সেন্টমার্টিন জলসীমায় বয়া না থাকায় ঝুঁকিতে জেলেরা

46

প্রাকৃতিক দুর্যোগে দ্রুত ফিরতে সমস্যা হয়। এছাড়া প্রায়ই ভুল করে মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকে পড়েন

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার জলসীমা চিহ্নিতকরণে কোনো বয়া নেই। এ কারণে সেন্টমার্টিনসহ ওই অঞ্চলে অবস্থানরত জেলেরা প্রায়ই ভুল করে মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকে পড়েন। তখন তাদের ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও নৌবাহিনী। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দ্রæত পথ চিনে ফিরে আসতেও তাদের সমস্যা হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে নানা আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেলেরা। তারা অনতিবিলম্বে জলসীমা চিহ্নিতকরণে বয়া স্থাপনের দাবি জানান।
দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। এই দ্বীপের স্থায়ী বাসিন্দাদের বেশিরভাগ মানুষ যুগ যুগ ধরে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সীমানা চিহ্নিতকরণে বয়া থাকা জরুরি হলেও তা সেন্টমার্টিন এলাকায় নেই। এ কারণে স¤প্রতি ইঞ্জিন বিকল হয়ে মিয়ানমার জলসীমায় ঢুকে পড়ে বাংলাদেশি একটি মাছধরার ট্রলার। মিয়ানমান নৌবাহিনী ওই ট্রালারের ১৭ বাংলাদেশি জেলেকে আটক করে। পরে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মাধ্যমে এসব জেলেদের ফেরত পাঠায় মিয়ানমার। তবে আটক অনেক জেলে এখনও মিয়ানমারের কারাগারে বন্দি আছেন। জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একদিকে বৈরী আবহাওয়া, অন্যদিকে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ধাওয়ার ভয় মাথায় রেখেই কাজ করতে হচ্ছে জেলেদের। সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা মো. আবু বক্কর। তার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায় সাগরে মাছ শিকার। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে সেন্টমার্টিন এলাকায় সাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে মাছ শিকার করে আসছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরতে ধরতে অনেক সময় আমরা পথ হারিয়ে ফেলি। গভীর সাগরে কোনো কোনো সময় মিয়ানমারের জলসীমায় চলে যাই। অনেক সময় তাদের নৌবাহিনীর ধাওয়া খেতে হয়। আমরা ভয়ে ভয়ে থাকি। জলসীমায় কোনো আধুনিক বয়া না থাকায় আমাদের করণীয় কিছু থাকে না’।
সাগরা পাড়ে ছেঁড়া জাল ঠিক করছিলেন আবুল কালাম। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার জলসীমানায় সাগরের অথৈ পানিতে কোনো ধরনের চিহ্নিতকরণ বয়া নেই। এ কারণে আমাদের অনেক জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও নৌ-বাহিনী। এদের অনেককে বাংলাদেশ সরকার ফিরিয়ে আনলেও অনেকেই মিয়ানমারের কারাগারে বন্দি আছেন’।
আরেক জেলে আলী আকবর মহাজন বলেন, ‘অনেক সময় বৈরী আবহাওয়া জেলেদের ভাসিয়ে নিয়ে যায় মিয়ানমারের জলসীমায়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বাতাসের গতিতে পথ ভুলে মিয়ানমারের জলসীমায় চলে যায়। অপরদিকে, মিয়ানমারের অনেক জেলে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করছে। এতে করে আমাদের মৎস্য সম্পদ লুট হচ্ছে’। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে অনেক জেলেকে নানা অজুহাতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী ধরে নিয়ে গেছে দাবি করে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর আহমদ বলেন, ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেলেরা রয়েছে নানা সমস্যায়। বাংলাদেশ-মিয়ানমার জলসীমানায় চিহ্নিতকরণ বয়া না থাকায় প্রতিনিয়ত সমস্যা ও আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। বিষয়টি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। তাই দ্রুত জলসীমানা চিহ্নিতকরণ বয়া স্থাপন করার জন্য সরকারের প্রতি আহব্বান জানাচ্ছি’।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পূর্ব জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন এম ওয়াসিম মকছুদ বলেন, ‘সাগরে যেসব জেলেরা মাছ শিকার করেন, তাদের অধিকাংশ জানেন না কোনটি কোন দেশের জলসীমা। মাছ ধরতে ধরতে এক সময় ভুলেই চলে যান অন্য দেশের জলসীমায়। এই সমস্যা শুধু আমাদের দেশে নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর জেলেদের মধ্যেও রয়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ জলসীমায় এখনও আধুনিক বাতি বয়া স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তাই, জেলেদের নিজ থেকেই সচেতন হতে হবে’।
জেলে বেশে অনেকেই সীমান্তে মাদকসহ নানা চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে এম ওয়াসিম মকছুদ বলেন, ‘টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে অবস্থানরত বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সদস্যরা বেশ কিছু অভিযান চালিয়ে এ ধরনের অনেক জেলেকে মাদকসহ আটক করেছেন। বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে ইয়াবাসহ বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশের সময় বড় বড় চালান কোস্ট গার্ড সদস্যরা জব্দ করতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়া সার্বিক নিরাপত্তাসহ জেলেদের জীবন মানের উন্নয়নে কাজ করছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড’।
শুধু জেলেদের নয়, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত বড় বড় জাহাজ ও ট্রলি থেকে শুরু করে সব ধরনের নৌযানকে বয়া না থাকায় নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। একইভাবে পড়তে হচ্ছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলরত পর্যটকবাহী জাহাজগুলোকেও। তাই, দ্রুত বাংলাদেশ-মিয়ানমার জলসীমা চিহ্নিত করে বয়া স্থাপনের দাবি সেন্টমার্টিন দ্বীপে বসবাসরত জেলেদের।