সেই ভবনটি ভেঙে ফেলতে চায় সিডিএx

24

চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় গ্যাসলাইনের বিস্ফোরণ ও দেয়ালধ্বসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ দাবি করে ভেঙে ফেলতে চায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। তদন্ত কমিটির এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক) চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। তবে ভবনটি আদৌ ঝুঁকিপূর্ণ কি না, তা খতিয়ে দেখবে সিটি কর্পোরেশন। তার জন্য তদন্ত কমিটির কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ কারিগরি রিপোর্ট চাইতে পারে কর্পোরেশন। তারপর সংস্থাটি সিদ্ধান্ত নেবে ভবনটি ভাঙার প্রয়োজন আছে কি না- এমনটাই জানিয়েছেন চসিকের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী। তবে এখনও পদ্ধতিগতভাবে সিডিএ’কে কোনো পত্র দেয়নি কর্পোরেশন।
ইমারত বিধিমালা অনুসরণ করে ভবন নির্মিত হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা সিডিএ’র রুটিন দায়িত্ব। তবে কাজটিতে সংস্থাটির চরম গাফেলতির কারণে দিন দিন নগরীতে বাড়ছে ইমারত বিধিমালা না মেনে তৈরি করা ভবনের সংখ্যা। তবে ভবনে কোনো দুর্ঘটনা হলে ভবনটি বিধিমালা অনুসারে নির্মিত হয়নি দাবি করেই দায় সারে সিডিএ। তার ব্যতিক্রম ঘটেনি নগরীর পাথরঘাটায় ঘটে যাওয়া ভবনের ক্ষেত্রেও।
ইমারত বিধিমালা অমান্য করে নগরীতে কি পরিমাণ ভবন গড়ে উঠেছে তার কোনো সঠিক তথ্য নেই সিডিএ’র কাছে- এমন তথ্য স্বীকার করে সংস্থাটির প্রধান পরিকল্পনাবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম খান জানান, আমরা ভবনটিতে সরেজমিনে গিয়ে পরীক্ষা করেছি। তাতে নিশ্চিত হয়েছি ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই তা ভেঙে ফেলে জননিরাপত্তা নিশ্চিতে সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। তখন তো ভবন বিধিমালা মানার কোনো কথাই আসে না। ভবন নির্মাণে বিধিমালা প্রয়োগের বিষয়টি সিডিএ তদারকি করছে না কেন- এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে পরে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ নভেম্বর নগরীর পাথরঘাটা এলাকায় বড়ুয়া ভবনে ভয়াবহ গ্যাস লাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ৭ জন নিহত এবং অন্তত ১২ জন আহত হন। ঘটনার দিনই ‘ভবনটি ইমারত বিধিমালা অনুসরণ করে নির্মাণ করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছিলেন সিডিএ’র প্রধান পরিকল্পনাবিদ। ওইসময় ভবনের বাসযোগ্যতা নির্ণয়ে সিডিএ পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির তদন্ত শেষে সিদ্ধান্ত নেয় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ, তাই ভেঙে ফেলে জননিরাপত্তা নিশ্চিতে সুপারিশ করে কমিটি। গত ২৪ নভেম্বর চসিকের প্রধান নির্বাহীর কাছে কমিটির আহব্বায়ক প্রধান পরিকল্পনাবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম খান পত্র পাঠান। সেখানে বলা হয়, পাথরঘাটায় সংঘটিত ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ক্ষয়ক্ষতি ও বাসযোগ্য মাত্রা নির্ধারণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটি গত ২৩ নভেম্বর সরেজমিনে সাইটটি পরিদর্শন করে। এতে দেখা যায়, ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণে ভবনটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে ভবনের সামনে দক্ষিণপাশের নিচতলার ফ্ল্যাটের দুইটি কলাম ও দেয়ালসহ দরজা, জানালা বিধ্বস্ত হয়। তাই ভবনটি কাঠামোগতভাবে বিপজ্জনক হওয়ায় দ্রুত ভেঙে অপসারণ করার জন্য এবং অপসারণের পূর্বে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য তদন্ত কমিটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করে। এই অবস্থায় মিউনিসিপ্যাল অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ এর ১০৯ ধারা অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এখতিয়ার থাকায় পাথরঘাটায় বিপদজনক বড়ুয়া ভবনের অপসারণ এবং নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয় পত্রে।
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী বলেন, সিডিএ ভবন ভাঙার চিঠি দিয়ে দায় সারতে চায়। ভবনটি আদৌ ঝুঁকিপূর্ণ কি না তা খতিয়ে দেখবে সিটি কর্পোরেশন। তাই শুধু চিঠিতে নয়, তদন্ত কমিটির কারিগরি প্রতিবেদন চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে সিটি কর্পোরেশন। এই জন্য কমিটির কাছ থেকে ভবনের আরভিএস, ডিইএ ও পূর্ণাঙ্গ কারিগরি রিপোর্ট চাইবে সিটি কর্পোরেশন।
এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. সামসুদ্দোহা বলেন, সিডিএ যেহেতু নিরীক্ষা করে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। তারই প্রেক্ষিতে আমরা ভবন মালিককে ভেঙে ফেলার জন্য নোটিশ করবো। ভবন মালিক নিজ দায়িত্বে না ভাঙলে, কর্পোরেশন ভেঙে দিবে। তবে সেক্ষেত্রে ভাঙা বাবদ খরচ বহন করতে হবে ভবন মালিককে।