সুপারশপে ভেজাল পণ্য, অভিজাত রেস্টুরেন্টে পচা-বাসি খাবার

128

ভেজাল খাদ্যে সয়লাব নগরীর বাজার, হোটেল ও রেষ্টুরেন্ট। অসাধু ব্যবসায়ীরা আইনের তোয়াক্কা না করে অবাধে বিক্রি করছেন ভেজাল খাদ্য। আবার এর বিরুদ্ধে চলছে অভিযান। পাওয়া যাচ্ছে পচা-বাসি ও মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্য। এতে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত উপকরণ, ক্ষতিকর রং। এছাড়া অস্বাস্থ্যকর-নোংরা পরিবেশে রাখা হচ্ছে খাদ্যদ্রব্য। এসব কারণে করা হচ্ছে জেল-জরিমানা। তারপরও থেমে নেই অসাধু ব্যবসায়ীরা।
গতকাল নগরীর একাধিক অভিজাত ও সুপার শপে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে রয়েছে বাসমতি, জামান, আগোরা, খুলশী মার্ট ও তাবা। অভিযানকালে বাসি, মেয়াদোত্তীর্ণ এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও বিএসটিআই’র অনুমোদনহীন খাদ্য সংরক্ষণের দায়ে এসব রেস্টুরেন্টকে মোট ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।


জানা গেছে, বাসি খাবার রাখার দায়ে জিইসি মোড়ের বাসমতি ও জামান হোটেলকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল শুক্রবার চালানো অভিযানে নেতৃত্ব দেন পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তাহমিলুর রহমান ও কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলাম।
এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ মাশরুম, মাংস, ডালডা, বেসনসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ও কাপড় ধোয়ার সোডা সংরক্ষণের অভিযোগে তাবা রেস্টুরেন্ট ও খুলশী মার্টকে জরিমানা করেছেন র‌্যাব-৭ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল বিকালে তাবা রেস্টুরেন্ট ও খুলশী মার্টে অভিযান চালানো হয়। একই দিন নগরের আফমি প্লাজার আগোরা সুপার শপে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আখতারুজ্জামান।
জানা গেছে, বাসমতি হোটেলে প্রবেশ করতেই ভবনের নীচতলায় রমজান উপলক্ষে একটি জায়গায় সারি সারি ফ্রিজ-রেফ্রিজারেটর রাখা আছে। ফ্রিজ খুলতেই সেখানে বাসী খাবারের সাথে গরু-মুরগীর কাঁচা মাংস, বাটা মসলা, রান্না করা মাংস ও অন্যান্য খাবার পাওয়া য়ায়। প্রতিদিন ভোক্তাদের কাছে এসব মাংস গরম করেই পরিবেশ করা হতো। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য রাখার দায়ে বাসমতি রেস্টুরেন্টকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গতবছরও এ প্রতিষ্ঠানকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এদিকে জামান রেস্টুরেন্ট মেজবানি এন্ড কাবাব হোটেলকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি, ফ্রিজে বাসি খাবার ও কাঁচা মাংস রাখার দায়ে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তাহমিলুর রহমান বলেন, রেস্টুরেন্টের সামনে উচ্চস্বরে ঘিতে ভাজা জিলাপির কথা বলা হলেও আসলে এগুলো ডালডায় ভাজা। রেস্টুরেন্টের ফ্রিজ খুলতেই এসবের প্রমাণ মিলে। জরিমানা আদায়ের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারের কাছ থেকে মুচলেকা আদায় করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটলে হোটেলের লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর শাস্তি আরোপ করা হবে জানান তিনি।
এদিকে গতকাল বিকাল ৪টার দিকে তাবা রেস্টুরেন্ট ও খুলশী মার্টে চালানো অভিযানে উভয় প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
র‌্যাবের সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. মাশুকুর রহমান জানান, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর ৫১ ও ৫২ ধারা মোতাবেক এ দুই প্রতিষ্ঠানে সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের কাছে তথ্য আছে নগরীতে ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে জনসাধারণকে ঠকানোর উদ্দেশ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান মেয়াদোত্তীর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে এবং বিএসটিআই এর অনুমোদনহীন বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করে বিক্রয় করা হয়। এমন অভিযোগেই এ দুটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়েছে।
মাশকুর রহমান আরও জানান, ভেজাল বিরোধী নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে আগোরায় অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ দই-দুধ, পচা মাছ-মাংস বিক্রির দায়ে আগোরা মালিককে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
তিনি জানান, সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে যারা খাদ্যে ভেজাল দেয় এবং যারা ভেজাল খাদ্য বিক্রি করে- তাদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
অভিযানে র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান, সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কাজী মো. তারেক আজিজ, ভোক্তা অধিকার ও বিএসটিআই এর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।