদর্শের রাজনীতি করতে হবে। যারা নৌকা নিয়ে জয়ী হয়ে কয়দিন পর নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তাদের বিষয়ে দল সতর্ক আছে। সঠিক সময়ে দল সিদ্ধান্ত নিবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপ-পানি সম্পদ মন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা একেকটি জেলায় সফর করবেন। সেখানে অবস্থান করে নেতাদের সাথে কথা বলে সম্মেলনের সিদ্ধান্ত দিবেন। দ্রæত সময়ের মধ্যে টিমের সদস্যরা জেলা সফরে যাবেন। সেখান গিয়ে প্রয়োজন মত সিদ্ধান্ত দিয়ে আসবেন। এমপি-মন্ত্রীদের মনে রাখতে হবে, তৃণমূল নেতাদের জন্য আমরা এমপি-মন্ত্রী। তৃণমূলের নেতারা এমপি-মন্ত্রীদের কর্মীয় নয়। এরা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার কর্মী। তাদের দিকে সুদৃষ্টি দিতে হবে। আবার তৃণমূলের কর্মীদেরও মনে রাখতে হবে, কারণে-অকারণে এমপি-মন্ত্রীদের সমালোচনা করা যাবে না।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপ-শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, যেখানে সম্মেলনের প্রয়োজন আছে সেখানে সম্মেলনের তারিখ দিতে হবে। ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে সংগঠন করা যাবে না। গঠনতন্ত্রের ২৬ (গ) ধারায় উপদেষ্টাদের সম্পৃক্ত করতে বলা হয়েছে। সিনিয়র নেতাদের উপদেষ্টা হিসেবে সম্মান দিতে হবে। জেলায় ২১ জন, উপজেলায় ১৫ জন, ওয়ার্ড-ইউনিয়নে ১১ জনকে উপদেষ্টা করার বিধান আছে। কেন আমরা ভাই ভিত্তিক, গ্রæপ ভিত্তিক আলোচনা করবো। আদর্শিক ভিত্তি থাকতে হবে। দল ও সরকারের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।
আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রী বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া বলেন, দলীয় নেতাদের ডাটাবেজ তৈরির কাজ হাতে নিয়েছি। কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড নেতাদের নাম, মোবাইল, ইমেইল এড্রেস আমরা চেয়েছি। প্রতিটি উপজেলায় স্থায়ী দলীয় কার্যালয় থাকবে। এগুলোর তথ্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ চেয়েছে।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, অনেকেই সংগঠনের পদ ধারণ করেন কিন্তু সভায় উপস্থিত থাকেন না। গঠনতন্ত্র মানেন না। অথচ পদ ব্যবহার করে সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। অনেকেই চট্টগ্রাম শহরে থাকেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে থাকেন, কিন্তু সংগঠনের সভায় আসেন না। নিজেকে সংগঠনের উর্ধ্বে মনে করেন তারা। তারা মনে করেন, ঢাকায় ভালো যোগাযোগ আছে, এখানে সংগঠন দরকার নাই। আমি অমুক, আমি তমুক ধারণা বাদ দিতে হবে। যারা সংগঠনে আছেন, কাজে নেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নেতাদের ছবি দিয়ে সন্ত্রাসীরা পোস্টার ছাপাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা নির্বাচনে জয়ী হয়েছি। কিন্তু কৃতিত্বের দাবিদার হচ্ছে প্রশাসন। অনেককেই আমাদের এমপি বানাতে হয়েছে। এমপিরা কতটুকু দায়িত্ব পালন করছেন? সংগঠনকে শক্তিশালী না করলে এ সংগঠন টিকিয়ে রাখাও কঠিন হবে। সকল সিদ্ধান্ত, সহযোগিতার ব্যাপারে এমপিদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আগামীতে এমপিদের সভাপতি-সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হবে না। অনেকেই বড় বড় কথা বলেন। নিজে নিজে গজিয়ে ওঠা সংগঠনে অনেকেই অতিথি হন। এসব বাদ দিতে হবে নেতাদের।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, প্রত্যেক থানায় নিজস্ব কার্যালয় করা গেলেই সংগঠন শক্তিশালী হবে। আমর এলাকায় ১৪ ইউনিয়ন, এক পৌরসভা ও উপজেলা মিলিয়ে ১৬টি কার্যালয় করা হয়েছে কিংবা কাজ চলমান আছে। বিভিন্ন থানায় কার্যালয় করতে চাইলে আমার ব্যক্তিগত অনুদান থাকবে। চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও নগর মিলে একই জায়গায় আওয়ামী লীগের জন্য কার্যালয় করতে পারলে ভালো হয়।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, সাংসদ এমএ লতিফ, জাফর আলম, ওয়াসিকা আয়েশা খান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, বান্দরবান আওয়ামী লীগ সভাপতি কৈ শৈ হ্লা মারমা, খাগড়াছড়ি আওয়ামী লীগ সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, রাঙামাটি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান প্রমুখ।